কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে সাফটা ও যৌথ প্রযোজনা
অনুপম রায়ের বাক্যবাগীশ অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকে বাঙালির চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নিজের ঘরের ইট নড়ে উঠলেই জানি কামড়ায়।’ তাই যতক্ষণ পর্যন্ত মাথাব্যাথার কারণ হয়নি ততক্ষণ পর্যন্ত এই লেখার প্রয়োজনও বোধ আমরা করিনি। কিন্তু এখন সাফটা, যৌথ প্রযোজনা এসব আমাদের বিষফোঁড়ার কারণ।
সাফটা চুক্তি : বাংলাদেশে প্রতি বছর বাজেট ঘোষণা হলে সেটা একমাত্র বড় বড় আলোচকদের গোলটেবিল আলোচনার টেবিল ছাড়া আর কোথাও আলোচনা হতে দেখা যায় না যদি বা কলরেট অথবা সিগারেটের দাম না বাড়ে (যদিও এবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আবগারি শুল্ক নিয়ে হচ্ছে)। ঠিক তেমনভাবে সাফটা নিয়ে আমারও সাধারণ জ্ঞানের দৌড় হল— ‘দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি। সার্ক চুক্তিভুক্ত দেশসমুহের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকেই সংক্ষেপে ও ইংরেজিতে সাফটা (SAFTA) বলা হয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইসলামাবাদে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।’ এর বাইরে আর এটাই জানতাম যে, এই চুক্তির কারণে সার্কের এক সদস্য দেশের পণ্য অন্যদেশে ট্যাক্সে ছাড় পায়।
আগে পত্রিকায় নিউজ দেখতাম, ভারতীয় অনেক ছবি এয়ারপোর্ট আর সেন্সরেই আটকে আছে। তারপর একদিন হঠাৎ দেখা শুরু করলাম ভারতীয় নতুন ছবির পোস্টার আর ঘটনা জানতে পারলাম— সাফটাতে চলচ্চিত্র বিনিময় নিয়েও চুক্তির একটা ধারা আছে। যাতে বলা আছে, সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময় করা যাবে। সংস্কৃতি বিনিময়ের এই চুক্তি আসলে কতটা সংস্কৃতি বিনিময় আর কতটাই বা মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে আগ্রাসন সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
সার্কভুক্ত দেশসমুহের মধ্যে বিনিময়ের কথা থাকলেও সেটা আদতে হচ্ছে কেবলমাত্র ভারতের সাথে, বিশেষভাবে বললে ভারতের একটি রাজ্যের সাথে। চলুন দেখি আসলে এই বিনিময়ে কার কী লাভ হচ্ছে।
[su_note note_color=”#ecf0f5″ text_color=”#ffffff” radius=”5″]
এই লেখাটি বিএমডিবি ঈদ সংখ্যা ই-বুক ২০১৭ এর অংশ। পুরো ই-বুক টি ডাউনলোড করুন এখানে
ডাউনলোড করুন[/su_note]
চলচ্চিত্রে বিভাজনকে অস্বীকার করতে চাইলেও সত্যি বলতে ফিল্ম দুই ধরনের হয়, একটা হলে সিটি মেরে লোকে দেখে যাকে ইন্ডাস্ট্রির অক্সিজেন বলা হয়, এই ধারাকেই কমার্শিয়াল বলা হয়। আরেকটা হল প্যারালাল বা আর্ট, এটা আসলে কিছুটা সিনেমাখোর মানুষদের জন্য, ইন্টেলেকচুয়ালিটির কারণে যেমন সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয় তেমনি অনেক পুরস্কারও বগলদাবা করে, তাই একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রির প্রেস্টিজ। দ্বিতীয় ধারার ফিল্মকে ওয়ার্ল্ড ফিল্মের মেম্বার বলা হয়, সেক্ষেত্রে বিনিময়ের সময় সাধারণত এই টাইপ ফিল্মই প্রাধান্য পায়।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের বিনিময়ের সময় যা বিনিময় হচ্ছে তার সবকটাই বাণিজ্যিক, অজুহাতও হাজির— ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাও। যেহেতু দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই খরা চলছে তাই তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে, একই ভাষাভাষী দুটো ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একের অপরের জন্যে দরদ উথলে পড়ছে। চলুন দেখে আসি গত বছরে কী হয়েছে— হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসে নির্মিত কৃষ্ণপক্ষ-এর ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নেওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়াই কলকাতা থেকে অজ্ঞাত এক বেপরোয়া-কে এনে হাজির করে আর কৃষ্ণপক্ষ-কে করে কোণঠাসা। এর বিনিময়ে কলকাতা যাওয়া মা আমার স্বর্গ সোসাইটি নামের একটি হলেই কেবলমাত্র প্রদর্শিত হয়। বোর হবেন না, আরো সার্কাস আছে, যারা এই বেপোরোয়া নিয়ে দেশিয় ছবির সাথে বেপরোয়া আচরণ করল তারাই আবার শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের (এসভিএফ) কেলোর কীর্তির সময় ‘হল দেবো না’- টাইপ কথা বলে কুমিরের কান্না জুড়ে দিল। হিপোক্রিসি ওভারলোডেড। যাই হোক, প্রাপ্ত তথ্য মতে এটাই এখন অবধি বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করা আমদানির একমাত্র ছবি, কিন্তু এর বিনিময়ে কলকাতা যায় রাজা ৪২০, যার মুক্তি নিয়ে কিছু জানা যায় না। এই সময়ের মধ্যে বেলাশেষে আর ছুঁয়ে দিলে মন-এর বিনিময় হয় এবং এটাই বোধহয় সমবিনিময়ের প্রথম এবং এখন অবধি একমাত্র উদাহরণ যা কলকাতায় লম্বা সময় ধরে চলে। এরপর সম্রাট-এর বিনিময়ে আসে কলকাতার ‘ডিজিস্টারাস ফ্লপ’ ছবি অভিমান। বরাবরের মতো এবারো সম্রাট-এর কপালে রুপশ্রী, কালিগঞ্জ টকিজ ও মোহন নামে ৩টি হল জোটে। এই বছরই রাজাবাবু-র বিনিময়ে তোমাকে চাই এবং নগর মাস্তান-এর বিনিময়ে হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা মুক্তি পায়। আর ওয়ান-এর জন্যে কোন ছবিই বিনিময় করা লাগেনি, সেন্সরে জমা দিয়ে পরদিনই ছাড়পত্র পায়। আর এই ছবিগুলো এতটাই আগ্রাসী রূপ ধারণ করে যে তা বেছে বেছে সত্তা, সুলতানা বিবিয়ানা, পরবাসিনী নামক নতুন তিন নির্মাতার তিনটি স্বপ্নকে গিলে খায়। আরো আক্ষেপের ব্যাপার, এই সাফটা নির্ভর প্রতারণায় যখন তিতাস একটি নদীর নাম, পদ্মা নদীর মাঝি, মনের মানুষ, শঙ্খচিল-এর প্রযোজক হাবিবুর রহমান খানও জড়ান।
এতক্ষণে আশা করি বুঝতে পারছেন এই বিনিময়ে আমরা আসলেই কিছু পাচ্ছি না। তাহলে লাভটা কার হচ্ছে? তাহলে চলুন একটু পেছনে যাই। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃনাল সেনদের হাতে গড়া সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ ১৯৯০ এর দিকে স্বপন সাহাদের হাত ধরে মান হারাতে থাকে। তখন এতটাই সংকটে পড়ে যায় যে, বাংলাদেশি ছবিও তারা অহরহ রিমেক করেছে। তারপর ২০০০ সালের দিকে তারা গল্পের খনির খোঁজ পায় দক্ষিণ ভারতে, দেদারসে শুরু করে তামিল, তেলেগু ছবির রিমেক। ইন্ডাস্ট্রির অক্সিজেন সোর্সই হয়ে যায় দক্ষিণ ভারত। এর মাঝে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষদের চেষ্টা থাকলেও কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির নিয়ন্ত্রণ রিমেক মেকারদের হাতেই থাকে। ২০০৯-১০ এর দিকে আসে সৃজিত মুখার্জি, কৌশিক গাঙ্গুলি, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীলরা। আস্তে আস্তে তারা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে থাকে আর ২০১৩ সালে চাঁদের পাহাড়-এর পর ইন্ডাস্ট্রির পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মৌলিক গল্পের নির্মাতাদের হাতে। যেখানে এতকাল ধরে রিমেকনির্ভর মাথামোটা একটা দল তৈরি হয়েছে তাদের এবার না খেয়ে মরার অবস্থা হলো। তাই এবার তাদের সহজ টার্গেট ‘বাংলাদেশ’।
এ কথার সত্যতা খুঁজতে চান? তাহলে চোখ রাখুন কলকাতার সবচেয়ে প্রভাবশালী অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কিছু ইন্টারভিউতে। বক্তব্যগুলো এমন ছিল—
– আমাদের ইন্ডাস্ট্রির এই দুর্দিনে নতুন বাজার তৈরি করতে হবে।
– এবার আমাদের বাংলাদেশের মার্কেটের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, নতুবা বাঁচবে না আমাদের কমার্শিয়াল ফিল্ম। আর কমার্শিয়াল ফিল্ম না বাঁচলে ইন্ডাস্ট্রিও বাঁচবে না।
– দেশ বিদেশে থাকা সকল বাংলা ভাষাভাষী দর্শকের কাছে আমাদের ছবি পৌঁছে দিতে হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে আমাদের ছবি পৌঁছতে হবে। নতুবা বাজেটও তুলে আনা সম্ভব না।
– আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিধি বাড়াতে হবে, বাংলাদেশকেও এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
শেষ লাইনটা একবার খেয়াল করুন। সিরিয়াসলি? একটা স্বাধীন দেশের ইন্ডাস্ট্রি পাশের দেশের একটা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে!
