কর্মকর্তাদের দাবি: ‘হাওয়া’য় বন্যপ্রাণী আইন ‘লঙ্ঘন হয়েছে’
খাঁচাবন্দি শালিকের দৃশ্যায়নের অভিযোগ পেয়ে ‘হাওয়া’ দেখল বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। দেখে তারা বলল, এই সিনেমায় বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। যদিও সিনেমাটির নির্মাতা দাবি করে আসছিলেন, তারা আইন লঙ্ঘনের মতো কিছু করেননি। খবর বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর।
গত ২৯ জুলাই দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পায় হাওয়া। দীর্ঘদিন পর দেশে চলচ্চিত্র অঙ্গনে সাড়া ফেলার পাশাপাশি এই সিনেমায় বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও আসে।
শালিক পাখিকে খাচায় বন্দি রাখা, মেরে খাওয়া কিংবা শাপলা পাতা মাছ ধরার দৃশ্যগুলো আইন লঙ্ঘনের নজির বলে প্রাণী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ তুললে সিনেমাটি দেখার সিদ্ধান্ত নেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
ইউনিটের চার কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটি দেখেন। দেখা শেষে ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, সিনেমাটি দেখলাম। ঘটনা সত্য।
“সিনেমায় মাছ ধরা নৌকায় দীর্ঘসময় একটি শালিক পাখিকে খাচায় বন্দি রাখা হয় এবং শেষে পাখির মাংস খাওয়া হয়, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর সুস্পষ্ট বিরোধী। কেননা বন্যপ্রাণীকে খাঁচায় আটক রাখা কিংবা বন্দি রাখা আইনের লঙ্ঘন।”
শালিকের মাংসই খাওয়া হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা তদন্ত করার আগে বলা যাচ্ছে না। এখন বলতে চাই যে পাখিটাকে আটকে রাখা হয়েছে, সেটা সত্যিকারের শালিক পাখি। এরমধ্য দিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন হয়েছে। পাখির মাংসই খাওয়া হয়েছে কি না, তদন্ত শেষে সেটা বলা যাবে।”
হাওয়ার নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন দাবি করেছিলেন, সিনেমায় সত্যিকারের কোনো বন্যপ্রাণীকে মারা হয়নি।
তিনি বলেছিলেন, “এটা একটা ফিকশনাল ওয়ার্ক। এখানে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা করা হয়নি। দৃশ্যায়নের প্রয়োজনে এখানে বিকল্প ব্যবহার করা হয়েছে।”
সিনেমার শুরুতেই সেই ‘ডিসক্লেইমার’ দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, যারা আলোচনা করছে, তারা সিনেমার শুরুটা হয়ত ‘মিস’ করেছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবেন- জানতে চাইলে অসীম মল্লিক বলেন, “আমরা রিপোর্ট পেশ করব। আশা করি, আইন অমান্যকারীকে শাস্তির আওতায় আসতে হবে।”
অপরাধ প্রমাণিত হলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শাস্তির বিষয়টা আদালত দেখবে। আইন লঙ্ঘন হয়েছে, এটা আমরা বলতে পারব। তবে আইনে বলা আছে, বন্যপ্রাণীকে খাচায় লালন পালন বা নিজের দখলে রাখলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের জেল হতে পারে।”
সিনেমা দেখা দলের সদস্য বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন বিভাগের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাদিক সাংবাদিকদের বলেন, “শালিক হত্যা করা হয়েছে কি না, আমরা সেটা দেখতে আসিনি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২তে স্পষ্ট করে বলা আছে, যদি কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বন্যপ্রাণী আইন ভঙ্গ অথবা অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করে, তাহলেই বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হবে। শালিককে হত্যা করা হলো কি না, সেটা বিষয় না। বিষয় হল দর্শকের উদ্দেশে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে।”
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, সিনেমায় বন্যপ্রাণী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বন অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। যদি অনুমতি মেলে তাহলে দৃশ্যের খাতিরে বন্যপ্রাণী ব্যবহার করা যাবে। অনুমতি না পেলে তা করা যাবে না।