
কালের কণ্ঠ বর্জন করবেন তারা‘কাজ নেই, ফেসবুকে খই ভাজছেন তারকারা’ সংবাদের জেরে নায়িকাদের প্রতিবাদ
স্যোশাল মিডিয়ায় সরব থাকা কিছু নারী তারকাকে নিয়ে ‘কাজ নেই, ফেসবুকে খই ভাজছেন তারকারা’ সংবাদ ছেপেছিল কালের কণ্ঠ। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি তারা। তারকাদের একাংশ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে, তারা সামনে কালের কণ্ঠের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে না।

গতকাল প্রকাশিত খবরটি কালের কণ্ঠ অনলাইনে আজ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তারকাদের প্রতিবাদের মুখে খবর সরাতে বাধ্য হয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। তবে সংবাদ সরানোর বিষয়ে কোনো কারণ দেখানো হয়নি।
ওই খবরের মূল বিষয় হলো, ঢাকার শোবিজে খরা অবস্থা চলছে। কাজ না থাকায় তারকাদের বেশির ভাগ সময় কাটছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ও পোস্ট শেয়ার করে। তবে খবরটি সরিয়ে নেয়ায় এক উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা সম্ভব হলো না।
‘কাজ নেই, ফেসবুকে খই ভাজছেন তারকারা’ সংবাদটির প্রতিবাদে মেহজাবীন চৌধুরী, তাসনিয়া ফারিণ ও সাবিলা নূরকে ফেসবুকে সরব হতে দেখা গেছে।
মেহজাবীন চৌধুরী লেখেন, “একটি জাতীয় পত্রিকা হয়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিবর্তে কালেরকণ্ঠ ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সস্তা শিরোনাম তৈরি করেছে, যা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। সাংবাদিকতা আর হলুদ সাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখা প্রয়োজন, কিন্তু এই সংবাদে সেটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আমি সরাসরি প্রশ্ন রাখতে চাই:
১। আমার কাজ না করার প্রমাণ কোথায়? আপনার সূত্র কী? যেসব অভিনেত্রীর ছবি ব্যবহার করে ক্লিকবেইট বানানো হয়েছে, তাদের কারো সঙ্গে কি সরাসরি কথা বলেছেন?
২। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত প্ল্যাটফর্মে কী পোস্ট করব, তা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। আর সেটি নিয়ে বিচারমূলক মন্তব্য করা, বিশেষ করে একটি জাতীয় দৈনিকের পক্ষ থেকে, কেবলই পশ্চাৎপদ ও প্রাচীন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
৩। নিজেদের দেশের শিল্পীদের আক্রমণ ও অপমান করে, বিশেষ করে নারী শিল্পীদেরকে টার্গেট করে, আপনারা কি সত্যিই মনে করেন যে সঠিক কাজ করেছেন?
দর্শকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের পেশাগত দায়িত্বেরই একটি অংশ, এবং আমরা আন্তরিকভাবে এটি উপভোগ করি। কিন্তু কেউ যদি এটিকে এভাবে উপস্থাপন করে যে আমাদের কোনো কাজ নেই, তবে সেটি শুধু আমাদের শিল্পী হিসেবে নয়, আমাদের সেই দর্শকদের প্রতিও অপমান ।
সাংবাদিকতা হলো সত্য তুলে ধরা, সমাজকে সচেতন করা। হলুদ সাংবাদিকতা দিয়ে মানুষের চরিত্র হনন করা নয়।
যিনি এই প্রতিবেদনটি লিখেছেন তার নাম গোপন করা হলেও, পুরো প্রতিষ্ঠানের দায় থেকে কালেরকণ্ঠ কোনোভাবেই অব্যাহতি পাবে না। একটি জাতীয় দৈনিক হয়ে এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন নিউজ প্রকাশ করা শুধু প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদাকেই কলঙ্কিত করছে না, বরং পাঠকের বিশ্বাসকেও ধ্বংস করছে।
কালেরকণ্ঠ আমার শ্রদ্ধা হারিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আমি কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকব না।”
