কিল হিম: অ্যাকশন-থ্রিলারের অ্যাকশনে নেই বাজেট
বিজ্ঞান আশির্বাদ না অভিশাপ! সহজ উত্তর, যার জীবনে যেভাবে প্রভাব ফেলে। ‘কিল হিম’ সিনেমাটির শেষে যেহেতু সিকুয়েলের বার্তা দিয়ে দিয়েছে, কাজেই সিনেমাটিতে বিজ্ঞান আশির্বাদ না অভিশাপ হিসেবে এসেছে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ আপাতত নাই।
জলিলের সিনেমায় গানের সময় স্ক্রিন সব সময়ই জমজমাট থাকে। হিউজ অ্যারেঞ্জমেন্ট এবারও ছিল। তবে একটা কথা, ঈদের চাঁদে আকাশ আলোয় ভরে যায় না। গানের কথাটা ভুল ছিল।
সিনেমার গল্পটা কিন্তু ভালো। তবে অপরিচিত নয়। মাসালা ফিকশন হিসেবে ভালো। কিন্তু এত এত সুযোগ থাকার পরও ইমপেক্ট তৈরির আগেই দৃশ্যের পর দৃশ্য চলে যাওয়ায় টেনশন তৈরি হয়নি। যা হওয়া জরুরি ছিল। বিজ্ঞান ও মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোপন গবেষণার ব্যবহার হিসেবে বিষয়বস্তু অবশ্যই ধামাকা ছিল।
বেশ কিছু চরিত্রে এলেও সেগুলোর কোনো পরিণতি ছিল না। হয়ত পরের পর্বে সেসব থাকবে। তবে সিনেমার শুরুটা আকর্ষণীয় ছিল। এগিয়ে যাচ্ছিলো ভালোভাবেই। যেখানে এসে জমে ক্ষীর হবার কথা, সেখানেই ধাক্কাটা খেয়েছে। তবু শেষ পর্যন্ত গতি ধরে রাখার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
‘কিল হিম’-এ নাম না জানা নতুন একটি মেয়ে চোখে পড়লো। আপাতত হাফ নায়িকা বলা যায় তাকে। বেশ ভালো অভিনয় করেছে। আলাদাভাবে তার পারফরমেন্সকে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবো। অনন্ত জলিলের অভিনয় আগের চেয়ে ভালো ছিল। তবে ‘দিন দ্য ডে’কে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। অন্যদিকে ডাইনীরূপী (চোখে-মুখে সে ভাবটা ধরার চেষ্টা করেছিল ভিলেন হিসেবে) বর্ষার এক্সপ্রেশন ভালো দিয়েছে। দেখলেই মেজাজ চড়ে যাবে। মিশা সওদাগর আছেন তার মতো। গত ২০ বছর ধরে একই রকম। সৌভাগ্যক্রমে দুই-একটা (ছুঁয়ে দিলে মন, স্বপ্নযাত্রা) ব্যতিক্রম বা দিলে মাসালা সিনেমায় কেউ তাকে বদলানোর বা নতুন কিছু করাবার চেষ্টা করেনি।
সিনেমাটি বেশ গতিশীল হলেও ভয়াবহ দুর্বলতা রয়েছে ফাইটিংয়ে। অনেক সস্তা সিনেমাতেও এত দুর্বল ফাইট থাকে না। একটা হত্যাকাণ্ড দেখে যখন বলা হয়, ‘দেখে মনে হচ্ছে মানুষ না, কোনো জানোয়ার হত্যা করেছে’; তার মানে সেই দৃশ্যটা সাউন্ডসহ দৃশ্যায়নে কতটা জমজমাট হওয়ার কথা! অথচ তার কিছুই ছিল না।
অন্যদিকে সিনেমাটির সবচেয়ে বড় অপচয়ের নাম রুবেল। তার যে পরিচয়টা সামনে আনা হয়, তার কিছুই দৃশ্যায়নে ছিল না। রুবেলের পরিবর্তে এখানে যদু-মধু-কদুকে নিলেও কোনো প্রভাব পড়তো না। আর এটা অবশ্যই অনেক বড় অভিযোগ। কারণ রুবেলের মতো পাওয়ারফুল একজন অভিনেতা ও ফাইটারের একভাগও ব্যবহার করেননি পরিচালক। সেটা গল্প ও চিত্রনাট্যের দুর্বলতাকে সামনে আনে। রুবেল-জলিলকে ব্যবহার করে মাঝের ৩০ মিনিট খেলতে পারলে সিনেমাটি বহু হিসেবনিকেশ পাল্টে দিতে পারতো।
অভিজ্ঞ প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল, পরিচালনা করতে এসে যে ব্যর্থ হয়েছেন সেটা বলার সুযোগ নাই। তবে সস্তা ও অতিকথন দর্শকদের মাঝে অবশ্যই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে কিছুটা হলেও। দুর্বলতা কাটিয়ে আগামীতে আরো জমজমাট সিনেমার উপহার দিবেন, সেই প্রত্যাশা।