এক কাপ চা: এই চায়ে স্বাদ আছে
সিনেমার নাম- এক কাপ চা ( ফুঁ দিয়ে খা 😛 )
অভিনয়- ফেরদৌস, মৌসুমী, ঋতুপর্ণা সেন ও আরও অনেকে ( অনেকে মানে ‘আসলেই’ অনেকে)
পরিচালনা- নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল
রচনা, চিত্রনাট্য, সংলাপ- বাসু চ্যাটারজি
প্রযোজক( সহজ বাংলায়- যে “টেকা” ঢালছে)- ফেরদৌস
এই সিনেমার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ এ, মুক্তি পেল ২০১৪ এর শেষে- তাও ভালো মুক্তি পেয়েছে- ইন্টারস্টেলার এর ব্ল্যাকহোলে হারায় যায় নাই! 😛 তবে সেই চার বছর আগে এক কাপ চা এখনও গরম আছে কিনা বা খাওয়ার উপযুক্ত কিনা- সেটাই আলোচনার বিষয়।
কলেজের শিক্ষক শফিক (ফেরদৌস) ভালোবাসেন একই কলেজের লাইব্রেরিয়ান দীপাকে (মৌসুমি), কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেন না। তার বদলে প্রতিদিন দিপার টেবিলে একটি গোলাপ রেখে যান (উলে আমার রোম্যান্টিক বাবু লে! 😛 )। একদিন সাহস করে বলেই ফেলেন দীপাকে মনের কথা আর এক কাপ চায়ের দাওয়াত দেন। কিন্তু দীপা না আসায় শফিক নিজেই দিপার বাসায় চলে যায়। দীপা যেই বাড়িতে পেইংগেস্ট হিসেবে থাকে সেই বাড়ির মালিকের ছেলে পিটার বেশ অসুস্থ, একটি বিশেষ ও প্রায় দুর্লভ ইঞ্জেকশন না আনতে পারলে ছেলেটা নাও বাঁচতে পারে। ফেরদৌস রওয়ানা হন এই ইঞ্জেকশন আনতে, এরপরেই শুরু হয় একের পড় এক চমক।
অভিনয় ভালো সবারই কম বেশি। তবে প্রযোজনার চাপ সামলাতে গিয়ে ফেরদৌস সম্ভবত অভিনয়ের দিকে একটু কম মনোযোগ দিয়েছেন, আরও ভালো হতে পারতো। তবে সবকিছু একাই ঠিক করে দিয়েছেন- মৌসুমি <3 সংসার,বয়স,বিয়ে- কোনটাই মৌসুমির চাহিদা কমাতে পারে নাই, মনে হয়না পারবে- সেটা আরেকবার প্রমাণ করলেন। একটা মানুষ দিন দিন এতটা সুন্দরী কীভাবে হন আর কীভাবে সেটা ধরে রাখেন- সেটা চিন্তা করেই আকুল ব্যাকুল হয়ে যাই এবং ওমর সানিকে হিংসা করি 😛 বাই দ্যা ওয়ে, ছবিতে ওমর সানির ছোট্ট একটা চরিত্র আছে- কাঁপায় দিছেন সেটাতে তিনি! ছোট্ট চরিত্রের লিস্ট বেশ বড়- প্রয়াত অমল বোস ও প্রয়াত( এই মানুষটার নামের আগে প্রয়াত লেখার কষ্টের কোন সীমা নাই) হুমায়ুন ফরিদি, মীর সাব্বির, শাকিব খান, রাজ্জাক, হোমায়রা হিমু, কাবিলা। শাকিবের তিন ঘণ্টার অনেক সিনেমাতেও তাকে এতটা ভালো লাগেনা, যতটা এই সিনেমাতে দুই মিনিটে লেগেছে। ঋতুপর্ণা সেন ভালো। তবে ঘুরেফিরে দিন শেষে একজনের কথাই আসবে- মৌসুমি <3 শুধু মৌসুমির গ্লামার নিয়ে পুরো একটি রিভিউ লেখা সম্ভব।
