একদম পয়সা উসুল ‘স্বপ্নের ঘর’
স্বপ্নের ঘর
পরিচালক : তানিম রহমান অংশু
চিত্রনাট্য : অনীশ দাস অপু
শ্রেষ্ঠাংশে : আনিসুর রহমান মিলন, জাকিয়া বারী মম, কাজী নওশাবা, শিমুল খান ও অনেকে
ধরণ : হরর-থ্রিলার
প্রযোজনা: তাকি খান ফিল্মস
মুক্তি : ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
রেটিং : ৮.৫/১০
ফিল্মটি মুক্তির পর থেকে কোনো গ্রুপেই দেখলাম না গভীরভাবে আলোচনা হয়েছে, হয়তো ফিল্মের প্রচারণাই এর জন্য দায়ী! দেবী,দহন, একুয়াম্যানের ভিড়ে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু ফিল্মের ট্রেইলার দেখে অনেকেই অবাক! ওয়াও এটা আমাদের দেশের হরর সিনেমা!
তানিম রংহমান অংশু ছোটপর্দার বেশ জনপ্রিয় পরিচালক, আমারও বেশ পছন্দের একজন পরিচালক। উনার কাজগুলো বেশ ইউনিক লাগে, বিশেষ করে উনার এডিটিং সেন্স অসাধারণ। তানিম রহমান টানা পাঁচ বছর ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করেছেন এখনো করছেন, উনার বাবা আনিসুর রহমান ছিলেন এখন সংগীত পরিচালক সে সুবাদে গানের ব্যাপারেও তাঁর ভালোই দক্ষতা রয়েছে। অনেকে হয়তো উনার মিউজিক ভিডিওগুলো দেখেছেন, আমি হলফ করে বলতে পারি উনার কাজ খুব কম মানুষ অপছন্দের তালিকায় রাখে। অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিলো অংশু ভাই চলচ্চিত্র নির্মাণে আসবেন বলতে বলতে এসেই পরলেন আর তৈরি করলেন “স্বপ্নের ঘর”।
এর আগে আমাদের ভালো মানের হরর ফিল্ম বলতে “রাজবাড়ি”ই ছিলো তাও বেশ আগের তৈরি, তাই অনেকে জানেই না! তবে “স্বপ্নের ঘর” আপনাকে দারুণ একটি ফিল দিবে এতোটুকু নিশ্চিত। যদিও গল্পের সাথে অনেকেই পরিচিত হতে পারেন কিন্তু এই ফিল্মের মূল রসদই হলো এর স্মার্ট নির্মাণ। সিনেমাটি তৈরি হয়েছে একটি বিদেশি উপন্যাসের উপর নির্ভর করে। ফিল্মের চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লিখেছেন দেশের জনপ্রিয় অনুবাদক “অনীশ দাশ অপু”।
অভিনয় সংক্ষেপ
আনিসুর রহমান মিলন (সীমান্ত) : বেশ শক্ত-পক্ত অভিনেতা তিনি, বরাবরই সে তাঁর অভিনয় দিয়ে কাজ করে এসেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। শেষবার “পোড়ামন” সিনেমায় তাকে দেখে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছিলাম ইনি চলচ্চিত্রে নিয়মিত হলে ভালোই কিছুই হবে। এই সিনেমায় প্রতিটা ধাপে তিনি নিজের নামের সার্থকতা রেখেছেন তবে আমার মনে হচ্ছে মিলন সাহেব এন্টি হিরোর ক্যারেক্টারটা বেশ ভালো করতে পারবেন। দেশের পরিচালকরা তাঁকে চাইলেই দারুণ কাজে লাগাতে পারবেন।
জাকিয়া বারী মম (মারিয়া) : সিনেমার মূল আকর্ষণ ছিলো মমকে ঘিরেই। তিনি আসলেই বহুমুখী অভিনয় দক্ষতাসম্পন্ন একজন অভিনেত্রী তা বারংবার দেখা যাচ্ছে। যারা মমর দারুচিনি দ্বীপ,ছুঁয়ে দিলে মন এবং দহন দেখেছেন তারা হয়তো বুঝে গিয়েছেন। আশা করছি উনার আরো ভালো কিছু কাজ আমরা পাবো। একজন গৃহিণী, একজন ভীতসন্ত্রস্ত জন্মদাত্রী হিসেবে বেশ দারুণ লাগলো এছাড়া হঠাৎ করেই এমন ভয়ের কারণই যে তিনিই হবেন ভাবতেই পারিনি।
কাজী নওশাবা (মিসেস ডি সুজা) : ফিল্মে তাকে দেখা যাবে বেশ আবেদনময়ী নারী হিসেবে। যারা দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে তারা দারুণ ফিল পাবেন। আমি চাই নওশাবাকে নিয়ে এককভাবে কাজ করা হোক, সে যথেষ্ট প্রতিভাবান অভিনেত্রী। শুধুমাত্র ভালো নার্সিং হলেই একজন জাত অভিনেত্রী আমরা পেয়ে যাবো, বিশ্বাস না হলে ঢাকা অ্যাটাক দেখুন।
