‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ নিয়ে অল্প কথা
রায়হান রাফী পরিচালিত ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ওয়েবফিল্মটি সম্প্রতি রিলিজ পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে। গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বা অভিনয়শিল্পীদের অনেক লেখা বা আলোচনা চোখে পড়েছে তাই সেই আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। তবে ভালোলাগার একটি বিষয় এবং দুজন গুনী অভিনেতাকে নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করার ইচ্ছা থেকেই এ লেখা।
প্রথম বিষয়টা হচ্ছে— বিনোদনের নতুন মাধ্যম এখন ওটিটি একথা অস্বীকার করার উপায় নাই। এটা যেমন সত্য তেমনি ওটিটি কল্যাণে এখন ব্যতিক্রমী গল্প, সংলাপ, চিত্রায়ণ এবং অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নতুনভাবে ভাবছেন আমাদের গল্পকার ও নির্মাতারা এটাও বাস্তব সত্য। এর একেবারেই তাজা উদাহরণ ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’।
আমাদের দেশে বাস্তবতার নিরিখে কাল্পনিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে পলিটিক্যাল ড্রামা ঘরানায় থ্রিলার বা সাসপেন্স নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। ১ ঘন্টা ৫৩ মিনিট ব্যাপ্তির এই কাজ বিরক্তি আনবে না, পর্দায় দৃষ্টি আটকে থাকতে বাধ্য করবে— বিশেষ করে শেষের একঘন্টা তো অবাক বিস্ময় আর একের পর এক ধাক্কায় নাজেহাল অবস্থা হবার জোগাড়। শেষ মিনিট পর্যন্ত টুইস্টের যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন নির্মাতা রাফী তা প্রশংসার যোগ্য।
ফজলুর রহমান বাবু ও তমা মির্জা তাদের অভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। তাদের দুজনকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে গল্প, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্ক্রিনটাইম বেশি ছিল এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা দুজনই একটা লেভেল ধরে রেখেছেন পুরো সময়জুড়ে। বিশেষ করে ফজলুর রহমান বাবুর যে এখনো অনেক কিছু দেবার বাকী তা স্মরণ করিয়ে দিলেন। তমা মির্জাও সুযোগ পেলে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন তার প্রমাণ সাম্প্রতিক কাজগুলো।
দ্বিতীয় বিষয়টা হলো- স্বল্প সময়ের উপস্থিতি হলেও এই থ্রিলার গল্পে বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছেন দেশের দুই শক্তিশালী অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার ও সুমন আনোয়ার। তারা দুজনে যতোক্ষণ স্ক্রিনে ছিলেন ততোক্ষণই আলো যেন নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছেন। ইন্তেখাব দিনারের অভিনয় দক্ষতা এতটাই উজ্জ্বল যে তার স্ক্রিনটাইম আরেকটু বেশি থাকলে ভালো হতো এ কথাটি মনে আসবেই একবার হলেও। অন্যদিকে রমিজ উদ্দিন চরিত্রে সুমন আনোয়ার যা করলেন তা এক কথায় অনবদ্য। তার অভিনয় তো নজর কাড়ার মতোই, সঙ্গে গালি-গালাজ করার সময়কার এক্সপ্রেশন, বডি ল্যাংগুয়েজ এবং ডায়ালগ ডেলিভারি মুগ্ধকর। স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতে মানানসই ছিলেন নাসির উদ্দিন খান, মাসুম বাশার ও মিলি বাশার।
মাঝে একটা সময় চলচ্চিত্র বলি আর নাটকই বলি এই রকম চরিত্র এবং গুণী শিল্পীদের নিয়ে তেমনভাবে ভাবা হয়নি— এই আক্ষেপ এখন কিছুটা দূর হচ্ছে ওটিটির ভিন্নধর্মী কিছু কনটেন্টের মাধ্যমে। রায়হান রাফী তার আগের কাজ যেগুলো ওটিটিতে প্রচারিত হয়েছে যেমন ‘জানোয়ার’ বা ‘দ্যা ডার্ক সাইড অব ঢাকা’তেও মূল চরিত্রের পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্রগুলোকেও গুরুত্ব দিয়েছেন এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। সামনের দিনেও এই ধারা অব্যহত থাকবে এমনটাই চাওয়া।
অন্যান্য দেশের মতো করে এই সময়ে এসে আমাদের দেশেও বিভিন্ন কনটেন্টে মূল চরিত্রের পাশাপাশি সাইড বলি বা পার্শ্ব বলি এমন চরিত্রগুলো গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হচ্ছে বা তাদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে এটা খুব ভালো লেগেছে। গুণী এবং শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সুযোগ পাচ্ছেন এই কারণে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম প্রশংসার যোগ্য।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বা ক্ষমতার পালাবদলসহ গুম, হত্যা, ষড়যন্ত্রের অনেক কিছু আমরা আবছা আবছাভাবে শুনলে বা পত্রিকায় পড়লেও আমাদের চলচ্চিত্র বা নাটকে এই বিষয়গুলো তেমনভাবে কখনোই উপস্থাপন করা হয় না নানা কারণেই। সেই আক্ষেপের জায়গায়টায় রাফী উপহার দিলেন ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’।