একটি আঞ্চলিক চলচ্চিত্র দর্শন : টেলিভিশন
টেলিভিশন ফারুকির চতুর্থ চলচ্চিত্র। প্রথমেই কাহিনি সংক্ষেপ বলে নেই। মিঠানীপুর গ্রামের চেয়ারম্যান (শাহীর হুদা রুমি) অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। প্রাণহীন ছবি ইসলাম এ হারাম বলে তার গ্রামে টেলিভিশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার ছেলে সোলাইমান (চঞ্চল চৌধুরী)।
গ্রামেই বাবার ব্যাবসা দেখাশুনা করে। মজনু (মোশাররফ করিম) সোলাইমানের চাকরি করে। সোলাইমানএর যাবতীয় কাজ সে করে থাকে। এমনকি সোলাইমানের মোটর সাইকেলও মজনু চালাই। মালয়েশিয়া প্রবাসীর কন্যা কহিনুর (তিশা)।
সোলাইমান মজনুর সাহায্যে নানাভাবে কহিনুরের সাথে প্রেম্ পর্ব সম্পন্ন করে।
এদিকে প্রাইমারি স্কুল এর হিন্দু শিক্ষক কুমার স্যার টিভি কিনে আনায় তার কাছে প্রাইভেট পরতে আসা পোলাপাইনের সংখ্যা বেড়ে যায়, অন্যান্য শিক্ষকেরা চেয়ারম্যান এর কাছে নালিশ জানান। চেয়ারম্যান স্বশরীরে কুমার স্যার এর বাসায় যান, সেখানে টিভি দেখতে আসা কহিনুর কে কান ধরে উঠ বস করান।
চঞ্চলের সাথে প্রেম সাময়িক ছিন্ন, মজনুও তার প্রেমের কথা জানিয়ে দেয় কহিনুরকে। কাহিনি খেয়ে গেল প্যাঁচ।
চেয়ারম্যান হজ্জে যাবেন। বাধ্য হয়ে ছবি তুলতে হয়। ওদিকে সোলাইমানও বহুত কাহিনি করে তার বাবাকে কহিনুরের সাথে বিয়েতে রাজি করান। হজ্জ এজেন্ট এর কাছে ধোঁকা খেয়ে চেয়ারম্যান সাহেব লজ্জায় গ্রামে না ফিরে হোটেলে ওঠেন। হজ্জের দিন টিভি তে “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” ধ্বনি শুনে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
কিছু গুড সাইড : যথারীতি হিউমার সম্পন্ন একখানা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী মুভি। বিষয় বস্তু ব্যতিক্রম। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে না ওঠার গল্প।বাস্তবতার সাথে ধর্মের সংঘাত, প্রযুক্তির সাথে বৈরিতা আর নিজের জীবন দর্শন জোর করে সবার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার গল্প। পাশাপাশি দক্ষ অভিনয়। দর্শককে চেয়ার এ আটকে রাখার জন্য হিউমারের ছড়াছড়ি। চমৎকার লোকেশান, লাল, নীল, হলুদ ব্যবহার করে রঙহীন গ্রামীণ পটভূমি রাঙিয়ে তোলার চেষ্টা, সব মিলিয়ে একটি সফল ছবি। এখন মৌলবাদীদের কোপানলে না পড়লেই হয়।
কিছু ব্যাড সাইড: কিছু চরিত্রের গল্প অসম্পূর্ণ। মজনুর কি হইল কিছুই বুজলাম না। সবচেয়ে বড় সমস্যা পুর সিনেমাটাই আঞ্চলিক ভাষায়। কিছু কিছু জায়গার ডায়লগ বুঝতে পারি নাই।
এখন আসা যাক হল এর পরিস্থিতিতে। মুভি দেকসি বলাকায়।
৬ টা১৫ তে শো। ৪ টার আগে টিকিট শেষ। কিছুক্ষন পর দেখলাম ১০০ টাকার টিকিট ব্ল্যাক এ ২০০ টাকায় বিক্রি হইতাসে, পোলাপাইন কিন্তাসেও। হল পুরা হাউসফুল। বি পি এল এর গ্যালারি ফাকা ক্যান বুঝলাম!! দেখা যাক কদিন এ অবস্থা চলে।
এখন কথা হইল এই ছবি ফিল্ম ইনডাসট্রি কে কি দিল? একটা জিনিশ বুঝলাম, শুধু হল এর পরিবেশ ভাল করলেই আমাদের দর্শকরা হল মুখীহবে না, তাদের দরকার ভাল ছবি। ছবি ভাল হইলে তারা খারাপ পরিবেশেও ছবি দেখতে রাজি আছে (যেমন আমি )।