তাসনিয়া ফারিণ লেখেন, ‘আমরা আমাদের ভক্তদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন করতে ভালোবাসি ❤️ সেটা হোক শুটিং সেটে অথবা শুটিং এর বাইরে। এজন্য পোস্ট, instagram Story এগুলো সবসময় দেই। আজকে নতুন না।কিন্তু ভক্তদের সাথে হাসি ঠাট্টা করাকে যে কাজ নেই সেটা “কালের কন্ঠ” র মাধ্যমে প্রথম শুনলাম। আমাদের ভক্তদের সাথে ইন্টারাকশন “কাজ নেই” বলে দাবি করা শুধু আমাদের নয়—আমাদের ভক্তদের প্রতিও এক ধরনের অপমান।
শুধু আমি নই—মেহজাবিন চৌধুরী, সাবিলা নূরের মতো জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীদের অসংখ্য ভক্ত রয়েছেন।এই ধরনের সংবাদ তাদের জন্য অপমানজনক।
একটি জাতীয় দৈনিক হয়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বদলে কালেরকণ্ঠ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট নিয়ে সস্তা শিরোনাম তৈরি করেছে।এটি সাংবাদিকতা নয় বরং হলুদ সাংবাদিকতা।
আমি সরাসরি জানতে চাই—
১.আমার কাজ না করার প্রমাণ কোথায়?
২.যেসব অভিনেত্রীর ছবি ব্যবহার করে ক্লিকবেইট বানানো হয়েছে, তাদের কারো সঙ্গে কি সরাসরি কথা বলেছেন?
৩.এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে আসলে কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান?
সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব হলো সত্য তুলে ধরা, জনসচেতনতা তৈরি করা।
কাউকে হেয় করা বা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা নয়।
যিনি এই প্রতিবেদন লিখেছেন তার নাম গোপন রাখা হলেও দায় থেকে মুক্তি নেই পুরো প্রতিষ্ঠানের।
জাতীয় পত্রিকা হয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কনটেন্ট প্রকাশ কেবল কালেরকণ্ঠ-এর মর্যাদাকেই কলঙ্কিত করছে না, বরং পাঠকের বিশ্বাসকেও ধ্বংস করছে।
এই ঘটনায় কালেরকন্ঠ আমার শ্রদ্ধা হারিয়েছে।
ভবিষ্যতে আমি কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকব না।’
অন্যদিকে সাবিলা নূর বলেন, “সংবাদপত্রের কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে সত্যকে সামনে আনা, কিন্তু কালেরকন্ঠ যেভাবে ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টকে বিকৃত করে শিরোনামে পরিণত করেছে, তা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং গভীরভাবে হতাশাজনক। একটি জাতীয় দৈনিকের কাছ থেকে আমরা সচেতন সাংবাদিকতা আশা করলেও এখানে উল্টো সস্তা প্রচারণার দৃষ্টান্তই দেখলাম।
কোন তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে এই অভিযোগ প্রকাশিত হলো যে আমরা কাজ করছি না? প্রমাণ কোথায়? যেসব অভিনেত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই বা যোগাযোগ করা হয়েছিল কি? ব্যক্তিগত প্ল্যাটফর্মে কী লেখা হবে, তা সম্পূর্ণ শিল্পীর নিজস্ব ব্যাপার। আমরা আমাদের শুভানুধ্যায়ীদের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন করতে পছন্দ করি। এটিকে পেশাগত মাপকাঠি বানানো বা বিচার করা কেবলই ব্যাকওয়ার্ড মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
এই লেখার সঙ্গে যিনি জড়িত তার নাম লুকিয়ে রাখা হলেও, প্রতিষ্ঠান হিসেবে কালেরকন্ঠ এই দায় থেকে কোনোভাবেই রেহাই পেতে পারে না। এ ধরনের দায়িত্বহীন ও মানহানিকর নিউজ প্রকাশ তাদের মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে অপূরণীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এই ঘটনায় কালেরকণ্ঠ আমার চোখে সমস্ত সম্মান হারিয়েছে। ভবিষ্যতে আমি কখনোই এই পত্রিকার সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত থাকার প্রয়োজন বোধ করব না।”