Select Page

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচারণা-পরিবেশনা ও প্রেক্ষাগৃহ সংকট

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচারণা-পরিবেশনা ও প্রেক্ষাগৃহ সংকট

বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। কিন্তু সেই পরিমাণ আয় করতে পারছে না বলে দাবী করে দুই-একটা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সকলেই। কেন এমনটা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর সকলের জানা। গল্পের মান, সব ছবিতে প্রায় একই অভিনয়শিল্পী, নির্দেশনায় ভুল-ত্রুটি, নিম্নমানের ভিএফএক্সসহ আরো অনেক কারণ রয়েছে। তারপরও প্রতি বছর কিছু ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সমালোচকরা সেই ছবিগুলোর প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়। সেই ছবিগুলোও বাজেটের দৌড় অতিক্রম করতে পারে না। আর এই সফল না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ চলচ্চিত্রের প্রচারণা ও বিতরণের সংকট।

প্রথাগতভাবে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রের প্রচারণা হিসেবে যেসব প্রক্রিয়া দেখতে পাই তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— প্রেক্ষাগৃহে ও অধুনা ইউটিউবে ছবির ট্রেলার; টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র ও বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন; বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের প্রচারণামূলক সাক্ষাৎকার। এই বিষয়সমূহের ফলে দর্শকের মাঝে আগ্রহের সঞ্চার হয় এবং তারা ছবি দেখার জন্য টাকা খরচ করে টিকিট কেনেন। নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির কিউরেটর বারবারা কোহেন-স্ট্র্যাটিনার বলেন, ‘দর্শককে চলচ্চিত্র দেখতে আগ্রহী করতে যে বিষয়সমূহে ব্যবহার দেখা যায় তা চলচ্চিত্রের বিকাশের শুরুর সময়েও ব্যবহৃত হতো এবং তা উন্নততর হয়ে এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে।’ অর্থাৎ এই প্রচারণার কাজগুলো চলচ্চিত্র শিল্প শুরুর সময় থেকেই বিদ্যমান।

আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে প্রচারণার এই সকল কৌশল দেখা গেলেও তার পরিমাণ খুবই সীমিত। দুই একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকেই এই ধরনের প্রচারণা করতে দেখা যায়। দেশে প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানের হিসাব কষতে গেলে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম আগে আসে তার মধ্যে রয়েছে— ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, জাজ মাল্টিমিডিয়া, মনসুন ফিল্মস, টাইগার মিডিয়া লিমিটেড ও অমি বনি কথাচিত্র। এছাড়া আরো নামে-বেনামে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো দুই-একটা চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে ঠিকমত প্রচারণা ও পরিবেশনা করতে না পেরে এবং মূলধন তুলতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ একসময় এই ইন্ড্রাস্টিতে দাপটের সাথে চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেছে আলমগীর পিকচার্স, এস এস প্রডাকশন্স, পারভেজ ফিল্মস, চাষী চলচ্চিত্র, কাজী হায়াৎ ফিল্মস, সন্ধানী কথাচিত্র-সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। এখন আসি বর্তমানে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য দুটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার পরিবেশনা প্রসঙ্গে, তাহলে বোঝা যাবে এই লেখায় প্রচারণা ও পরিবেশনাকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছি।

জাজ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিতরণের স্লোগান নিয়ে ২০১২ সালে ভালোবাসার রঙ দিয়ে যাত্রা শুরু করে। ছবির প্রচারণার জন্য বেছে নেয় সোশ্যাল মিডিয়াকে। ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারে তাদের সরব উপস্থিতি রয়েছে, এমনকি একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও তৈরি করেছে। জাজের সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেট নিয়ে প্রতিনিয়ত তোলপাড় হয় সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটিতে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করেছে ৩০টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে দুই-একটা ব্যতীত বাকি সবগুলোই বিভিন্ন চলচ্চিত্রের অফিসিয়াল-আনঅফিসিয়াল পুনঃনির্মাণ। তারপরও ছবিগুলো ব্যবসাসফল হয়েছে প্রচারণা-সুষ্ঠু বিতরণের কারণে। এ তালিকায় রয়েছে ভালোবাসা আজকাল (২০১৩), পোড়ামন (২০১৩), অগ্নি (২০১৪), রোমিও বনাম জুলিয়েট (২০১৫), অগ্নি ২ (২০১৫), বাদশা দ্য ডন (২০১৬), শিকারি (২০১৬) ও রক্ত (২০১৬)।

