খোকন সোনার ট্র্যাজেডি
খোকন সোনা; পরিচালক: কাজী হায়াৎ; শ্রেষ্ঠাংশে: রাজীব, জুলিয়া, কাজী মারুফ, শওকত আকবর, বাবুল আহমেদ, দারাশিকো প্রমুখ; মুক্তি: ২১ অক্টোবর ১৯৮২
কিংবদন্তি অভিনেতা রাজীবের চলচ্চিত্রে আগমন ছিল নায়ক হয়ে। নায়কের চরিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় এবং তাঁর ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য ছবি ‘খোকন সোনা।’ একটি শিশুর ট্র্যাজেডি গল্পকে কেন্দ্র করে ছবিটি নির্মিত।
শিশুতোষ চলচ্চিত্র বাংলাদেশে পর্যাপ্ত না থাকলেও উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি আছে। এর মধ্যে ট্র্যাজেডি গল্পে নির্মিত ‘ছুটির ঘণ্টা’ ক্লাসিক। স্কুলের বাথরুমে আটকে পড়া এক কিশোর ছেলের করুণ পরিণকি নিয়ে ছবির গল্প ছিল। ট্র্যাজেডির আরেক গল্পে নির্মিত হয়েছে ‘খোকনসোনা।’
সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা আহত হবার পর খোকন ঘটনাক্রমে আটকে পড়ে একটি বদ্ধ ঘরে। সেখানে ক্ষুধার জ্বালায় সে ছটফট করতে থাকে। দুধের শিশু খুঁজে বেড়ায় মাকে। হাতের কাছে ফিডার পেয়ে মুখটা খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করে চাটতে থাকে। হাত থেকে ফসকে পড়ে মেঝেতে। আবার সেটাকে ধরার চেষ্টা করলে খাট থেকে পড়ে যায়। বিকট কান্নার আওয়াজ তুলে তারপরেও গড়িয়ে গড়িয়ে যাওয়া ফিডারটির পেছনে ছুটতে থাকে। ফিডার ধরতে গেলে সরে যায় আবার সামনে এগিয়ে যায় হামাগুড়ি দিয়ে। মাঝে মাঝে দেয়ালে টাঙানো মায়ের ছবি ও টিকটিকির দিকে তাকায়। খোকনের চোখমুখ তখন ময়লায় ভর্তি। কান্নায় খাবার খোঁজার চেষ্টায় তখনও সচল সে। চপ্পল হাতের কাছে পেয়ে সেটাও চাটতে থাকে। এ এক মর্মান্তিক দৃশ্যপট। দেখতে দেখতে চোখের কোণে জল আবিষ্কার করবে দর্শক। খোকনের শেষরক্ষা কি হয়েছিল? উত্তরটা ছবিটি না দেখা দর্শকের জন্য তোলা থাক।
খোকনসোনার ভূমিকায় ছিল কাজী হায়াতের ছেলে মারুফ। তখন সে দুধের শিশু। ট্র্যাজেডির দৃশ্যগুলোতে পরিচালক কাজী হায়াৎ যে অভিনয় করিয়ে নিয়েছেন অতটুকু শিশু মারুফকে দিয়ে তার কোনো তুলনা হয় না।
ছবিটি শুরু হয় সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার বিখ্যাত লাইনগুলো দিয়ে – ‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান’….
খোকন সোনা প্রতিটি মা-বাবার পরম আদরের, কলিজার টুকরা। খোকনকে ভালো রাখার জন্য বাবা রাজিব ও মা জুলিয়ার চেষ্টার শেষ নেই।
ছবিতে নায়ক রাজীবের অনেক স্বপ্ন। চাকরির খোঁজে একসময় ফিল্মের সাথেও তার সম্পর্ক তৈরি হয়। দারাশিকো তাকে একটা সুযোগ দেয়। এছাড়া জুলিয়ার সাথে প্রেম, আড্ডা, বিয়ে, সংসার, স্বপ্ন এসব মিলিয়ে নায়ক রাজিবের ন্যাচারাল অভিনয় অসাধারণ।
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেক শিশুর নিজের ক্ষতি কিংবা মা-বাবার ক্ষতিতে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা পরিচালক বলে দেন। এটা ছিল সচেতন করানোর জন্য ছবির মেসেজ।
‘খোকনসোনা’ ক্লাসিক ছবি। সন্তানের জন্য মা-বাবার ত্যাগ, স্বপ্ন এবং দুর্ঘটনার কারণে অনিশ্চিত ভবিষ্যত বা করুণ পরিণতি দেখিয়ে ছবিটি দর্শককে কাঁদাবে।