গান সবই শ্রুতিমধুর। নচিকেতার গলায় টাইটেল সং আর স্বপ্ন দেখি আমি- দারুণ দুইটা গান, বিশেষ করে স্বপ্ন দেখি তুমিতে ফেরদৌস আর মৌসুমির কেমিস্ট্রি (সাথে ফিজিক্সও 😛 ) দারুণ! প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ এর কথায় “লিলুয়া বাতাস” গানটা ভালো-গানে একঝাঁক মানুষ অতিথি চরিত্রে আছেন- আলমগির, আঁখি আলমগির, নিরব, ইমন, নিপুণ। আইটেম সং হিসেবে “বাপরে বাপ” শুধু শুনতে “হয়ত” ভালো লাগতে পারে কিন্তু গানের দৃশ্যায়ন, কস্টিউম- ভালো লাগেনি। পরিচালক হিসেবে নইম ইমতিয়াজ ভালো কাজ দেখিয়েছেন। বাসু চ্যাটারজির গল্পের প্রতি পদে পদে টুইস্ট ই সম্ভবত দর্শকদের শেষ পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছে। কিছু ছোট জিনিস বেশ ভালো লাগে- সিনেমার মধ্যভাগে বিরতির সময় যেখানে সবাই “ইন্টারমিশন” লেখা দেখায়, সেখানে এই সিনেমাতে দেখানো হয়ে “টি ব্রেক” (চা বিরতি)- কাজের প্রতি যত্ন বোঝা যায় এইসব ছোটোখাটো জিনিস দেখে কারণ এই শব্দটি সিনেমার নামের সাথে সম্পর্কিত।
গল্পের প্রথম অংশ দ্রুত আগালেও দ্বিতীয় অংশ একটু গতি হারায় আর বেশি টুইস্ট দেখাতে গিয়ে একটা সময় হালকা বিরক্তির উদ্রেক করে। তারপরেও শেষ পর্যন্ত পরিচালক সামলে নিয়েছেন বলা যায়। ফেরদৌস আর মৌসুমির কিছু ক্লোজ শটে মৌসুমিকে ফোকাসের বাইরে দেখলাম- এরকম কারিগরি ত্রুটি ছিল বেশ কিছু। রোম্যান্টিক কমেডি হিসেবে বেশ কিছু হাসির সংলাপ আশা করেছিলাম, রোম্যান্টিক সংলাপ বেশি পেয়েছি কমেডি সংলাপের চেয়ে।
একটি গড়পড়তা বাংলা সিনেমা থেকে কি আশা করেন? উত্তরে প্রথমেই আসবে- বিনোদন, তাই যদি হয়, তাহলে এক কাপ চা আপনার জন্য বেশ কাজের। সাথে আছে চমৎকার গান আর অভিনয়। সবচেয়ে বড় কথা- কোন বাহুল্য নাই, কোন চিৎকার চেঁচামেচি নাই। অভারল বেশ এঞ্জয়েবল। এরকম সিনেমার আরও বেশি প্রচার প্রচারণা হওয়া উচিত। শুধু গতকালকে দেখলাম ফেরদৌসকে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচে গিয়ে প্রচার করতে- জিনিসটা ভালো লেগেছে- তবে এই জিনিস আরও আগে থেকে করা উচিত ছিল। অনেকে হয়তো জানেনই না যে এই ছবি মুক্তি পেয়েছে! সিনেমার বানানোর জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ হলে, প্রচারের জন্য কেন “হাজার” টাকা খরচ করে যাবেনা? তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই ‘এক কাপ চা’ হলে গিয়ে পান করে আসুন, সপরিবারে। 🙂
পুনশ্চ- সিনেমার একটি হাসির দৃশ্যের কথা উল্লেখ না করে পারছি না- ফেরদৌস বারে গিয়ে নিজের এক ছাত্রকে সেখানে আবিষ্কার করলেন আর বললেন- আরে সালমান! তুমি এখানে কি করছ?
ছাত্র – (থতমত খেয়ে) ইয়ে, আমি সালমান না, আমি শাহরুখ, স্যার! আমি সালমানের জমজ ভাই! 😛 😀 😀 😀