Select Page

একজন নয় অনেক তিথির গল্প

একজন নয় অনেক তিথির গল্প

নাটক – তিথিডোর; পরিচালনা – ভিকি জাহেদ; অভিনয় – মেহজাবিন, প্রান্তর দস্তিদার, আবুল হায়াত, শামীমা নাজনীন

যে-কোনো শিল্পই আপনার কাছে তখনই ভালো লাগবে যখন আপনি তার সাথে নিজেকে রিলেট করতে পারবেন। ‘তিথিডোর’ নাটকের গল্প অনেক তিথির গল্প নির্দিষ্ট কোনো তিথির নয়, পর্দার তিথি শুধু তাদের প্রতিনিধি মাত্র।

ভিকি জাহেদ ও মেহজাবিন কম্বো অনেকদিন ধরেই নাটকে জনপ্রিয়। তাদের যে নাটকগুলো হয়েছে ভালো গল্প আর অভিনয় সবসময়ই ছিল। ‘তিথিডোর’-ও তার ব্যতিক্রম নয়।

নাটকের গল্পে তিথি অস্তিত্বের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকে। পারিপার্শ্বিক জীবনে নানা মানসিক যন্ত্রণা তাকে প্রতিনিয়ত জীবনযাপনকে কঠিন করে তুলেছে কিন্তু সে সংগ্রামটা করেই যাচ্ছে। তার গন্তব্যটা কোথায় যাবে তাহলে? এটাই দেখার বিষয় নাটকে।

যে-কোনো মেয়ের জীবনে যেসব সামাজিক সমস্যাকে প্রতিনিয়ত দেখতে হয় তার মধ্যে বয়স, চেহারার সৌন্দর্য, সময়মতো বিয়ে হবার প্রশ্ন এগুলো কমন। এই কমন বিষয়গুলো ক্রমশ জটিল হয়ে আসে যখন কোনো মেয়ের বয়সটা বেশির দিকে যায়। ছেলের অভিভাবকরা তাকে দেখতে এলেও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তার বয়স জানতে চায়। মেয়েটি তখন যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যায় তার জন্য সে কাছের মানুষের সাপোর্টটা বেশি প্রত্যাশা করে কিন্তু বাস্তবতা সেটা বয়ে আনে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে একা থাকা বা ইন্ডিপেনডেন্ট মেয়ের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরো গুরুতর। মেহজাবিন সমাজের অনেক মেয়েদের প্রতিনিধি হয়ে এ চরিত্রটিকেই ধারণ করেছে নাটকে।

তো এই সামাজিক সমস্যা থেকে বের হবার কি উপায়? সমস্যা দেখানোর পাশাপাশি নাট্যকারের দায় হলো সমাধানের বা নিরসনের উপায় দেখিয়ে দেয়া। জীবনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়ার চিন্তাও আসতে পারে মনে কিন্তু তার থেকেও বের হওয়া সম্ভব। সক্রেটিসের বিখ্যাত তত্ত্ব ‘know thyself’ বা নিজেকে জানার যে প্রক্রিয়া সেটার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। প্রকৃতি, সাগর, নদী, আকাশ, ফুল কিংবা পছন্দ করে এমন দু’একজন মানুষের সঙ্গ এগুলো থেকে মোটিভেশন নিয়ে নিজের ভালো লাগা বা নিজের ওপর নির্ভর করতে শেখার স্বাধীনতাকে চিনতে পারলে জীবন আবার সুন্দর মনে হতে পারে। তিথি সে চেষ্টাটাই করেছে যেটি অনেক মেয়ে করতে পারে। ‘নিজেকে খুঁজছিলাম এখন খুঁজে পেয়েছি’ মেহজাবিনের এ সংলাপ নাটকের শেষে মানসিক প্রশান্তি দেয় যা অনেক মেয়ের কাঙ্ক্ষিত সংলাপে পরিণত হবার কথা। নেতিবাচক ঘটনাগুলো তাকে শিখিয়েছে আর ইতিবাচকগুলোকে সে নিজে খুঁজে নিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। আবুল হায়াতের চরিত্রটি এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহায়ক ছিল।

ভিকি জাহেদ একজন মানবিক নির্মাতা। তিনি মানবিক সমস্যাগুলোকে তুলে ধরে সেগুলোকে অনুভূতি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন পর্দায়। মেহজাবিন তার ন্যাচারাল অভিনয়ে অনুভূতিগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করেছে পর্দায়।

ভালো নাটকের খরার এ সময়ে ‘তিথিডোর’ এক পশলা বৃষ্টির মতোই। একটা সংলাপ মন সবচেয়ে স্পর্শ করেছে-‘আপনার বয়স ৩০ মানে আপনার একটা মন খারাপের গল্প আছে।’


মন্তব্য করুন