দিনের পর দিন প্রসেনজিৎ, দেব, শ্রীকান্ত মোহতাদের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সফরসঙ্গী হওয়া কিংবা দফায় দফায় বৈঠক আসলে এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নেরই চেষ্টা। (তাও তো ভাবতে ভালো লাগে তাদের অভিভাবক আছে, আর আমাদের লেজেন্ডরা ফিল্ম থেকে টাকা কামিয়ে মার্কেট বানান, গার্মেন্টস দেন কিন্ত ফিল্মে কখনো ইনভেস্ট করে না। কালেভদ্রে করলেও সেটা আসলে সুপুত্রদের নায়ক বানানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না। কখনো ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবা তো দূরে থাক, খবরও নিতে দেখা যায় না। খালি বিশেষ দিবসে নতুন নির্মাতাদের ব্যর্থতা মিডিয়ায় তুলে ধরা আর ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্যে এফডিসির উপর রাগ ঝাড়া ছাড়া আসলেই কিছু করেন না।)
যাই হোক, কলকাতার এখনকার ছবির প্রি-প্রোডাকশন টাইমে বাজেট থেকে প্ল্যানিং সবই করছে বাংলাদেশকে মাথায় রেখে। তাদের রিমেক কমার্শিয়ালকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের মার্কেটের উপর নির্ভর করে। এমনকি তাদের মৌলিক ছবিগুলোর বাজেটও বাড়াচ্ছে বাংলাদেশকে মাথায় রেখে। চাঁদের পাহাড়-এর সিক্যুয়াল আমাজান অভিযান-এর বাজেট ২০ কোটি করা হয়েছে বাংলাদেশের মার্কেটকে মাথায় রেখে। ছবিটি পুজোয় আসার কথা থাকলেও পিছিয়ে ক্রিসমাসে নেওয়া হয়েছে, কেন জানেন? শুনুন তাহলে—
১. এবার ক্রিসমাসে বলিউডের আমির খানের কোন ছবি নেই। তাই বড় ক্ল্যাশ ফেস করতে হবে না, তাছাড়া পুজোর চড়া বাজারে সৃজিতের একটা ক্রেজ আছে, তাই ইয়েতি অভিযান-কে (এটা আবার যৌথ প্রযোজনা!) ছেড়ে দেওয়া হোক।
২. বাংলাদেশে পুজা বৃহৎ উৎসব নয়। বরং ডিসেম্বরে রিলিজ করলে শীতের ছুটি ও বছর শেষের ছুটিতে থাকা স্টুডেন্টদেরও ধরা যাবে।
যৌথ প্রযোজনা : ২০১৫ থেকে এখন অবধি যৌথ প্রযোজনা নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়ে গেছে, তাই একে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বোধহয় কিছু নেই। দুইদেশ মিলে ছবি বানাবে আর তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬-তে আইন করেছে যা আবার ২০১২-তে সংশোধন করা হয়েছে এবং যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাতারাও সগর্বে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন এইসব নীতিমালার প্রতি। আসলে সাফটা দিয়ে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর চেষ্টা কিংবা প্রসেনজিতদের ‘সম্প্রসারিত ইন্ডাস্ট্রি’ আইডিয়ার আরেক রূপ এই যৌথ প্রযোজনা। কলকাতার মুভির প্রতিটি গ্রামার মানার পাশাপাশি একটি বা দুইটি চরিত্রে বাংলাদেশিদের জায়গা দিলেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে আদর্শ যৌথ প্রযোজনার ছবি।
আগেও অনেক যৌথ প্রযোজনা হয়েছে,কিন্তু আধুনিক যৌথ প্রযোজনার জনক হলেন এসকে মুভিজের ‘আশোক ধানুকা’। ভারতে মারোয়াড়িদের ব্যবসায়ী ক্ষমতার ব্যাপক সুনাম। বলা হয়ে থাকে, মারোয়াড়িরা যে কোনো ব্যবসায় হাত দিয়েই রাজত্ব করতে পারে। বলে রাখা ভালো কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির মোহতা-সনি, ধানুকা কিংবা হিরো জিৎ— সবাই মাড়োয়াড়ি। এমনিতেই ধানুকা সাহেবের এই মার্কেটের উপর চোখ অনেক আগে থেকেই। কিন্তু যখন আরেক মারোয়াড়ি প্রতিষ্ঠান এসভিএফের কাছে সর্বস্ব হারাচ্ছেন তখনি অনন্য মামুনকে নিয়ে মাঠে নেমে গেলেন এই ইন্ডাস্ট্রি দখলের জন্য। নির্মিত হলো আমি শুধু চেয়েছি তোমায়। এরপর সাথী হিসেবে পেলেন জাজ মাল্টিমিডিয়াকে যারা কলকাতায় কোণঠাসা এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে পুনর্বাসন এবং ভারতের হাতে এই ইন্ডাস্ট্রিকে তুলে দিতে যেন একরকম প্রতিজ্ঞাই করে ফেলল। তারপর একে একে আসছে প্রায় কলকাতার সবকয়টা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তার মাঝখানে জাতি দেখে ফেলল আরো বড় কিছু সার্কাস—
– শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে কাফনের কাপড় পড়ে নেমে গেলেন জনৈক সুপারস্টার। সভাপতিও হলেন। এখন তো সভাপতি হিসেবে যৌথ প্রযোজনায় দেশিয় শিল্পী ঢুকানো উনার দায়িত্ব। তাই নিজেই নেমে গেলেন। তারপর জাতি দেখল কিভাবে রাতারাতি যৌথ প্রতারণা শুদ্ধ হয়ে গেল। এরপর শুরু হল সেই সুপারস্টারের দেশিয় ছবিকে ঝুলিয়ে ওপার বাংলার ছবিকে শিডিউল দেওয়ার মহোৎসব। নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিলেন কলকাতার সবকটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি এসভিএফের বাংলাদেশি কো-অর্ডিনেটরের কাজ করে যাচ্ছেন।
– মাঝখানে নদীর অনেক জল গড়াল এবং আরেকটি নির্বাচন আসল। নতুন সভাপতি প্রার্থীও আগের জনের মতো যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে গলা ফাটালেন। তারপর গ্রামার অনুযায়ী তিনিও নির্বাচিত হলেন এবং নতুন যৌথ প্রযোজনায় চুক্তিবদ্ধ হলেন। অতঃপর তার মুখ থেকে নিঃসৃত হল অমর কবিতাখনি, ‘আমি আর শাকিব মানেইতো ৭০%’।
আসলে সবাই নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়ায় ব্যস্ত। এভাবে হয়তো কিছু মানুষ লাভবান হচ্ছে কিন্তু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি। এই ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যবহার করে কলকাতা বাঁচিয়ে রাখছে তাদের ‘রিমেক নির্ভর কমার্শিয়াল’ ফিল্মকে। আবার জাগিয়ে তুলছে তাদের মৃতপ্রায় প্রোডাকশন হাউজগুলোকে। পুনর্বাসিত করছে তাদের ‘পড়তি সাবেক সুপারস্টার’ জিৎ কিংবা ‘ফ্লপ হিরো’ ওম, অঙ্কুশ, ইয়াশদের। আগাছার মতো সবটা শুষে খাচ্ছে আর আমাদের স্বপ্নগুলোর কেবল খোলস পড়ে থাকছে। নতুন করে আন্দোলন হওয়ায় বস টু বা নবাব আটকে যাওয়াটা হয়তো সুবাতাস মনে হচ্ছিল। কিন্তু নতুন খবর হলো, ‘নাকে খত দিয়ে ওই ছবিগুলোর প্রযোজক ভবিষ্যতের ওয়াদা করে ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন।’ আসলে তাদের লবিং এতটাই শক্তিশালী যে কোনোকিছুই তাদের আটকাতে পারবে না এবং তাই ভবিষ্যতেও ঠিক হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই।
তাদের অজুহাত তারা হল বাঁচাবে। এতটাই তারা হল বাঁচিয়েছে যে, জাজ মাল্টিমিডিয়া যে হলে তাদের ব্র্যান্ডের গুনগান গেয়ে শর্টফিল্মের শুট করেছে সেই হলটিই বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও যদি কয়েকটি হল বেঁচে যায় সেগুলো হবে কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির বর্ধিত অংশ। নিজের গা ঝাড়তে ঝাড়তে এভাবেই নিঃস্ব হবে ঢাকার ইন্ডাস্ট্রি।
দুঃখিত, কোনো আশার বাণী শোনা যাচ্ছে না। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যখন সমর্থন নিয়ে এই নৈরাজ্য চলতে থাকে তখন বাংলা চলচ্চিত্র ধ্বংসের নীরব সাক্ষী হওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।
মুমতাহিন হাবিব : চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক