Select Page

এক যে ছিল জোয়ান গাজী

এক যে ছিল জোয়ান গাজী

এক যে ছিল জোয়ান গাজী। বড় সরল যে ছেলে। পাড়াগাঁয়ে তার বাড়ি। বাপের কথায় চলা তার অভ্যাস। বাপের কথার বিপরীতে যাওয়াই যাবে না তার।

জোয়ান গাজীর পাছায় লাথি দিয়ে তাকে ফেলে দেয়া হয়। উঠে বসে সে প্রশ্ন করে-‘লাথি দিলা ক্যান?’ উত্তর আসে-‘তোমার টেললিং চলতাছে।’ মানে ক্ষেতের কাজে তাকে দক্ষ হতে হবে। কে দিয়েছে লাথি মারার হুকুম। বাপ সামনে চলে আসে আর জানায় ওটা তারই হুকুম। অতঃপর লাথি হজম করতে সে এক পায়ে খাড়া।

বাড়ির বড়বউ বকুল তাকে চিমটি কাটলে, নাক ধরে টানলে, আছাড় মারলে সবই তার জানানো দরকার পড়ে বাপকে। ‘আব্বা, তোমার বউমা আমারে পানিতে চুবানি দিয়েছে। আমারে জোর করে ধরে পানিতে দে চুবানি, দে চুবানি। আমি কোনোমতে জান নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’ বাপে কয় এসব কথা আর কাউকে না বলতে। বকুল পাখি, মেঘ, বৃষ্টি এসব খেতে চায় সে কথা গিয়ে বাপকে জানায়। ভরা পূর্ণিমার রাতে আকাশে জোছনার আলোতে পুকুরের পানি ঝকমক করলে বকুলের যখন মনটা রোমান্টিক হয়ে যায় জোয়ান গাজী নাক ডেকে ঘুমায়। তারে জাগালে সে মনে করে বাড়িতে চোর ঢুকেছে। অতঃপর বাপবেটা মিলিয়ে চোর ধরার আয়োজন করে। বাপে জানায় বকুলরে জিনে ধরছে তার চিকিৎসা দরকার। জোয়ান গাজী তাতেই সায় দেয়। হাজির হয় কবিরাজ মশাই জিনের বারোটা বাজাতে।

জোয়ান গাজীর বাপন্যাওটা হাল ধুয়ে সাফ করে বাড়ির ছোট বউ পারুল। পারুল এসে তারে সরল থেকে চালাক করতে থাকে। তার ‘আব্বা, আব্বা’ করতে থাকা স্বভাবকে বদলায় সে। আছাড় মেরে ঘরের মেঝেতে ফেলে বুঝিয়ে দেয় সবসময় আব্বা, আব্বা করতে হয় না। কোন কথা আব্বারে বলা যাবে আর কোন কথা বলা যাবে না বুঝিয়ে দেয়। লুঙ্গি পরা জোয়ান গাজীকে সে জিন্সের শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে ‘ইসমার্ট’ বানিয়ে দেয়…😃…তার মনের মতো ‘সোলেমান খান’…😃 (সালমান খান অর্থে) বানায়। তারপর বাড়ির উঠোনে বাপবেটায় চলে অভিনয়। জিনের আঁচড়ের ফল তাই জোয়ান গাজীর এ পরিবর্তন। মিষ্টির মধ্যে ময়দা মেশানো আছে মিষ্টি খেয়েই বলে দেয় সে। তার যে বুদ্ধি খুলতে শুরু করেছে বোঝা যায়।

বাড়ির বড়বউ বকুলের উপর অত্যাচার করে জোয়ান গাজীর বাপ মোল্লাসাহেব। তার অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাস্তায় দৌড়ে গেলে ধরে এনে বেঁধে রাখে রশি দিয়ে। বকুলের বাঁধন খুলে দিতে বলে জোয়ান গাজী। তখন আর সে সরল সোজা বোকা কিসিমের নেই। তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার দিন ততদিনে শেষ। ভালো-মন্দের তফাত সে বুঝে ফেলেছে। তাই বাপের খোলসটা সেই ভেঙে দেয়। পারুল বকুলের বাঁধন খুলে দিতে ভয় পেলে জোয়ান গাজী সোজা জানিয়ে দেয়-‘বুঝচি তোমার দ্বারা হইব না।’ তারপর নিজেই খুলে দেয়। বাঁধনটা শুধুই একটা রশির বাঁধন না। এ হলো আবহমান গ্রামে ছড়িয়ে থাকা নাম না জানা অনেক পল্লীবধূর উপর নির্যাতনের প্রতীক। সে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখানো ছেলে জোয়ান গাজী।

জোয়ান গাজী একটা সরলতার প্রতীক, পরিবেশ-পরিস্থিতিতে পাল্টে যাওয়া একটা সাহসী চেতনা। জোয়ান গাজীর পর্দার জীবন্ত কারিগর রিয়াজ। তার কাজ চরিত্রকে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা। তার নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু। ছবির নাম ‘মোল্লা বাড়ীর বউ।’

আরো জোয়ান গাজী-র দেখা পাক বাংলাদেশী চলচ্চিত্র।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন