এক নজরে নায়করাজ
সোমবার বিকেলে না ফেরার দেশে চলে গেলেন নায়করাজ রাজ্জাক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নাকতলায় জন্মগ্রহণকরেন তিনি।
ষাটের দশকের মাঝের দিকে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ষাটের দশকের বাকি বছরগুলোতে এবং সত্তরের দশকেও তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় স্বরসতী পূজা চলাকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনর মধ্য দিয়েই নায়ক রাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।
অভিনেতা হওয়ার মানসে ১৯৬১ সালে কলকাতা থেকে মুম্বাই পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি; সেখানে সফল না হয়ে ফিরেছিলেন টালিগঞ্জে।
তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ঘরোয়া নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন-সহ আরও বেশ ক`টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেন। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।
রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে— রংবাজ, দর্পচূর্ন, স্লোগান, আমার জন্মভূমি, অতিথি, কে তুমি, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, প্রিয়তমা, পলাতক, ঝড়ের পাখি, খেলাঘর, চোখের জলে, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, ভাইবোন, বাঁদী থেকে বেগম, সাধু শয়তান, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, মায়ার বাঁধন, গুণ্ডা, আগুন, মতিমহল, অমর প্রেম, যাদুর বাঁশী, অগ্নিশিখা, বন্ধু, কাপুরুষ, অশিক্ষিত, সখি তুমি কার, নাগিন, আনারকলি, লাইলী মজনু, লালু ভুলু, স্বাক্ষর, দেবর ভাবী, রাম রহিম জন, আদরের বোন, দরবার, সতীনের সংসার, অন্ধ বিশ্বাস, জজসাহেব, বাবা কেন চাকর, পৃথিবী তোমার আমার, বাবা কেন আসামি, মরণ নিয়ে খেলা, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, বাপ বেটার লড়াই, পিতার আসন, পিতামাতার, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা প্রভৃতি। প্রযোজিত ছবির মধ্যে রয়েছে আকাঙ্ক্ষা, অনন্ত প্রেম, পাগলা রাজা, বেঈমান, আপনজন, মৌ চোর, বদনাম, সত্ ভাই, চাঁপা ডাঙ্গার বৌ, জীনের বাদশা, ঢাকা-৮৬, বাবা কেন চাকর, মরণ নিয়ে খেলা, সন্তান যখন শত্রু, আমি বাঁচতে চাই ও কোটি টাকার ফকির
নায়করাজ রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। এরপর আরও চারবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পান। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্যবার। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করেন তিনি।
এক নজরে নায়করাজ :
জন্ম : ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি।
পুরো নাম : আবদুর রাজ্জাক।
বাবা : আকবর হোসেন।
মাতা : নেসারুন্নেসা।
স্ত্রী : খায়রুন্নেসা (ভালোবেসে নায়করাজ লক্ষ্মী বলে ডাকেন)।
সন্তান : তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।
নাতি-নাতনির সংখ্যা : আটজন।
অভিনয়ের শুরু : সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়।
অভিনয়ে যাকে গুরু মানেন: পীযুষ বোস।
অভিনয়ে পারিবারিক সমর্থন : মেজ ভাই আবদুল গফুর।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা : আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে উজালা চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে।
নায়ক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র : জহির রায়হানের `বেহুলা`।
প্রথম নায়িকা : কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।
জুটি হিসেবে জনপ্রিয়তা : কবরীর সঙ্গে। প্রথম চলচ্চিত্র সুভাষ দত্তের `আবির্ভাব`।
নায়ক হিসেবে অভিনয় : ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। নায়ক হিসেবে শেষ চলচ্চিত্র `মালামতি`। বিপরীতে নূতন।
চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অভিনয় : ১৯৯৫ সাল থেকে।
প্রথম প্রযোজিত চলচ্চিত্র : রংবাজ (রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন্স), পরিচালক জহিরুল হক। বিপরীতে কবরী।
প্রযোজনায় বিরতি : ২০০০ সালে `মরণ নিয়ে খেলা` চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পর ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে।
প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র : `অনন্ত প্রেম` (১৯৭৭), বিপরীতে ববিতা।
প্রযোজনায় ফিরে আসা : ২০০৮ সালে `আমি বাঁচতে চাই`। নায়ক হিসেবে ছোট ছেলে সম্রাটের অভিষেক।
সর্বশেষ পরিচালিত চলচ্চিত্র : `আয়না কাহিনী` (২০১৪)।
সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র : বাপ্পারাজ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র `কার্তুজ`।
নায়ক হিসেবে যাদের বিপরীতে কাজ করেছেন : সুচন্দা, কবরী, শবনম, শাবানা, নাসিমা খান, সুজাতা, ববিতা, কবিতা, নূতন, অঞ্জনা, কাজরীসহ আরও অনেকে।
জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি : বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ভালোবাসা ও বন্ধু সাংবাদিক প্রয়াত আহমদ জামান চৌধুরীর লিখনীর মধ্যদিয়ে নায়করাজ উপাধি অর্জন।