Select Page

‘এফডিসির গতানুগতিক মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে’ -পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

‘এফডিসির গতানুগতিক মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে’ -পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

image_1286_359337পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিলেন কিছুদিন আগে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র কালের কন্ঠে একান্ত সাক্ষাতকারে গত মেয়াদের সফলতা, পরবর্তী পরিকল্পনা, এফডিসির বর্তমান কার্যক্রম ইত্যাদি অনেক বিষয়ে খোলামেলা হলেন তিনি। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন খায়রুল বাসার নির্ঝর। বিএমডিবি পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে দেয়া হলো-

দ্বিতীয় মেয়াদে এফডিসিতে এসে নতুন কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন?
নতুন পরিকল্পনা বলতে গত এক বছর ধরে যেগুলো করার চেষ্টা করছিলাম, সেগুলো নিয়েই আবার নতুন করে ভাবছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি বাংলা চলচ্চিত্রের মানোন্নয়নে যা কিছু করার সবই চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি। প্রথমত, সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মনীতি মেনে বেশ কিছু ডিজিটাল যন্ত্রপাতি কেনা এবং দ্বিতীয়ত, এফডিসির বর্তমান ভবন সংস্কার। কয়েকটি নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।

সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মনীতির কথা বললেন। সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে?
এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে তো অনেক সময় দরকার। সংক্ষেপে বলি, এফডিসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর অর্থায়ন সম্পূর্ণভাবে সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে গেলে তার জন্য সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আমরা ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ক্যামেরাসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে চাচ্ছি। কিন্তু এটা করার জন্য সরকারের অনুমোদন দরকার। বেশ কিছু নিয়মনীতি আছে।

গত মেয়াদে আপনি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অনেক কিছুই করার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন সংবাদমাধ্যমে। সে সবের কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলে আপনার মনে হয়?
নিজের সাফল্যের কথা নিজে মুখে বললে বিষয়টি আসলে কেমন হয়ে দাঁড়ায়। মৌলিক ক্ষেত্রগুলোর কথা বলি। বাংলা চলচ্চিত্রের মূলত দুটি দিক। এক, গতানুগতিক মানসিকতা, যার পরিবর্তন অনেকটাই করা সম্ভব হয়েছে। আর দুই হচ্ছে, জাতীয় চেতনার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা। আগের তুলনায় এটা অনেকখানি বেড়েছে। এফডিসিতে মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কাজগুলো করা শুরু হয়েছে।

অনেক দিন পর এফডিসি নতুন মুখের সন্ধানে প্রকল্পের ঘোষণা দিল। কার্যক্রমের কত দূর এগোল?
একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে আমরা কার্যক্রমটি শুরু করতে যাচ্ছি। এটি বাস্তবায়ন হলে আশা করছি ভালো ভালো কিছু আর্টিস্ট আমরা পাব। বাংলা চলচ্চিত্র আরো সমৃদ্ধ হবে। কার্যক্রমটি প্রাথমিক অবস্থায় আছে। শিগগিরই নাম নিবন্ধনের ঘোষণা দেওয়া হবে। নাম নিবন্ধনের পরই মূল কার্যক্রম অর্থাৎ বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির ব্যাপারে একটা তোড়জোড় লক্ষ করা গিয়েছিল। এ ব্যাপারে আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী?
বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানি করা হবে কি হবে না- এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এফডিসির এখানে কোনো হাত নেই। তবে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমাদের দেশে প্রদর্শনের ব্যাপারে আমার মতামত হচ্ছে, বিশ্ববাজার খোলা আর চলচ্চিত্রের জন্য বিশ্ববাজার খুব জরুরি বিষয়। বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা যত বাড়বে, দেশে তত ভালো মানের চলচ্চিত্র তৈরি হবে।

বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এতে নির্মাতারা কী কী সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেন?
চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই কাজটিও তো এর আগে অন্য কেউ করতে পারেনি। বর্তমান সরকার দেশের চলচ্চিত্রের মানোন্নয়নে বিশেষ সুনজর দিচ্ছে এফডিসির প্রতি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি খরচে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। চলচ্চিত্রের জন্য ব্যাংকঋণসহ বিভিন্ন শিল্পসুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য। শিল্প হিসেবে ঘোষণাটা হয়ে গেল বলেই আমরা এখন অনেক দাবি করতে পারছি সরকারের কাছে।

নির্মাতারা অভিযোগ করছেন, এফডিসির ফ্লোর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ।
এফডিসির ফ্লোর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এটা সত্যি। কিন্তু কয়েক গুণ নয়, সামান্য কিছু বাড়ানো হয়েছে। এফডিসির একটা নিজস্ব ব্যয় নির্বাহের ব্যাপার আছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই সরকার ভর্তুকি দিয়ে আসছে। তবে সরকারি অর্থ দিয়ে সব প্রয়োজন মেটানো সম্ভবপর হয় না। সে কারণেই ফ্লোর ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

তাহলে কি এফডিসি নিজের অর্থ দিয়ে এর ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে? নাকি এখনো সরকারি সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে?
আমরা চেষ্টা করছি এফডিসির আয় দিয়েই চালানোর। তবে এখনো সামান্য কিছু সরকারি সহায়তার দরকার হচ্ছে। সব কিছুর জন্য তো আর সরকারি অর্থের দিকে চেয়ে থাকলে চলে না। এফডিসির নিজস্ব যে আয় হয় তা সঠিকভাবে কাজে লাগালে অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের অনেকখানি নির্বাহ করা সম্ভব। আমি যখন প্রথম দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন যে অবস্থা ছিল তার অনেক উন্নতি ঘটেছে গত এক বছরে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো বেতন পেত না। এখন প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্দিষ্ট দিনে বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

গত বছর এফডিসিতে সরকার প্রায় ৫৪ কোটি টাকার বাজেট প্রদান করেছিল। সময়মতো কাজে না লাগানোর ব্যর্থতায় এ অর্থ অন্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে। কথাটা কতটুকু সত্য?
এক বিন্দুও সত্য নয়। আমরা এফডিসির অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। এত মোটা অঙ্কের একটি বাজেট বরাদ্দ হলো আর সময়মতো সে অর্থ কাজে লাগানো গেল না- এটা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এ কথা সত্য, গত বছর সামান্য কিছু থোক বরাদ্দ আমরা পেয়েছিলাম। সে অর্থ এখনো এফডিসির বিভিন্ন প্রয়োজনে খরচ করা হচ্ছে।

সুত্র: কালের কন্ঠ


Leave a reply