ক্লাস টেনের সাইফের চরিত্রে মাস্টার্সের মাসুম রেজওয়ানের বাজিমাত
সম্প্রতি রিলিজ পাওয়া রিহান রহমান পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘নিখোঁজ’-এর অন্যতম চমক ছিল শিল্পী তালিকা। এর মাধ্যমে বেশ কয়েকজন দক্ষ ও শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রীর মাঝেও নিজের সহজাত অভিনয় দক্ষতা দিয়ে আলোচনায় এখন তরুণ অভিনেতা মাসুম রেজওয়ান। আফসানা মিমি, শতাব্দী ওয়াদুদ, খায়রুল বাসার, ইন্তেখাব দিনার, শ্যামল মাওলা, অর্চিতা স্পর্শিয়ার মতো তারকাদের পাশাপাশি তিনিও প্রশংসা পাচ্ছেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের এক কিশোর যে কিনা বাবা, মা এবং বড় বোনের খুব আদরের, লেখাপড়ায় ভালো, ক্রিকেট পাগল। আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা যেভাবে বড় হয় সেভাবেই বড় হয়ে উঠছিল কিন্তু একদিন সেই স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে। নিখোঁজ হয় তার বাবা, বাবার খোঁজ বের করতে মরিয়া বড় বোন, অনেক উত্তর না জানা প্রশ্ন নিয়ে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া মা সব মিলিয়ে পুরো পরিবারের সদস্যদের ওপর প্রভাব পড়ে। সেই সময় বাবার জন্য অপেক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যকের জীবনে নানা অঘটন দেখা যায়।
বাবা নিখোঁজ এই ঘটনা নিয়ে তার সহপাঠীর বাজে আচরণ তার জীবনে একটি ধাক্কার মতোই আসে। আস্তে আস্তে প্রাণবন্ত, চঞ্চল ছেলেটি নেশার জগতে ডুবে যেতে থাকে। বাবার একটা খবর পেতে মরিয়া বড় বোন ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে এই অন্ধকার জগৎ থেকে কিন্তু ভাই তখনই নিজেকে পরিবর্তন করে যখন মায়ের অসুস্থতার সময়ে ছেলে হিসেবে কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। একটা সময় পথ হারানো এই ছেলেটি সঠিক পথ খুঁজেও পায়৷ একজন উকিল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
‘নিখোঁজ’-এর গল্পে এই কিশোর ‘সাইফ’ চরিত্রেই অভিনয় করেছেন মাসুম রেজওয়ান। নিজের বয়সের সঙ্গে মিল না থাকলেও এই কিশোর চরিত্রে প্রাণ এনে দিয়েছেন মাসুম। আমাদের চেনা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জীবন যাপন, বন্ধু, নেশার জগতে পা বাড়ানোর মতো ভুল পদক্ষেপ বা সেখান থেকে ফিরে আবার নতুনভাবে শুরু করা সবকিছুই চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করলেন তিনি সেলুলয়েডে।
তবে আজ তার এই আলোচনায় আসা বা নজরে পড়ার বিষয়টির জন্য পুরোপুরি ক্রেডিট তিনি দিতে চান তার নির্মাতা এবং সহশিল্পীদের। মাসুম জানান, রিহান রহমান ভাইয়ার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ, কিন্তু ওনার এবং পুরো টিমের আমাকে শিখিয়ে দেওয়া, বুঝিয়ে দেওয়া বা চরিত্রে কীভাবে কন্টিউনিটি রেখে এগিয়ে যেতে হবে সেটা ধরিয়ে দেওয়া সবকিছুই আমি শিখেছি এই সিরিজের সেটে। আফসানা মিমি আপু, স্পর্শিয়া আপু, শিল্পী সরকার অপু ম্যাম, শতাব্দী ওয়াদুদ ভাই সবাই আমাকে সাহায্য করেছেন সাইফ চরিত্রে নিজের সেরাটা দিতে।
মাস্টার্স অধ্যয়নরত মাসুম রেজওয়ানের ক্লাস টেনের ছাত্র সাইফ হয়ে সেলুলয়েডে বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপনের জন্য কতটুকু কি প্রস্তুতি নিতে হয়েছে জানতে চাইলে মাসুম জানান, আমি ওজন কমিয়েছিলাম যাতে নিজেকে দেখতে একটু রোগা লাগে, সারা দিনে একবেলা খেতাম। মাথায় চুল অনেক লম্বা ছিলে সেটা ছোট করেছি যেমনটা স্কুলের ছাত্রের থাকে। আর বাকিটা আমার চেষ্টা, পরিশ্রম এবং সহ শিল্পীদের সাহায্যের মাধ্যমে হয়েছে। আমি আসলেই কৃতজ্ঞ এবং আনন্দিত যে, এই সিরিজে এত গুণী শিল্পীদের মাঝেও আমার কাজটা সকলের নজরে এসেছে।
এই কাজটা আমাকে অভিনয়ের প্রতি নতুন করে ভালোবাসা এনে দিয়েছে। তাই এখন যে কাজগুলো করছি সেগুলোতে আরও সতর্ক হয়েছি। ভালো কাজে নিজেকে দেখার লোভটা বাড়ছে। সামনে একটি সিনেমাতেও দেখা যাবে মাসুম রেজওয়ানকে। যদিও এখনই বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না তবে মাসুম নিশ্চিত করেছেন খুব শিগগিরই অফিশিয়াল ঘোষণা আসবে এই কাজটি নিয়ে। কথা চলছে বেশ কিছু ওয়েব কনটেন্ট নিয়েও সবকিছু ফাইনাল হলেই সবাইকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই তরুণ তুর্কি।
ওয়েবের কল্যাণে এখন কাজের পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে ভিন্নধর্মী কনটেন্ট এবং ব্যতিক্রমী চরিত্র নিয়ে নানা রকম কাজ করার সুযোগ। গল্পকার, নির্মাতা সঙ্গে শিল্পী এবং কলাকুশলীরাও এখন যার যার জায়গা থেকে ভিন্নধর্মী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এখন সিনিয়র, জুনিয়রসহ দক্ষ অভিনয়শিল্পীদের কাজ আলোচনায় আসছে। শুধু প্রবীণ নয় দক্ষ নবীনদের জন্য ওটিটি এক রকমের আশীর্বাদ হয়েই ধরা দিয়েছে। সামনের দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে এমনটাই চাওয়া বিনোদন প্রেমীদের। মাসুম রেজওয়ানের মতো আরও অনেক দক্ষ এবং সম্ভাবনাময় তরুণ এই মাধ্যমে নিজের চেষ্টা, ত্যাগ, পরিশ্রম এবং অভিনয়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা দিয়ে এগিয়ে যাবে অনেকটা দূর এই কামনা রইলো।