তবে যৌথ প্রযোজনার নামে জাজ বাংলাদেশ থেকে নামমাত্র কলাকুশলী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে এমন অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। পরিচালনার পাশাপাশি ছবির কেন্দ্রীয় নারী ও পুরুষ দুই চরিত্রেই ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছে। আবার বাংলাদেশি কেন্দ্রীয় অভিনয়শিল্পী দুই-একজন থাকলে বাকি বেশির ভাগ কলাকুশলী ভারতীয় এমনটা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। শিকারিতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাকিব খান এবং একটি পার্শ্ব চরিত্রে অমিত হাসান ছাড়া বাকি সকল প্রধান অভিনয়শিল্পী, এমনকি কলাকুশলীরাও ভারতীয়। বাদশা দ্য ডন-এ দেখা যায় নুসরাত ফারিয়া ছাড়া বাকি অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও কলাকুশলীরা ভারতীয়। এতে প্রচারণায় তারা কিছু সুবিধাও পাচ্ছে। দর্শক যারা একই শিল্পীর মুখ দেখে হাঁপিয়ে যাচ্ছে তারা একসাথে দুই বাংলার শিল্পীদের কাজ দেখতে পারছে।

অন্যদিকে, আরেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ১৯৯০ এর দশকের শেষ হতে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানের নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় ৯০ ও ৩৬টি চলচ্চিত্রের স্বত্ব কিনেছে। ইমপ্রেসের চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট হল প্রথাগত অ্যাকশন বা সামাজিক অ্যাকশন গল্পের বাইরে গিয়ে নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণে বিনিয়োগ করে থাকে এবং তা সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের প্রযোজিত ও পরিবেশিত এরকম পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে কিত্তনখোলা (২০০০), জয়যাত্রা (২০০৪), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭), গহীনে শব্দ (২০১০), গেরিলা (২০১১), উত্তরের সুর (২০১২), মৃত্তিকা মায়া (২০১৩)। সবগুলো চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করলেও এর মধ্যে গেরিলা, ব্যাচেলরজালালের গল্প ছাড়া বাকি চলচ্চিত্রগুলো প্রেক্ষাগৃহে সপ্তাহখানেকের বেশি দেখা যায়নি।

মূলত টেলিভিশন চলচ্চিত্র (টেলিফিল্ম) নির্মাণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করলেও পরে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়। কিন্তু টেলিফিল্মের বাজেটে চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে প্রচারণায় তেমন গুরুত্ব দেয় না। এবং প্রদর্শনের জন্য প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে বেশি বেছে নেয় নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল আই-কে। ফলে যেসব দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ভালো চলচ্চিত্র দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন তারা টেলিভিশন সেটে দেখে নেয় সেসব চলচ্চিত্র। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনে অতিষ্ঠ হয়ে দেখেই না। ফলে সেই চলচ্চিত্রগুলো অদেখাই থেকে যায়। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহের বাইরে প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তবে কেন এই চলচ্চিত্রগুলো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না দিয়ে টেলিভিশনে প্রিমিয়ার হয়! এই ঈদুল ফিতরের দিনেও (২০১৭ সালে) দেখা যাবে আবু সাইয়ীদ পরিচালিত ড্রেসিং টেবিল। ঈদের দিন ব্যস্ততার ফাঁকে ও বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ধৈর্য্য ধরে কতজন দর্শক ছবিটি দেখবে এটা নিয়ে তারা কি কখনো ভেবেছেন? হয়তো না। ঈদে ব্যস্ত মানুষজন কিছু সময় পায় তা তারা আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের দিতে চায়, হৈ-হুল্লোড় করে, একসাথে সিনেমায় যায়। ঘরে বসে সিনেমা দেখা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। টেলিভিশনে প্রিমিয়ার হোক তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু তার আগে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হোক এটাই দর্শকদের দাবী।

