Select Page

কাজলের দিনরাত্রি: অনেকদিন পর মন ছুঁয়ে যাওয়া কনটেন্ট

কাজলের দিনরাত্রি: অনেকদিন পর মন ছুঁয়ে যাওয়া কনটেন্ট

‘কাজলের দিনরাত্রি’ নামে এর আগে মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস পড়েছিলাম। একই উপন্যাস অবলম্বনে প্রয়াত সজল খালেদের সিনেমা দেখেছিলাম। তারিন জাহান আর কিশোর অভিনয়শিল্পীরা দারুণ অভিনয় করেছিল। একই নামের কারণেই ভিকি জাহেদের নতুন টেলিফিল্ম দেখার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলাম।

দেখার পর কিছু মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম। বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরের কারণে অনেকেই সে সময় কাজটি মিস করে গেছেন। তবে এ বছরের প্রথম দিন ইউটিউবে আসার পর কাজটি অনেকেই দেখছেন, আলোচনা করছেন, মুগ্ধতার চাদরে ভাসাচ্ছেন টেলিফিল্ম।সংশ্লিষ্টদের। আমিও নতুন করে গতকাল আবারো দেখলাম ভিকি জাহেদ-মেহজাবীন চৌধুরীর সফল জুটির কাজ, সঙ্গে তৌসিফ মাহবুব, সামিয়া অথৈ।

ভণিতা না করেই সরাসরি বলি, অনেকদিন পর একটি বাংলা কনটেন্ট মন ছুঁয়ে গেল। গল্প, চিত্রনাট্য, নির্মাণ, সংলাপ, সংগীত সবকিছুই দুর্দান্ত। যদিও শেষ দৃশ্যে তৌসিফের চরিত্রের সিদ্ধান্তটি ছিল অবিশ্বাস্য, অদ্ভুত। এমনটি না হলেও হতো। ঐ একটি দৃশ্য ছাড়া পুরো টেলিফিল্মই নিখুঁত, সুন্দর। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ টেলিফিল্মের সবচেয়ে বড় হাইলাইট: শিল্পীদের অভিনয়। শিরীন আলম কী দারুণভাবে, বিশ্বাসযোগ্যভাবে মায়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারেন। রেস্তোরাঁর ম্যানেজার থেকে বখাটে প্রেমিক: সবাই কী সাবলীল।

সামিয়া অথৈ লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে সেরা-৩ হবার আগে থেকেই আমি তার মাঝে সম্ভাবনা দেখতে পাই। সেই ইভেন্টে নিজের জীবনের গল্প দিয়ে ইরেশ যাকেরের সাথে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য কনটেন্টে অভিনয় করেছিলেন অথৈ। সেই রাউন্ডে সর্বোচ্চ নম্বরও পেয়েছিলেন। তবে কেন জানি নাটকে ঠিক জ্বলে উঠছিলেন না তিনি। ‘কাজলের দিনরাত্রি’র পর আমার মনে হয়, অথৈকে নিয়ে সবাই নতুন করে ভাববেন।

তৌসিফ মাহবুব ‘কাজলের দিনরাত্রি’র সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ। প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি অভিব্যক্তি, সংলাপ প্রক্ষেপণ, পরিমিত অভিনয়ে চমকে দিয়েছেন তৌসিফ। এ এক নতুন তৌসিফ! মনোলগে তৌসিফের সংলাপ, তার উচ্চারণ, কণ্ঠের গভীরতা শুনে মনেই হচ্ছিলো না আমি তৌসিফকে শুনছি। অভিনয়ের প্রতি তৌসিফের সততা, মনোযোগ পূর্ণমাত্রায় উপস্থিত ছিল স্ক্রিনে। বিশেষ করে নারীকেন্দ্রিক গল্পের নায়ক হয়ে নিজের জায়গা বের করে আনার সাহস সবার থাকে না। তৌসিফ সে সাহস দেখিয়েছেন। ফল-ও পেয়েছেন। রেস্টুরেন্টের দৃশ্যে তৌসিফের সাবলীল অভিনয়, প্রতিটি সংলাপ যে কোনো দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।

‘কাজলের দিনরাত্রি’ টেলিফিল্মের ‘শো স্টপার’ অবশ্য ওয়ান অ্যান্ড অনলি মেহজাবীন চৌধুরী। ২০২১ সালে ‘চিরকাল আজ’ দেখার পর মনে হয়েছিল, ‘তিথি’র চেয়ে দুর্দান্ত চরিত্র মেহজাবীন কি আর সহজে পাবে? সমাজের নানা শ্রেণীর নানা বর্ণের নানা রূপের চরিত্রে মেহজাবীন এ ক’বছর নিজের প্রতিভার স্ফূরণ দেখিয়ে গেছেন। আর কি কিছু বাকি আছে? ‘কাজলের দিনরাত্রি’র ‘কাজল’ হয়ে মেহজাবীন বুঝিয়ে দিয়েছেন, sky is her limit. ৬০ মিনিটের এই টেলিফিল্মের প্রায় প্রতিটি দৃশ্যে মেহজাবীন। ‘কাজল’ চরিত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পুরো কাজটি। আর এই চরিত্রে মেহজাবীন একটু ‘অভিনয়’ করার চেষ্টা করলে বা অতি-অভিনয় করলে পুরো চরিত্রটিই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতো। কিন্তু অবিশ্বাস্য সংবেদনশীলতার মাধ্যমে মেহজাবীন ভুলিয়ে দিয়েছেন তিনি মেহজাবীন। তিনি হয়ে উঠেছেন একজন ‘কাজল’। ২৪ বছরের শরীরে ৮ বছরের কিশোরীকে ধারণ করার জন্য মেহজাবীন তার কণ্ঠ, শারীরিক ভাষা, অভিব্যক্তি সবকিছুতে পরিবর্তন এনেছেন। টিভি নাটকের তুলনায় সাহসী দৃশ্যেও অংশ নিয়েছেন। মেহজাবীনের অভিনয় একই সাথে দর্শকদের আনন্দ দেবে, আবার অন্যদিকে দর্শক কাঁদবে, ভাবনার জগতে হারিয়ে যাবে। হাজতে মেহজাবীন যখন হাত পা ছুঁড়ে কাঁদেন, শারীরিক যন্ত্রণায় কাতর হন কিংবা রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন, দেয়ালে ছবি আঁকেন, অন্য বাচ্চার জুতা দেখে প্রতিক্রিয়া দেখান-প্রায় প্রতিটি দৃশ্যেই ‘মেহজাবীন’ flawless.

ধন্যবাদ ভিকি জাহেদ ও ‘কাজলের দিনরাত্রি’ টিমকে এমন একটি কাজ উপহার দেয়ার জন্য।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র সমালোচক ও উপস্থাপক। মাছরাঙা টেলিভিশনে ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে কর্মরত।

মন্তব্য করুন