কেমন আছেন অঞ্জু ঘোষ?
অঞ্জু ঘোষ বাংলাদেশ ছেড়েছেন দেড় দশকের বেশি হয়ে গেল। এখনো তাকে নিয়ে সিনেমোদিদের কৌতুহলের শেষ নেই। এবার তাদের তৃপ্ত করল মানবজমিন। জনপ্রিয় পত্রিকাটির জন্য কলকাতা থেকে ফিরে অঞ্জুকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন মুজাহিদ সামিউল্লাহ।
রোজিনা, চম্পার জনপ্রিয়তার সময়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন যাত্রা দুনিয়ায় সম্রাজ্ঞী অঞ্জু। প্রথম সিনেমা এফ কবির চৌধুরীর ‘সওদাগর’। এরপর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’সহ অনেক হিট সিনেমা উপহার দেওয়া এ নায়িকা ১৬ বছর ধরে আছেন কলকাতায়।
কলকাতায় ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ রিমেকের সঙ্গে একইদিন রিলিজ হয় অমিতাভের ‘হাম’। কিন্তু ‘হাম’ ফ্লপ করে আর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। সে সুবাদে কলকাতার ফিল্মে নিজেকে সঁপে দেন অঞ্জু। এখন অবশ্য সেদিন নেই।
বাংলাদেশের মানুষের এখনো আগ্রহ আছে অঞ্জুর প্রতি। মানব জমিন প্রতিবেদকের লেখা থেকেই স্পষ্ট— ‘কলকাতার সল্ট লেকের নিজ বাসায় এক সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ (অঞ্জু) জানালেন আমাকে। আমিও সেখানে গিয়ে তৃষ্ণার্ত চোখ নিয়ে বিশাল ড্রইং রুমে অপেক্ষায় কখন অনজু দিদিকে দেখবো। অপেক্ষার অবসান হলো। দরজা ঠেলে কালো-লাল সালোয়ার-কামিজ পরা সেই মিষ্টি হাসি নিয়ে সামনে এসে বসলেন। কুশলবিনিময়ের পালা শেষ করে হেসে বললেন, তুমি তো অনেক বয়সে ছোট। এরপর আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। কিন্তু মজার বিষয়, ধীরে ধীরে যখন আমার মুখে তার অতীতের এদেশে অভিনয় জীবনের কথা শুনলেন, অবাক হলেন।’
অঞ্জু জানতে চাইলেন ববিতা, কবরী, শাবানা, চম্পা, রোজিনা, ওয়াসিম, রাজ্জাক, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, মাহমুদ কলির কথা। প্রয়াত অভিনেত্রী দিতির অকাল মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করলেন।
কেমন আছেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভালো থাকি কী করে। বাবা-মা দু’জনেই গত হয়েছেন বেশ কিছুদিন হলো। যেদিন মা’র শাঁখা ভাঙার দৃশ্য দেখলাম সেদিনের কষ্ট তোমাকে বোঝাতে পারবো না। এই কষ্টের রেশ কাটতে না কাটতেই হঠাৎ আমার পৃথিবী আমার সবকিছু মা- স্বর্গবাসী হলেন। আমার চারপাশ শূন্যতায় ছেয়ে গেল। এই যে তুমি আজ আমার সাক্ষাৎকার নিচ্ছো, ক্ষুদ্র এই অভিনেত্রী অনজুর সাফল্যের একমাত্র শক্তি ছিলেন আমার মা।’
বর্তমান নিয়ে অঞ্জু বলেন, ‘আমি জনপ্রিয়তা, রুপালি জগতের মোহ-সেই সব থেকে অনেক দূরে। পূজা অর্চনা করি, মাঝে মধ্যে জিমে যাই, ফুলের বাগানের পরিচর্যা করি, সময় কেটে যায়। সত্যি আর ভালো লাগে না এসব কিছু। কি লিখবে আমাকে নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের ছবি থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সময়টা অনেক বর্ণিল আমার। ঘুম নেই, সময় মতো নাওয়া-খাওয়া নেই। আজ কক্সবাজার তো কাল মানিকগঞ্জের ঝিটকা, আবার এফডিসি। চিত্রালীর বেলাল আমার ঘুমের ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলো, আওলাদ ছায়াছন্দে আমার হাঁটুর উপরে শাড়িপরা ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম করলো বাংলা চলচ্চিত্র অশ্লীল আগমন আরো কত কি?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার গার্ডিয়ান আহমেদ জামান চৌধুরী, হীরেন দে, ইমরুল শাহেদ সবার আশীর্বাদে আজকের এই অঞ্জুর জন্ম। শরীফ, আওলাদ এরা আমার বন্ধু। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র পর যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় প্রযোজক আমাকে এদেশে এনে একে ছবি তৈরি করতে থাকেন তখনকার হিট নায়ক তাপস পাল আর আমি জনপ্রিয় জুটি। পশ্চিমবঙ্গের যেখানেই যাই তাপস আর অঞ্জু। সে কি তুমুল জনপ্রিয়তা। এইচএমভি গোল্ডেন ডিস্ক দিয়ে সম্মানিত করলো আমাকে। সুখের খুব কাছাকাছি বোধহয় দুঃখ লুকিয়ে থাকে। আমার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কিছু লোক আমার বিরুদ্ধাচারণ শুরু করলো। যাকে আমরা ফিল্ম পলিটিক্স বলি। যাদেরকে বন্ধু ভাবতাম তারা আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেল। হঠাৎ আমি যেন আলো থেকে অন্ধকারে ছিটকে পড়লাম। একাকী হয়ে গেলাম। যে মা’কে ঘিরে আমার সবকিছু, সেই মা-ও হঠাৎ স্বর্গবাসী হলেন। আমি অসহায় হয়ে গেলাম। ঢাকায় যে অঞ্জু দিন-রাত শুটিং নিয়ে ব্যস্ত, কলকাতায় সেই অঞ্জু হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়লো। এটা যে একজন শিল্পীর জন্য কত কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক সেটা বোঝানোর মতো ভাষা, শব্দ মনে হয় পৃথিবীর কোনো ডিকশনারিতে নেই।’
ঢাকার কাছের মানুষদের সম্পর্কে বলেন, ‘রাজ্জাক ভাই, সৈয়দ শামসুল হক- এদের অসুস্থতা আমাকে ভাবায়, কষ্ট দেয়। চাষী ভাই, শিবলী ভাই, খোকন ভাই, বুলবুল ভাই, হান্নান ভাই এদের মৃত্যু আমাকে মর্মাহত করেছে।’
ওই সময় রোজিনা-অঞ্জু তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, ভাবলে কেমন লাগে? এ প্রশ্নে বলেন, ‘রোজিনা ম্যাডাম তো আমার অনেক সিনিয়র ছিলেন। সে কি চিত্রালী ও ছায়াছন্দে দু’জনকে নিয়ে লেখালেখি!’
তুমি সংসার সাজালে না কেন? অঞ্জু উত্তর, ‘কে বললো আমি সংসার সাজাইনি। এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকই আমার পরিবার।’
প্রতিবেদনটির জন্য আবারো মানবজমিনের কাছে কৃতজ্ঞতা।