এরই মধ্যে আবার সম্প্রতি (দেশের) প্রথাগত বাণিজ্যিক ধারা থেকে ভিন্ন চলচ্চিত্র আয়নাবাজি প্রচারণা ও বিতরণের জোরে টিকে যায় এবং তুলনামূলক ভালো ব্যবসা করে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের তালিকায় তিনে অবস্থান করে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীর নির্দেশনা, ভালো গল্প ও অভিনয়, চিত্রগ্রহণ। এই বিষয়গুলোই চলচ্চিত্রটিকে ব্যবসাসফল করতে যথেষ্ট ছিল। তবু অমিতাভ ও তার ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কন্টেন্ট ম্যাটার্স ও হাফ স্টপ ডাউন নির্মাণ বাজেটের প্রায় সমপরিমাণ অর্থ প্রচারণায় খরচ করেছে। ফলে প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় ৫টি-সহ সারাদেশে মোট ২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে প্রচারণা ও দর্শকদের আগ্রহে পরের সপ্তাহগুলোতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এমনটি আগে ঘটেছিল ২০০৯ সালে মনপুরা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। উক্ত ছবিটিও মাত্র চারটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকদের আগ্রহে সারাদেশে ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে টানা সাত সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়। যদিও মনপুরা-র ক্ষেত্রে ছবির প্রচারণার চেয়ে গল্পই মুখ্য ছিল, আয়নাবাজি-তে দুটির সংমিশ্রণ ছিল। তাছাড়া আয়নাবাজি-র প্রচারণা লক্ষ্য করা যায় তাদের টেলিভিশন সিরিজেও। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মাঠেও তাদের প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন দেখা যায়।

একই বছর মুক্তি পায় তৌকীর আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র অজ্ঞাতনামা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত ছবিটি নিজের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং সপ্তাহ দুয়েক চলার পরই প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায়। পরে ইউটিউবে ছবিটি আনঅফিশিয়ালি প্রকাশ হলে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাহবা দেয় তৌকীরের পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয়ের এবং প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখতে না পারায় আফসোস করে। এখানেও ব্যর্থতার দায়ভার বর্তায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের উপর। ছবিটির প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চটুকু দেয়নি বা তারা দর্শকদের কথা না ভেবে শুধু মূলধন তুলেও কাজ সমাধা করে ফেলে। আবার বলছি তাদের নির্মাণ বাজেট কম এবং এ কারণে সারাদেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের খরচ না করে কয়েকটি হলেই ছবি মুক্তি দিয়ে মূলধন তুলে প্রেক্ষাগৃহ থেকে ছবি নামিয়ে দেয়। আর বিভিন্ন উৎসবের পুরস্কার তো আছেই। তাতেই হয়ে যায়। এ থেকে দেখা যায় শুধু ভালো গল্প হলেই হবে না, তা দর্শকদের কাছে পৌঁছাতেও হবে।

ভালো গল্পের ছবি নির্মিত হলেও ছবি বিতরণের জন্য পিছিয়ে যায়। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও হল মালিকদের মাঝে রয়েছে বুকিং এজেন্ট নামে মধ্যস্থতাকারী। মূলত তারাই নির্ধারণ করে কোন ছবি চলবে, কোন ছবি চলবে না। আর তাদের পছন্দ থাকে অ্যাকশন-রোমান্টিক ধরনের গল্পে। ফলে ভিন্নধারার ভালো গল্পের চলচ্চিত্রগুলো তেমন একটা হল পায় না এবং মুনাফা অর্জন করতে পারে না।

