গায়েবী আওয়াজে নির্মিত হাস্যকর থ্রিলার ‘রিভেঞ্জ’
এক কথায়:কোনো এক গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় প্রযোজক/পরিচালকের। তিনি শুনতে পান একটি গায়েবী কণ্ঠ। সেই কণ্ঠ তাকে নির্দেশ করে একটি সিনেমা নির্মাণের। গায়েবী কণ্ঠ ধাপে ধাপে দিতে থাকে গল্প, সংলাপ, চিত্রনাট্য। তারপর একদিন নির্মিত হয় একটি চলচ্চিত্র ‘রিভেঞ্জ’।
বাস্তব দুনিয়ায় বসবাস করা কারো পক্ষে ২০২৪ সালে এমন একটা গল্প-চিত্রনাট্য-সংলাপ নিয়ে সিনেমা বানানো অসম্ভব। এখানে নিশ্চয়ই পরাবাস্তব কোনো শক্তি ছিল।
প্রেক্ষাপট: বৃষ্টিতে ভিজে রাত-বিরাতে দিনের কাজ করা এক তরুণের গল্প এটি। যে ভালো মারামারি পারলেও কেন যেন ঠিকঠাক মতো করে না। একটা মেয়ে রাতের আধারে তার সাহায্য চাইলে তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না তরুণ। এই তরুণটি সিনেমার নায়ক। নদীর মাঝে বালুর ডিবি/চরে হঠাৎ দেখা সুন্দরী নারী পুলিশ কর্তার সাথে। নারী কর্তা যে নামে ডাকে, তরুণটি জানায় সেটা তার নাম নয়। ঢিসুম ঢিসুম রহস্য দানা বাধে। অনেকেই তাকে সে নামে ডাকে, কিন্তু সে জানায় এটা তার নাম নয়। তারপর জানা যায় নায়কের পেছনের গল্প। মর্মান্তিক হাস্যকর গল্প।
একজন আণ্ডারগ্রাউন্ড ফাইটারের সব হারানো, পরিবারের সব সদস্য হত্যা এবং প্রতিশোধের গল্প ‘রিভেঞ্জ’।
কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য: প্রেক্ষাপটে গল্পের কিছুটা আভাস দিয়েছি। এর বাইরে বাড়তি কিছু বলার নেই। তবে হ্যাঁ, বুকের ডানপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পানিতে পড়ে গিয়ে স্মৃতি হারানো এবং মাথায় কোনো আঘাত না পেয়েও স্মৃতিশক্তি ফিরে আসাটা সিনেমার ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা।
সিনেমার গল্প ১৫/২০ বছর আগের বস্তাপচা সিনেমার চেয়েও খারাপ। সংলাপ বলতে যা ছিল, তা দুই আড়াই ঘণ্টা সময় ক্ষেপনের জন্য ব্যবহার হয়েছে। এগুলোকে সংলাপ বলা যায় কিনা সন্দেহ থেকে যায়। তুই আমার বাবাকে মেরেছিল ঢিসুম, তুই আমার মাকে মেরেছিস ভিসুয়া ইত্যাদি সংলাপে পরিপূর্ণ। আসলেই চিত্রনাট্য বলতেও কিছু ছিল কিনা জানা নাই।
তবে হ্যাঁ, তুফানের মতো এখানেও বডি ডাবলের ঘটনা আছে। এখানেই বোঝা যায়, পরিচালকের সাথে কিং খানের বাইরে যতই খারাপ সম্পর্ক থাকুক, অন্তরে তাদের ভালো মিল আছে।
এখানে বরাদ্দ হচ্ছে ২ নম্বর
সংগীত: সংগীত বলে কিছু ছিল না সিনেমাটিতে। কিছু একটা বেজে গিয়েছে আর কি। গানের কোরিওগ্রাফি, ক্যামেরাওয়ার্ক ও এডিটিং এমনকি গানগুলোর কোনটাই পাশ নাম্বার পাবার মতো ছিল না।
এখানে বরাদ্দ হচ্ছে দেড় নম্বর
সম্পাদনা ও ক্যামেরাওয়ার্ক: ২০ দিন আগে এডিটিং শেখা আর দীর্ঘদিন ধরে ক্যামেরা সহকারীকে দিয়ে কাজ করালে যেমন হবার কথা, ঠিক তেমনটাই হয়েছে যেন। অথবা বলা যেতে পারে, ক্যামেরায় পর্যাপ্ত শট ধারণ করা না করায়, এডিটর ছিল অসহায়।
এখানে বরাদ্দ হচ্ছে ২ নম্বর
সেট ও লাইট: আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইটিং সেট ছাড়া আর সবই ফ্রেম ভরার জন্য রাখা হয়েছে। লাইটের তেমন কোনো কাজ ছিল বলে মনে হয় নাই।
এখানে বরাদ্দ হচ্ছে দেড় নম্বর
কাস্টিং ও অভিনয়: সিনেমার কাস্টিং কিন্তু ভালো। কিন্তু বাজে গল্প, দূর্বল চিত্রনাট্য এবং সংলাপ কোন চরিত্রকেই অভিনয়ের সুযোগ দেয়নি। এই সাধারণ গল্পটাকেই অসাধারণ চিত্রনাট্য এবং সংলাপের মাধ্যমে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যেতো। আর আন্ডরগ্রাউন্ড ফাইটার হিসেবে নায়কের শারিরিক গঠন নির্মাণ করা উচিত ছিল। কিংবা দক্ষিণ ভারতীয় ধানুষের মতো কৌশলী ফাইটার হিসেবে দেখানো যেত।
তবে হ্যাঁ, নতুন একটা মেয়ে বলা যায় দ্বিতীয় নায়িকা, সংলাপে তার ভয়েস সমস্যা থাকলেও গানের তার পারফরমেন্স এবং চোখ-মুখের এক্সপ্রেশন ও অভিনয় খুবই ভালো ছিল। শুধুমাত্র তার জন্য এখানে ২ নম্বর বেশি দেবো।
সব মিলিয়ে সিনেমার কাস্টিং ভাল হলেও অভিনয় ছিল খুবই নিম্নমানের।
এখানে বরাদ্দ ৫ নম্বর
বার্তা: এই সিনেমা কোনই বার্তা নাই। কিছু আজগুবি যুক্তিহীন যোগসূত্র আছে, যা খুবই হাস্যকর ছিল। সিনেমায় যদি নায়কের এক ঘুষিতে ১০ জন উড়ে যায়, সেটা যুক্তিহীন বা হাস্যকর নয়। সেটা অন্য ফ্যান্টাসি। কিন্তু গল্পের জার্নিতে একটু পরপর খানাখন্দে ভরা। এত এত ব্ল্যাকহোল নিয়ে কিভাবে একটা সিনেমা হয়, সেটাই গবেষণার বিষয়।
এখানে বরাদ্দ ০ (বিগ জিরো)
ব্যক্তিগত অভিমত: সিনেমার শুরুর দৃশ্যে মনে হচ্ছিল ভালো কিছু হতে যাচ্ছে। তারপর সেই যে হাস্যকর ও বিরক্তিকর একটার পর একটা দৃশ্য শুরু হলো, তাতে এক পর্যায়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে কখন শেষ হবে। সিনেমার পর্যাপ্ত বাজেট না থাকলে, সিনেমা করাই উচিত নয়। অথবা বাজেট যেমন, তেমন সিনেমা করা উচিত। থ্রিলারে থ্রিল থাকার পরিবর্তে যদি হাস্যকর ও বিরক্তিকর ব্যাপারস্যাপার থাকে, তাহলে অন্তত এই সময়ে এসে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ‘কিল হিম’ সিনেমা দেখে মোটামুটি একটা ভরসা এসেছিল প্রযোজক ও নির্মাতার ওপর। কিন্তু ‘রিভেঞ্জ’ সেখানে বড় একটা ধাক্কা দিলো।
আশা করছি আগামীতে প্রযোজক-পরিচালক নতুন উদ্যোমে আবারো ভালো পান্ডুলিপির সুনির্মিত সিনেমা উপহার দেবেন।
সিনেমাটির রেটিং: ২/১০