Select Page

এফডিসিতেই নষ্ট হয়েছে কালজয়ী চলচ্চিত্র

এফডিসিতেই নষ্ট হয়েছে কালজয়ী চলচ্চিত্র
1_48291অযত্ন-অবহেলায় এফডিসিতেই নষ্ট হয়েছে কালজয়ী চলচ্চিত্র। এ অভিযোগ চলচ্চিত্রকারদের। এফডিসি সূত্র বলছে, `চলচ্চিত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব এফডিসির নয়। এটি প্রযোজক এবং ফিল্ম আর্কাইভের কাজ।’এফডিসির এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না চলচ্চিত্রকাররা। তাদের মতে, এফডিসির নীতিমালাতেই চলচ্চিত্র সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
১৯৫৬ সালে নির্মিত প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ থেকে বর্তমান পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে প্রায় ২৯০০ চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ফিল্ম আর্কাইভ সংরক্ষণ করেছে ২১৫০টি। বাকিগুলো এফডিসির উদাসীনতায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এফডিসিতে চলচ্চিত্র সংরক্ষণের জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ কোনো ব্যবস্থাই নেই।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, হলিউড-বলিউড এমনকি টালিউডেও ১৯৩০ বা তার আগে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো এখনো যত্ন নিয়ে সংরক্ষণ হচ্ছে। তারা পারলে আমরা কেন পারছি না। এটি আসলে দেশপ্রেম ও দেশের সম্পদের প্রতি মায়া-মমতার অভাব। তিনি বলেন, এফডিসি শুধু নির্মাণ নয়, সংরক্ষণেরও প্রতিষ্ঠান। চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, চলচ্চিত্র সংরক্ষণ দূরে থাক, স্বাভাবিক নেগেটিভ সংরক্ষণেও এসির ব্যবস্থা নেই। ফলে মূল্যবান সরকারি সম্পদ প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে এতে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। চাকরি করতে হচ্ছে তাই এখানে আসা- এ মনমানসিকতা নিয়ে সবাই এফডিসিতে চাকরি করতে আসে। কোনো দায়িত্ববোধ বা দেশপ্রেম কারও মধ্যে নেই। তাই চলচ্চিত্রকারদের বলব, যাদের চলচ্চিত্র এফডিসিতে আছে অনুগ্রহ করে তা নিয়ে যান। নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করুন। এফডিসি নিজের সম্পদেরই যত্ন নেয় না, আমাদের সম্পদের যত্ন নেবে কীভাবে।
এদিকে এফডিসির স্টোর বিভাগ জানায়, এফডিসি হচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা। সংরক্ষণাগার নয়। সংরক্ষণের জন্য ফিল্ম আর্কাইভ রয়েছে। তাই সব সময়ই প্রযোজকদের বলা হয় এফডিসির বিল পরিশোধ করামাত্রই যেন তাদের চলচ্চিত্র তারা নিয়ে যান। কিন্তু অনেকেই না নেওয়ায় স্টোরে পড়ে আছে। বেশি পুরনো চলচ্চিত্র রাখার নিয়মও নেই। তাই ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট হয়েছে, বাকি কিছু এফডিসির উদ্যোগে ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ এতে স্থান সংকুলানের অভাব ও বিদ্যুতের অপচয় হয়। তবে নব্বই দশক থেকে এ পর্যন্ত নির্মিত কিছু চলচ্চিত্রের নেগেটিভ স্টোরে আছে এবং যথাযথ তাপমাত্রায় তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তারপরও নির্মাতাদের কাছে অনুরোধ তারা যেন তাদের চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে যান। কারণ ২০০০ সালের পর এফডিসির এক সার্কুলারে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, এফডিসির বিল পরিশোধ করে চলচ্চিত্র নিয়ে যেতে হবে। কারণ এফডিসিতে কোনোভাবেই চলচ্চিত্র সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়।
এদিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২৯০০ চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ফরমেটে আর্কাইভে বর্তমানে সংরক্ষণে রয়েছে ২১৫০টি। এর মধ্যে ৩৫ মিলিমিটারে ৬৫০টি, নেগেটিভে ৩০০টি এবং ডিভিডিতে রয়েছে ১২০০ চলচ্চিত্র। আর্কাইভ জানায় নির্মাতাদের উদাসীনতায় চলচ্চিত্র এখানে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। আইন থাকা সত্ত্বেও তারা আর্কাইভে চলচ্চিত্র জমা দেয় না। ২০০৫ সালের কপি রাইট অ্যাক্ট অনুযায়ী নির্মাতাদের অবশ্যই এক কপি চলচ্চিত্র আর্কাইভে জমা দিতে হবে।
আর্কাইভ জানায়, বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ হওয়ায় আর্কাইভে চলচ্চিত্র জমাদানে নির্মাতারা চরম বিপাকে পড়েছে। কারণ এখন জমা দিতে হবে হার্ডডিস্কে। এতে পাইরেসি হওয়া সহজ। ফলে ভয়ে নির্মাতারা এখন চলচ্চিত্র জমা দিচ্ছেন না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে হার্ডডিস্ক থেকে যাতে কপি করা না যায় সেই ব্যবস্থার ফরমেট চালু করা। দুঃখজনক হলেও সত্য, অন্যান্য দেশে এ ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে এখনো এ পদ্ধতির প্রবর্তন হয়নি। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, আর্কাইভ এবং এফডিসি উভয় সংস্থারই দায়িত্ব চলচ্চিত্র সংরক্ষণ করা। মিথ্যে অজুহাতে এফডিসি এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
*গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আলাউদ্দীন মাজিদ। প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনে


Leave a reply