ঢাকার বাইরের হল মালিকরা পুরোপুরি বুকিং এজেন্টদের উপর নির্ভরশীল, ঠিক তেমনি ছবির প্রযোজকরাও। এই সুযোগে তারা তাদের খুশিমত চার্জ নেয় প্রযোজকদের কাছ থেকে। প্রযোজক ও হল মালিকদের মধ্যে টেবিল কালেকশনের একটা অংশ (৫-১০%) হাতিয়ে নেয় এই এজেন্টরা। পাশাপাশি ছবি পাইয়ে দেওয়ার জন্য হল মালিকদের থেকেও নেট আয়ের একটা অংশ নিয়ে থাকে। এতে করে হল মালিকরাও প্রযোজকদের প্রকৃত আয়ের চেয়ে কম দেখান ও পাওনা পরিশোধ নিয়ে হেলাফেলা করেন। হয়ত এসব ঝামেলায় না জড়ানোর জন্য ইমপ্রেস তাদের ছবি টেলিভিশনে প্রিমিয়ার করে থাকে।

বিতরণের এহেন সমস্যার পর চলচ্চিত্র প্রযোজকদের মুনাফা না ওঠার আরেকটি কারণ হল প্রেক্ষাগৃহ সংকট ও এতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব। ২০০০ সালে দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০০ এবং ২০১০ এর শেষে এসে তা দাড়ায় ৭০০। বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে ৩০০টির মতো, বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে ৩১৭টি (সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন)। এই কমার প্রথম কারণটা সকলে জানা, অশ্লীলতা। যার কারণে দর্শক হলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং হলগুলোও বন্ধ হতে থাকে। আর দ্বিতীয় কমার কারণ বিতরণ ব্যবস্থায় উপরিউল্লেখিত বিষয়সমূহ। যার ফলে ছবি না পেয়ে দিনের পর দিন লোকসান দেয় হল মালিকরা আর বন্ধ হয়ে যায় হলগুলো।

যাই হোক, ৩০০ হলের মধ্যে সারা বছর চলে ২০০-২৫০টি এবং ঈদে চলে সবগুলো। এর মধ্যে সিনেপ্লেক্স আর ঢাকার কিছু হলসহ ৭০-৮০টি হল ছাড়া বাকিগুলোর অবস্থা বেহাল। প্রজেকশন, সাউন্ড সিস্টেম, পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ দর্শকদের। এখানেও প্রসঙ্গত আসে জাজ মাল্টিমিডিয়ার নাম। প্রতিষ্ঠানটি চলচ্চিত্র ইন্ড্রাস্টিতে আসার পর প্রায় ১০০ এর উপর হলে প্রজেকটর ও সাউন্ড সিস্টেম বসিয়েছে। ফলে সেসব হলের দর্শকরা তুলনামূলক আগের চেয়ে ভালোভাবে ছবি দেখছে, তাদের নিজস্ব সার্ভারে ছবি প্রদর্শনের জন্য কমেছে পাইরেসি। কিন্তু আবার প্রজেকটর ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের জন্য এই হলগুলো জিম্মি হয়ে গেছে জাজের কাছে এবং বড় উপলক্ষগুলোতে, যেমন; ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবসে তাদের বাইরে অন্য ছবি চলতে দেয় না।

একজন ভালো নির্মাতা ভালো ছবি নির্মাণ করলেই তার দায়িত্ব শেষ হয় না। তা দর্শককে জানাতে হবে, তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। অর্থাৎ তাকে একজন মার্কেটারও হতে হবে। আর দর্শকের কাছে চলচ্চিত্র পৌঁছে দিতে এর বিতরণ ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে। বিতরণ আরো স্বচ্ছ করতে বুকিং এজেন্ট প্রথা বাতিল, ই-টিকিটিং প্রথা চালু ও নির্দিষ্ট সার্ভার থেকে ছবি প্রদর্শন আবশ্যক। পাশাপাশি দরকার হলের সংস্কার। ডিজিটাল প্রজেকশন ও সাউন্ড সিস্টেমসহ মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণে কর মওকুফ (কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য); বিদ্যমান হলের প্রজেকশন, সাউন্ড সিস্টেম সংযোগ ও এগুলো সংস্থাপনে কর ছাড় এবং সিট, এসিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে গেছে। বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে পেতে এই কাজগুলো অতিদ্রুত করতে হবে।

মাহবুবুল হক ওয়াকিম : লেখক ও গবেষক


মন্তব্য করুন