Select Page

এইভাবে বোধকরি এই গল্প কোন দেশীয় পরিচালক বলেননি

এইভাবে বোধকরি এই গল্প কোন দেশীয় পরিচালক বলেননি

একটি সিনেমাতে আমি সবার আগে যা খুঁজি, সেটি হচ্ছে নির্মাতার সততা। শুনলে হয়ত অনেকের হজমে কষ্ট হতে পারে, জাস্ট এই একটা কারণে রোহিত শেঠিকে আমার ভাল্লাগে কারণ নিজের ইন্টারভিউতে তিনি স্বীকার করে নেন- আমি এন্টারটেইনিং সিনেমা বানাতেই আসছি, আমি গাড়ি উড়াতেই আসছি। লাঞ্চবক্স টাইপ সিনেমা আমার খুব পছন্দের হলেও আমার সেটা বানানোর সামর্থ্য নেই, আমি সেটাই বানাই যেটাতে আমি বিশ্বাস করি।

বলা বাহুল্য, অনেক সিনেমাতেই আমি নির্মাতার সততা পাইনা। দেশীয় সিনেমার কথা বললে সেই পাওয়ার পরিমাণটা সম্ভবত সবচেয়ে কম। অনেকদিন পর সেই কম পরিমাণটা কিছুটা বাড়ল একটি বাংলাদেশি সিনেমা দেখে যার নাম- কাঠবিড়ালি। পরিচালনা করেছেন নিয়ামুল মুক্তা।

সিনেমার ফার্স্ট হাফ দেখে ভাবছিলাম গ্রামের সহজ সরল একটি প্রেমের গল্প নিয়েই শেষ হবে সিনেমাটি। সেকেন্ড হাফে হুট করে গল্প প্রবেশ করল রহস্য-থ্রিলার জোনে। আর ফিনিশিং অনেকটাই অপ্রত্যাশিত! এই গল্প গ্রামে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, তবে এইভাবে এই গল্প বোধকরি এর আগে কোন দেশীয় পরিচালক বলেননি। এখানেই কাঠবিড়ালি হয়ে ওঠে আলাদা সিনেমা, একান্তই নিয়ামুল মুক্তার নিজের সিনেমা। আর নিয়ামুল মুক্তা হয়ে ওঠেন একজন সৎ নির্মাতা।

সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে কলাকুশলী প্রত্যেকের প্রাণবন্ত অভিনয়! স্পর্শিয়া, শাওন, সজিব, হিল্লোলদা- সবাই চমৎকার। লিড রোলে অভিনয় করেছে নিজের ক্যাম্পাসের ছোট ভাই আবির। জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে পড়তে মুক্তমঞ্চে আমি আবিরের অভিনীত মঞ্চ নাটক দেখে মুগ্ধ হতাম, আর আজ সে নিজের প্রথম সিনেমা দিয়ে আমাকে মুগ্ধ করল। কে বলবে এটা তার প্রথম সিনেমাতে অভিনয়? সিনেমা শেষে মনে হচ্ছিল, লিড রোলে আবিরই পারফেক্ট। গ্রামের লোকেশন চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে এই সিনেমাতে। এরিয়েল শটগুলো চমৎকার ছিল।গানগুলো খুব শ্রুতিমধুর, মাটির গন্ধ আছে। কালার গ্রেডিং মনঃপুত হয় নি।

নিয়ামুল মুক্তা এর আগে কোন নাটক, শর্টফিল্ম বানাননি। রেদোয়ান রনির এডি ছিলেন। অনেকদিন কাজের পর শুরুতেই সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন- এটা শোনার পর রেদোয়ান রনি শুরুতেই ‘না’ করেছিলেন। গুরুর কথা না শুনে ২০১৭ এর মার্চে গোপনে নিজের গ্রামে এই সিনেমার শুটিং শুরু করেন মুক্তা। এরপরে একবার টাকা শেষ হয়, শুটিং বন্ধ হয়। এরপরে আবার টাকা জমানো, আবার অল্প করে শুটিং আর অবশেষে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তি! এতটা সময় হাল ছেড়ে না দিয়ে এই যে নিজের গল্পটাকে নিজের মত করে বলে যাওয়ার যে যুদ্ধ, সেটি পর্দায় দর্শক হিসেবে দেখতে পেয়ে তৃপ্তি লাভ করেছি। নিঃসন্দেহে এই যুদ্ধে মুক্তা জয়ী। আশার কথা হচ্ছে- খুব শীঘ্রই তিনি তার দ্বিতীয় সিনেমার কাজ শুরু করবেন। আশা করি এবার আগের চেয়ে একটু হলেও বেশি বাজেট পাওয়া একজন প্রযোজককে নিয়ে তিনি নিজের গল্পকে আরও চমৎকারভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরবেন!

কাঠবিড়ালি দর্শক হিসেবে আপনার সময় আর অর্থ ডিজার্ভ করে। বছরের শুরুতে এমন চমৎকার একটি সিনেমা উপহার দেয়ার জন্য কাঠবিড়ালি টিমকে অভিনন্দন!


মন্তব্য করুন