শিমুল খান (রবার্ট ডি সুজা) : একজন লেখক থেকে চলচ্চিত্র পাড়ার পরিচিত মুখ শিমুল খান। তবে তাঁকে দেখা গিয়েছে নেগেটিভ রোলেই বেশি এবং আমার মনে হচ্ছে নেগেটিভ রোলের জন্য আরো একজন ভালো অভিনেতা আমরা পেয়েছি। অবশ্যই তাঁকে ভালো কাজে কাজ করানোর জন্য পরিচালকদের নিকট আবেদন থাকবে। যদিও প্রথমেই আমি ফিল্মের মূল আকর্ষণ মমকেই ধরেছি কিন্তু আকর্ষণের সবটুকু আলোর সাথে নিজেকে ভালো মিলিয়ে নিয়েছেন শিমুল খান। সবচেয়ে বেশি দারুণ লেগেছে তাঁর ডায়ালগ ডেলিভারি, বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিলো ডায়লগগুলো। একদম পাক্কা ভিলেন বলা যায়। এছাড়া তাঁর এক্সপ্রেশন ছিলো অসাধারণ।
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ ফিল্মের নামের সাথে ফিল্মের গল্পের যোগসূত্র নেই বললেই চলে। কিন্তু এই ফিল্মের নামের সাথে গল্পের দারুণ যৌক্তিকতা রয়েছে তো চলুন গল্পের কিছু অংশ শুনে নেই।
কাহিনী সংক্ষেপ
ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির একজন পরিশ্রমী অভিনেতা “সীমান্ত”। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য পরিশ্রমের কোনো অবকাশ তিনি রাখেননি কিন্তু ভাগ্যের প্রতিকূল সময়ের জন্য তিনি পারছেন না নিজের লক্ষ্যভেদ করতে। এদিকে তাঁর একমাত্র স্ত্রী “মারিয়া”র অনেক দিনের শখ নিজেদের একটি ঘর হবে, খুব সুন্দর ঘর যেখানে থাকতে পারবেন নিজেদের মতোন করে। ঘটনাচক্রে মারিয়া এবং সীমান্ত একটি বাড়িতে যান একজনের হারিয়ে যাওয়া পার্স ফেরত দেবার জন্য, কথার প্রসঙ্গে উঠে আসে তাদের একটি ভালো বাসা দরকার তখনই সে বাড়ির মালিক “রর্বাট ডি সুজা” তাদের খালি থাকা একটি অ্যাপার্টমেন্ট দেখার কথা বলেন। দেখার সাথে সাথেই তাদের পছন্দও হয়ে যায় এবং তারা উঠেও পরেন সে বাড়িতে। এখান থেকেই “স্বপ্নের ঘর” গল্পের আসল রস নির্গত হতে থাকবে।
যারা সিনেমাটি দেখেন নি আমি বলবো তাদের জন্য রিভিউ এখানেই শেষ, কেননা এই অংশে কিছুটা স্পয়লার থাকতে পারে। এমন না যে এতোটুক পড়লে সিনেমা দেখতে যেতে মন চাইবে না কিন্তু না পড়াই ভালো তো চলুন শুনি।
যা কিছু ভালো লেগেছে আলাদাভাবে (স্পয়লার থাকলেও থাকতে পারে)
? বাজেট একটা বড় ব্যাপার তারপরেও ভিএফএক্স বেশ ভালোই লাগলো বিশেষ করে হুট করে আসা মুখাবয়ব গুলো।
? ড্রোন শটগুলো দারুণ লাগলো বিশেষ করে রাতের দৃশ্য।
? মেকআপ ভালোই লাগলো বিশেষ করে আলো আধারের বেলায় একদম ন্যাচারাল ভাবটা ফুটে উঠেছে।
? সবশেষে বাড়ি-ঘরের সেট খুব বেশি অসাধারণ লেগেছে একদম একটা ভুতুড়ে ভাব।
যা কিছু ভালো লাগেনি আলাদাভাবে (স্পয়লার থাকলেও থাকতে পারে)
? একজন সুপারস্টার উল্লেখ করার দরকার ছিলো না! যেখানে সে বাড়ি ভাড়ার কথা চিন্তা করে!
? প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মমর লুক চাইলেই আরো বাস্তবিক করতে পারতো! যেখানে আমরা ৯০দশকেও প্রেগন্যান্ট অবস্থার বাস্তবিক রুপ পেয়েছি সেখানে এটা তো ২০১৮সাল!
? একদম দরকার ছিলো না ফাইটিং সিনগুলোর, অন্যভাবেও ব্যাপারটা তুলে ধরা যেতো! ফিল্মের সবচেয়ে দুর্বল দিক এর ফাইটিং সিনগুলোই।
? নাইটশট গুলোর কিছু কিছু জায়গায় বেশ নয়েজ দেখা গিয়েছে, যার দিকে নজর দেবার দরকার ছিলো।
বলতে থাকলে বলাই যাবে তারপরেও বলছি এটা আমাদের সিনেমা, তার উপর হরর জনরা হিসেবে বেশ ভালো পদক্ষেপ ছিলো। হরর জনরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর লাইটিং,ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক,লোকেশন এবং ভিএফএক্স (যদিও ক্লাইম্যাক্স পার্ট গুলোতে ভিএফএক্সের কিছুটা দুর্বলতা ছিলো) তারপরেও সব মিলিয়ে হরর জনরা হিসেবে বেশ ভালোই লাগলো। আশা করছি আপনাদেরও ভালো লাগবে। অনেক তো হলিউড,বলিউডের হরর ফিল্ম দেখলেন এবার আমাদের দেশের হরর ফিল্ম দেখেন আশা করছি নিরাশ হবেন না, একদম পয়সা উসুল হবে। শুভ কামনা রইলো বাংলা সিনেমার জন্য। হ্যাপি ওয়াচিং!