‘এই ঘর এই সংসার’ রিভিউ
আজ শুরু করবো অনেকটা অপরিচিত মুখ “বৃষ্টি”নামের এক অভিনেত্রীকে নিয়ে। উনাকে খুব কম মানুষই চেনে, কেন না উনার একটা সিনেমা সম্পর্কেই সকলে জানে তাও ৯০ দশকের। হ্যাঁ, বলছিলাম নব্বই দশকের বেশ আলোচিত সিনেমা “এই ঘর এই সংসার” সিনেমার কথা। যে কেউ এই ফিল্মটা দেখেই বলবে ঐ সুন্দর মেয়েটাকে তাকে আর অন্য সিনেমায় কেনো দেখা গেলো না! পুরো গুগল খুঁজেও তার সম্পর্কে এক কানাকড়ি তথ্য পেলাম না। যাই হোক কেউ যদি তার সম্পর্কে কিছুটা হলেও জেনে থাকেন আমায় জানাবেন।
এখন কথা হলো যারা বাংলা সিনেমা পছন্দ করেন শুধু তারাই এই পোষ্টই পড়বেন, বাংলা সিনেমা অপছন্দ করেন এমন মানুষ প্লিজ হা হা রিএক্ট দিবেন না। মালেক আফসারীর পুরো ক্যারিয়ারের সেরা কাজ আমার মতে এই সিনেমাটি, যতোদূর জানি এটা উনার নিজের গল্প এবং পরিচালনাও তিনি করেছিলেন। সব দিক দিয়ে সিনেমাটি তাঁর সর্বেসর্বা খেতাবকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন, সে সময় অনুযায়ী সিনেমার ক্যামেরার কাজ এডিটিং এমনকি লাইটিংটাও ছিলো এক কথায় দারুণ। অবশ্যই এজন্য বর্তমান সময়ের নিভু আলোচিত পরিচালক মালেক আফসারি দুটি ক্ল্যাপ পাবেন।
আপনি যদি আবছা রোমান্স পছন্দ করেন তাহলে আপনার জন্য এই সিনেমা,নোট করে রাখেন সিনেমার প্রথমে এক ধরনেফিল পাবেন আর মাঝের দিকে আরেক ধরনেফিল পাবেন। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা একটু ড্রামাটিক ট্র্যাজেডি পছন্দ করলে অবশ্যই এটি আপনার জন্য আদর্শ সিনেমা আদর্শ হতে পারে।
অভিনয় সংক্ষেপ : আসলে এখানে যারা যারা অভিনয় করেছেন তাদের সম্পর্কে আলোচনা করতে হলেও একশবার চিন্তা করে লিখতে হবে আর সালমান শাহকে নিয়ে আলাদা করে কিছু লিখার নাই। তাই তাদের প্রতি সম্মান রেখে আমি আমার ভালো লাগাটা উল্লেখ করলাম।
নাসির খান : নেগেটিভ রোলের জন্য সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেরা তিনি এতোটাই আলোচিত ছিলেন যে তার দেওয়া কিছু ডায়লগ আজো অনেক মানুষ মজার ছলে বলে ফেলে,আপনাদের কাছ থেকে এই সিনেমায় তার দেওয়া একটা ডায়লগ শুনতে ইচ্ছুক যদি দেখে থাকেন সিনেমাটি আর না দেখলে আজই দেখুন- “নাসির খান” বাংলা সিনেমার একজন অভিনেতা যিনি খুব অনাদরেই চলে গিয়েছেন আমাদের মাঝ থেকে! আমার মনে হয় না সে তাঁর প্রাপ্যটুকু পেয়েছেন যাই হোক এটা আমাদের ব্যর্থতা আমরা তাকে সম্মানিত করতে পারি নি।এই সিনেমায় আপনি দেখতে পাবেন আসলে ভিলেন কীভাবে আপনার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠে।
খলিল : খুব ছোটবেলা থেকে প্রয়াত জনাব খলিল সাহেবের ভিলেনের চাটুকারিতা দেখেই বড় হয়েছি,জনাব হুমায়ুন ফরিদীর পরেই উনাকে আমার খুব বেশিই ভালো লাগতো। কিন্তু এই সিনেমায় খলিল সাহেবকে দেখবেন আদুরে মেয়ের আহ্লাদী বাবা হিসেবে পুরোটা সময় আপনি বেশ মজার সময় পাড় করবেন যতোক্ষণ তাকে আপনি স্ক্রিনে দেখতে পাবেন।
বৃষ্টি : সিনেমায় “জলি” চরিত্রে দেখা যাবে লাস্যময়ী এই নায়িকাকে। আমি গ্যারান্টি দিলাম তাঁর অভিনয় তাঁর লাবণ্যময়ী ভাব দেখে আপনি খেয়ে যাবেন বর্তমান সময়ের সব চাইতে সুস্বাদু খাবার “ক্রাশ” নামক স্পেশাল ডিশ- অবশ্যই তাঁর মতো একটা বউ আপনি দাবী করবেন। আর কিছু বলবো না যারা দেখেন নাই দেখে নিয়েন।
কাহিনী সংক্ষেপ : “মমতা” একজন সরকারী কর্মকর্তা কিছুদিন যাবত তার টাইপ রাইটার মেশিনের উপরে প্রেম-প্রণয়ের কথা মোড়ানো চিঠি পাচ্ছে যা তার কাছে বিরক্তিকর। একটা পর্যায় সে বিষয়টা খোলাসা হয় যে তাদেরই এক কলিগ তাকে পছন্দ করে (এর মাঝে কিছুটা মজার দৃশ্য বা ডায়লগ আছে) তো তাদের প্রণয় হয় বিয়েও হয়।”মমতার” দুই ভাইয়ের দায়িত্ব “শহিদুল্লাহ খান” মানে বুলবুল আহমেদ নেন খুব সুন্দর তাদের সংসার চলতে থাকে বড় হয়ে যায় দু-ভাই এভাবেই সংসার চলতে থাকে কিন্তু কিছুদিন পরেই কি জানি এক অশনিসংকেত তাদের সংসারের উপর এসে পড়ে..!
আস্তে আস্তে কেমন জানি হয়ে যায় সংসার! আসলে কি হচ্ছিলো! তো সেগুলো জানার জন্য অবশ্যই সেই আগের মতো আবারো আমি বলবো সিনেমাটা আপনাকে দেখতে হবে।একই সাথে পাবেন রোমান্স,কিছুটা ফ্যামেলি ড্রামা এবং বেশ কিছু ট্র্যাজেডি।তো দেরি না করে যারা এখন অবধি দেখেননি দেখে ফেলুন।
চলুন জেনে আসি সিনেমাটির জন্য ক্যামেরার সামনে এবং পেছনে কাদের কাদের অবদান ছিলো
এই ঘর এই সংসার
পরিচালক : মালেক আফসারী
রচয়িতা : মালেক আফসারী
প্রযোজনা : খলিল ফিল্মস
শ্রেষ্ঠাংশে : সালমান শাহ, বৃষ্টি, বুলবুল আহমেদ, রোজী আফসারী, আলী রাজ, তমালিকা কর্মকার, খলিল, দিলদার, নাসির খান আরো অনেকে।
ধরন : ড্রামা, ফ্যামেলি ও রোমান্স
ব্যাপ্তিকাল : ১৫৫ মিনিট
মুক্তিসাল : ৫ এপ্রিল, ১৯৯৬
আইএমডিবি : ৭.৯/১০
ব্যক্তিগত মতামত : ৯.৭/১০