Select Page

একজন সোহেল রানা

একজন সোহেল রানা

Masud Pervez Sohel Rana bangla film actor, director and producer of pervez filmsআমরা যারা সিনেমা হলে বাংলা ছবি দেখার পাগল ছিলাম তাদের কাছে ‘মাসুদ পারভেজ’ ও ‘সোহেল রানা‘ নাম দুটি খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয়। এই নাম দুটি একটি মানুষেরই যাকে সবাই অভিনেতা সোহেল রানা নামে চিনেন। স্বাধীনতার পর বাংলা চলচ্চিত্র যে কজন তারার আলোয় আলোকিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে অন্যতম এক নক্ষত্রের নাম ‘মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা’। প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনয় তিন ক্ষেত্রেই সফল একজন এই সোহেল রানা। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ”পারভেজ ফিল্মস” এর কর্ণধার এই সোহেল রানা

মাসুদ পারভেজ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকাতে। তাঁর জন্ম ঢাকাতে হলেও পৈতৃক বাসস্থান বরিশাল জেলায়। তাঁর স্ত্রী ডা. জিনাত পারভেজ এবং একমাত্র সন্তান পুত্র মাশরুর পারভেজ জীবরান। তিন ভাইয়ের অন্য দুই ভাই কামাল পারভেজ ও মাসুম পারভেজ রুবেল

১৯৬১ সালে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন মাসুদ পারভেজ। তখন তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের সভাপতি ছিলেন। ওই সময় দুটো রাজনৈতিক দল ছিল – একটি ছাত্র ইউনিয়ন, অপরটি ছাত্রলীগ। ১৯৬৫-তে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বৃহত্তর ময়মনসিংহের। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন আইন বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগ ভিপি ছিলেন ১৯৭২-৭৪ পর্যন্ত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। অস্ত্র হাতে নিয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করে দেশকে মুক্ত করেন।

দেশ স্বাধীনতার পর চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এলেন তিনি। প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’ ছবি দিয়ে। এই ছবির নায়ক ছিলেন খসরু। তার আসল নাম কামরুল আলম খান। তিনিও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সোহেল রানার নিকটতম বন্ধু ছিলেন খসরু। মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে সোহেল রানা, তার বন্ধুরা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন – কী করবেন? এর মধ্যেই মাথায় এলো চলচ্চিত্রের কথা। তারা ভাবলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই তৈরি করা হবে চলচ্চিত্র। সেই ভাবনা থেকেই চলচ্চিত্রে নাম লেখালেন সোহেল রানা। শুরুটা ঠিকই ছিল তার। মাসুদ রানা নামেই প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন তিনি। কিন্তু পরে হয়ে গেলেন নায়ক। মজার ব্যাপার হলো ‘মাসুদ রানা’ ছবির জন্য প্রধান চরিত্রের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো। চরিত্র নির্বাচনের জন্য এসএম শফি, সুমিতা দেবী, মাসুদ পারভেজ আর আহমেদ জামান চৌধুরীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলো। সারাদেশ থেকে অনেকেই ছবি পাঠালেন মাসুদ রানা চরিত্রটির জন্য। কিন্তু ঘটল মজার ঘটনা। এসএম শফি, সুমিতা দেবী আর আহমেদ জামান চৌধুরী হঠাৎ একদিন মাসুদ পারভেজকে বললেন, ‘তুমিই হবে মাসুদ রানা।’ আহমেদ জামান চৌধুরী তখনই নায়ক হিসেবে তার নাম ঠিক করলেন সোহেল রানা। এই ছবিটি মুক্তির মাধ্যমে দর্শকরা তাঁকে পর্দায় দেখতে পান ১৯৭৪ সালে।

তার প্রযোজনা ও পরিচালিত ছবিগুলো হলো—গুনাহগার, জবাব, এপার ওপার, জীবন নৌকা, যাদুনগর, নাগপূর্ণিমা, মারকশা, লড়াকু, বীরপুরুষ, বজ্রমুষ্ঠি, ঘেরাও, চোখের পানি, ঘরের শত্রু, শত্রু সাবধান, ভালবাসার মূল্য কত, খাইছি তোরে, রিটার্ন টিকিট, মায়ের জন্য পাগল ইত্যাদি। নিজের প্রযোজিত ছবি ছাড়াও অভিনয় করেন দোস্ত দুশমন, জিঞ্জির, বারুদ, ওস্তাদ সাগরেদ, জনি, অস্বীকার, আসামি হাজির, আখেরি নিশান, জারকা , প্রতিহিংসা, প্রেমনগর, চ্যালেঞ্জ, বড় মা, নাম বদনাম, প্রেম বন্ধন, গাদ্দার, মহারাজা, সেলিম জাভেদ, স্ত্রী, প্রহরী, প্রেমের দাবি, অজান্তে সহ অনেক ব্যবসাসফল ছবিতে। অজান্তে ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

আশির দশকে বাংলাদেশের দর্শকরা ভিডিও/ভিসিপি’র মাধ্যমে যখন হলিউড এর মার্শাল আর্ট ভিত্তিক ব্রুস্লির ছবির ভক্ত হয়ে পড়ে তখন এই সোহেল রানা ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম কে দিয়ে নির্মাণ করেন ‘রক্তের বন্দী’ ছবিটি। ছবিটি সেই সময়ে ফ্লপ হয়েছিল। এরপর নিজের ছোট ভাই রুবেল’কে নায়ক চরিত্র দিয়ে শহিদুল ইসলাম খোকন’কে দিয়ে নির্মাণ করেন ‘লড়াকু’ ছবিটি যা বক্স অফিসে ঝড় তোলে আর বাংলার দর্শকরা মার্শালআর্ট ভিত্তিক ছবি গ্রহন করে নেয়। এইভাবে বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি মার্শাল আর্ট / কংফু’কে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন ।

আজকের বাংলা চলচ্চিত্র নতুন একজন মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা’র অপেক্ষায় আছে যিনি বাংলা চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন ।


Leave a reply