কারাগার: এখন পর্যন্ত ঢাকার সবচেয়ে পরিশীলিত ওয়েব সিরিজ!
‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজের জন্য প্রথমে ধন্যবাদ দিতে হয় কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ সব একই হাতে যিনি সামলিয়েছেন; সেই নেয়ামতউল্লাহ মাসুম, সঙ্গে নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী। এই দুজন মিলে গল্পকে যেভাবে খুঁটিনাটি বিষয়সহ ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়েছেন তাতে সহজবোধ্য হয়েছে, বিশেষ করে শেষের ক্ল্যাইম্যাক্সে যেই রহস্য দেখানো হয়েছে বা যেটাকে ঘিরে এই পুরো সিরিজ, তার জন্য আরো বিশেষত্ব লাভ করেছে।
এই বিষয় নিয়ে তরুণ প্রজন্ম কাজ করেছে এত বড় পরিসরে, অবশ্যই ভালো লাগার ব্যাপার।
কারিগরি দিক থেকে এই সিরিজ বেশ উন্নত। চিত্রগ্রাহক বরকত হোসেন পলাশ এখন ওটিটি সিরিজের জন্য নিয়মিত মুখ, বেশ ভালো করেছে। রুসলান রেহমানের করা আবহ সংগীত আরো উন্মাদনা বাড়িয়েছে। কিছু পর্ব দীর্ঘ হলেও সালেহ সোবহান অনীমের সম্পাদনা বেশ ভালো। ধন্যবাদ দিতে হয়, শিল্প নির্দেশক নাঈমা জাহানকে। নির্মাণের ভার শাওকী শুরু থেকেই পরিণত, এটায় আরো অভিজ্ঞ হলো।
অভিনয়ের কথা বললে মুখ্য চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী আরেকবার নিজেকেই যেন চ্যালেঞ্জ জানালেন। এক ফোঁটা কথা না বলে যেভাবে নীরব অভিব্যক্তি দিয়ে প্রকাশ করলেন, মুগ্ধ করার মতো। ওটিটি প্লাটফর্ম অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারকে পুনর্জন্ম দিয়েছে, এখন সেটার সঠিকভাবেই বিকাশ লাভ করছে, এখানেও তাই। বেশ ভালো করেছেন।
তাসনিয়া ফারিণ খুব অল্প সময়েই বড় পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেয়ে যাচ্ছেন, সেই তুলনায় অভিনয় প্রতিভা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও মন্দ বলা যায় না। তার চরিত্রটা এই সিরিজের অন্যতম মূলস্তম্ভ। ইন্তেখাব দিনারের বন্ধুর চরিত্রে নাঈমকে দেখে প্রথমে হোঁচট খেলেও তিনি অভিনয় ভালো করেছেন, আগের থেকে বেশ প্রাণবন্ত হয়েছেন।
আফজাল হোসেন যতক্ষণ পর্দায় ছিলেন ততক্ষণই অন্যমাত্রা পেয়েছে, ভেবেছিলাম আরো দেখতে পাবো। এছাড়া বিজরী বরকতউল্লাহকে অনেকদিন বাদে অভিনয়ে দেখলাম, ভালো অভিনয় করেছেন এ কে আজাদ সেতু। অশোক বেপারীর সাথে নতুন অভিনেতা আব্দুল্লাহ আল সেন্টু, পার্থ শেখ, শাহাদাত শিশির, জিসান, ফারহানা হামিদ, মাঈন হাসানসহ বাকিরা সবাই যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। এই কয়েকজনকে উল্লেখ্য করতেই হয়। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়কে সেভাবে পাওয়া যায়নি, বরং স্বল্প সময়ে জাহিদ হোসেন শোভনকে বেশি শক্তিশালী লেগেছে। আসলে এক ঝাঁক অভিনয়শিল্পীর মিলনমেলা বসেছিল। আরেকজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী আছেন, তবে তার প্রসঙ্গ উহ্য থাকুক।
কারাগার ভালোভাবে নির্মিত সিরিজ, তবে এর মাঝেও কিছু ত্রুটি আছে। চাইলেই কিছু পর্ব আরো ঘষেমেজে গতিশীল করা যেত, আরো কিছু রহস্য উন্মোচন করা যেত। মূল কয়েদী সংখ্যা থেকে খুবই কম দেখানো হয়েছিল যেটা চোখে লেগেছে।
‘কারাগার’-এর গল্প গড়ে উঠেছে কারারক্ষীরা এক রাতে এক কয়েদীকে খুঁজে পায়, যে দাবি করে সে মীরজাফরকে খুন করে। ২৫০ বছর ধরে বেঁচে আছে, যেটা অসম্ভব। এই রহস্যময় কয়েদীর জট খুলতেই মোট সাত পর্বের এই আয়োজন। তবে এই গল্প আমাদের দেশের অনেক পরিচিত ঘটনা মনে করিয়ে দিতে পারে। বাকিটা দ্বিতীয় অংশ পর্যন্ত অপেক্ষা, তবে যত দ্রুত সম্ভব।