খোলামেলাভাবে উপস্থাপন না করলে রিয়াজ-শাবনূর জুটি হারিয়ে যেত: বাদল খন্দকার
বাদল খন্দকার পরিচালিত হিট সিনেমা কম নয়, তবে তিনি বেশি পরিচিত সালমান শাহ-শাবনূরের ‘স্বপ্নের পৃথিবী’র জন্য। এছাড়া নির্মাণ করেছেন বিশ্বনেত্রী, দুনিয়ার বাদশাহ, পৃথিবী তোমার আমার, মধুর মিলন, সাগরিকা, প্রেম করেছি বেশ করেছি, মিস ডায়না প্রভতি সিনেমা। ২০০৬ সালে ইলিয়াস কাঞ্চন-চম্পা ও রিয়াজ-পপি অভিনীত ‘বিদ্রোহী পদ্মা’ মুক্তির পর আর কোনো ছবি নির্মাণ করেননি।
এ নির্মাতার উল্লেখযোগ্য তিনটি সিনেমার নায়িকা শাবনূর। এ বিষয়ে প্রথম আলোকে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নায়িকা গড়ার কারিগর এহতেশাম ‘চাঁদনী রাতে’ নির্মাণের সময় শাবনূরকে তিনি আমার সঙ্গে পরিচয় করে দিলেন। ছবিটি ফ্লপ হলো। এরপর শাবনূরকে ‘দুনিয়ার বাদশা’ নির্মাণ করলাম। রাতারাতি শাবনূর তারকা খ্যাতি পেলেন। পরে সালমান শাহ-শাবনূরকে নিয়ে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নির্মাণ করলাম। সালমান-শাবনূর জুটি নিয়ে ‘মধুর মিলন’, ‘পৃথিবী তোমার আমার’, ‘সাগরিকা’সহ আরও ছয়টি ছবি নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু সালমান শাহর মৃত্যুর পর শাবনূরের সঙ্গে অন্য নায়ককে নিতে হয়েছে।”
‘স্বপ্নের পৃথিবী, ‘মধুর মিলন’ ও ‘পৃথিবী তোমার আমার’ মুক্তির পর শাবনূরকে আর বাদল খন্দকারে ছবিতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “‘স্বপ্নের পৃথিবী’ মুক্তির পর সালমান শাহ-শাবনূরকে নিয়ে আরও ছয়টি ছবি নির্মাণের কথা ছিল। সালমান শাহর মৃত্যুর পর সব পরিকল্পনা লন্ডভন্ড হয়। পরে শাবনূর-ওমর সানীকে নিয়ে ‘মধুর মিলন’, শাবনুর-রিয়াজকে নিয়ে ‘পৃথিবী তোমার আমার’ নির্মাণ করলাম। ব্যক্তিগত বিশেষ কারণে শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হলে তাঁকে নিয়ে আর ছবি নির্মাণ করা হয়নি। এর মধ্যে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার কালো থাবা শুরু হলো। নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।”
কিন্তু শাবনূরের ক্যারিয়ারের অল্পকটি সিনেমার দৃশ্য নিয়ে দর্শক মহলে আপত্তি আছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘পৃথিবী তোমার আমার’ ও ‘মধুর মিলন’ ছবির গান। বলা হয়, এতে শাবনূরকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাদল খন্দকার বলেন, “ওই সময়টাতে অশ্লীল ও রুচিহীন চলচ্চিত্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে। কোনো কোনো ছবিতে কাটপিসও জোড়া লাগানো হয়। রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছিল। ছবির লগ্নি তুলতে এবং চলচ্চিত্রে বাণিজ্যিক ধারা ঠিক রাখতে শাবনূর-রিয়াজকে নিয়ে ‘পৃথিবী তোমার আমার’ ছবির গানটিতে আবেগঘন কিছু দৃশ্য রাখা হয়েছিল।পরে ‘মধুর মিলন’ ছবিতে ওমর সানীর সঙ্গে একটি গান ছিল শাবনূরের। ক্ল্যাসিক্যাল খোলামেলার এই গান সেন্সর বোর্ডও আটকায়নি। তবে ছবি মুক্তির পর কেউ কেউ গান দুটির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার তকমা জুড়িয়ে দেন। কারণ, তাঁরা বাদল খন্দকার বা শাবনূরের কাছে এটা আশা করেননি। শাবনূরকে দর্শকের কাছে ওই রকম খোলামেলাভাবে উপস্থাপন না করলে বা বাণিজ্যিক আর্ট রিয়াজ-শাবনূর জুটি হারিয়ে যেত।”
সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, নাটকের প্রতি ঝোঁক থেকেই একদিন খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক মমতাজ আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় বাদল খন্দকারের। তার ভাষ্যে, “তিনি তখন ‘ঈমান’ ছবির শুটিংয়ের প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। ‘ঈমান’-এর ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে থাকার প্রস্তাব দিলেন। বাড়তি রোজগারের আশায় রাজি হলাম।”
পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা প্রসঙ্গে বলেন, “‘ঈমান’ ছবি মুক্তির পর তৃতীয় সহকারী হিসেবে ৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। এরপর ‘কুদরত’, ‘নালিশ’, ‘নসীব’, ‘উসিলা’তেও তাঁর সহকারী পরিচালক ছিলাম। মিঠুন চক্রবর্তী এবং রোজিনাকে নিয়ে ভারতের শক্তি সামন্ত যৌথ প্রযোজনায় ‘অবিচার’ নির্মাণের সময় সহকারী পরিচালক হিসেবে সুযোগ দিলেন। এরপর চাষী নজরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মতো খ্যাতিমান পরিচালকদের সহকারী হিসেবে বেশ কিছু ছবিতে কাজ করলাম। ববিতা প্রযোজিত পাকিস্তান ও নেপালের সঙ্গে যৌথ চলচ্চিত্র ‘লেডি স্মাগলার’ এ পাকিস্তানের পরিচালক শামিম আরার সহকারীও ছিলাম। বোম্বেতে শক্তি সামন্ত ও সঞ্জয় লীলা বানসালির সঙ্গেও ‘অনুরাধা’ ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করি। একসময় সিনেমা পরিচালনার কথা ভাবলাম। কিন্ত লগ্নি করবেন কে? পরিচালনার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলাম। শাবনাজ-নাঈমের ‘চাঁদনী’ মুক্তির পর রাতারাতি চলচ্চিত্রে নতুন এক ধারা তৈরি হলো। প্রেমের গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়ে গেল। সালমান শাহ, মৌসুমী, শাবনূর, ওমর সানী, আমিন খান ছাড়াও একঝাঁক সম্ভাবনাময় নতুন মুখ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলো। তখন সিলেটে নুরজাহান নামের এক তরুণী ফতোয়াবাজির শিকার হলেন। সমসাময়িক বাস্তব সেই কাহিনি নিয়ে ‘দুনিয়ার বাদশাহ’ ছবিটি প্রথম নির্মাণ করলাম। শাবনূর-আমিন খান অভিনীত সেই ছবি ভালো ব্যবসা করল। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নির্মাণ করলাম শাবানা-জসিম অভিনীত ‘বিশ্বনেত্রী’। এরপর সালমান শাহ-শাবনূরকে নিয়ে নির্মিত ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সুপার ডুপার হিট হলো। সালমান শাহর সঙ্গে আরও ছয়টি সিনেমা নির্মাণের জন্য চুক্তি হয়েছিল। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে সব পরিকল্পনা লন্ডভন্ড হলো। সালমানকে ছয়টি ছবির জন্য সাইনিং মানি দিয়েছিলাম। তাঁর মৃত্যুতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লাম। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে শাবনূর-ওমর সানীকে নিয়ে ‘মধুর মিলন’, রিয়াজ–শাবনূরকে নিয়ে ‘পৃথিবী তোমার আমার’, হেলাল খান-ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ‘সাগরিকা’, রিয়াজ-পপিকে নিয়ে ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’, মৌসুমী-ফেরদৌসকে নিয়ে ‘মিস ডায়না’, মান্না-মৌসুমীকে নিয়ে ‘আবার একটি যুদ্ধ’ এবং সর্বশেষ ২০০৬ সালে রিয়াজ-পপিকে নিয়ে ‘বিদ্রোহী পদ্মা’ নির্মাণ করলাম। সব কটি ছবি ছিল ব্যবসাসফল।”