Select Page

ঘরে-বাইরে যত রাক্ষস

ঘরে-বাইরে যত রাক্ষস

%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%b8-%e0%a6%b6%e0%a6%b9%e0%a7%80%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%96%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a8রাক্ষস‘ শব্দটি শোনার পরই একটা আতঙ্ক কাজ করে। মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়ার ব্যাপার আছে এতে।মাস্টারমেকার শহীদুল ইসলাম খোকন তাঁর অন্যসব সিনেমার মতোই বাণিজ্যিক সিনেমার জম্পেশ পরিবেশ বজায় রেখে তবেই নির্মাণ করেছেন। অসাধারণ এ সিনেমাটির স্টোরি টেলিং এর দুর্দান্ত দিকের পাশাপাশি সিনেমার আর্টিস্টদের অভিনয়, গান, ফিনিশিং এসবও ভারসাম্য রেখে করেছেন।

সিনেমার গল্পে এসেছে গ্রাম ও শহরের জীবন।সেখানে অত্যাচারী লোক যেমন আছে নিরীহ লোকও আছে। আছে গ্রাম ও শহরে ছড়িয়ে থাকা অত্যাচারী অন্যান্য লোকজন যারা ‘রাক্ষস‘ হয়ে বাস করে।খোকন এই দুটি দিককে সমানভাগে ভাগ করে দিয়ে সামাজিক জীবনকে তুলে ধরেছেন।সমাজে প্রচলিত ট্যাবু, ফতোয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে পরিচালক খোকন তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।যে সমাজ রাক্ষসদের জন্য অতিষ্ঠ সে সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় মেসেজও তিনি রেখেছেন।

rakkhosh-subarna-mustafa-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%b8-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a3%e0%a6%be-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%beরাক্ষস‘ এর ট্যাগলাইন খোকন রেখেছেন ‘the crazy lover’.এর থেকে আচ করা যায় একজন প্রেমিকের গল্প সিনেমাটি।হুম সেটাকে ঘিরেই ডালপালা গজিয়েছে সিনেমায়। লিজেন্ড হুমায়ুন ফরীদি সেই প্রেমিক যিনি সিনেমায় দাপট দেখিয়েছেন।রাস্তার মধ্যে সুবর্ণার ‘স্টুপিড’ গালি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফরীদি তার প্রেমে পড়ে যায়।প্রেম না মানায় ফরীদির আক্রোশ বাড়ে।যার জন্য জীবন দিতে হয় সুবর্ণার মা-বাবাকে।সেখানে সুবর্ণা সৃষ্টিকর্তার কাছে তার বাস্তবতা তুলে ধরে ‘তুই তোকারি’ করলে কাঠমোল্লারা খোদার গজব পড়বে বলে গ্রাম থেকে বের করে দেয় সুবর্ণাকে।সেখান থেকে সুবর্ণার নতুন গল্প শুরু হয় শহরের প্রেক্ষাপটে।সেখানে অালমগীরের সাথে প্রেম এবং বিয়ের পর শ্বাশুড়ির অত্যাচারের শিকার হতে হয় সুবর্ণাকে।তাকে ভরা আসরে অপমান করতে চায় তার শ্বাশুড়ির গেস্টরা এবং আলমগীরের বোন মৌসুমী।সেখানে সুবর্ণা প্রতিবাদ করে।গেস্টদের ভুল ইংরেজি ধরিয়ে দেয় সুবর্ণা এবং নিজের সত্যিকারের পরিচয় দেয় যেখানে সে একজন গ্র্যাজুয়েট।পরিচালক খোকন দেখান পরিবারের ভেতরেও আছে এমন সব মানুষ যারা নতুন স্বপ্ন দেখে শ্বশুরবাড়িতে আসা মেয়েদের কাছে সাক্ষাৎ রাক্ষস হয়ে ওঠে।মৌসুমী-রুবেল রোমান্স সিনেমার অালাদা একটা পার্ট।রুবেল সুবর্ণার হারিয়ে যাওয়া ভাই।রাস্তায় টিজ করা বখাটেরা মৌসুমীর ফিগার নিয়ে যখন কথা বলে মৌসুমী সেখানেই প্রোটেক্ট করে।বলে-‘যে ফিগারের কথা বলছিস সেগুলো কি তোরা তোদের মা-বোনদের দিয়ে হিশাব করা শুরু করেছিস?’পরিচালক খোকন যে কতটা আধুনিক ছিলেন এ স্ট্রং ডায়লগ সেটাই মনে করায়।কমেডিও ভালো ছিল।মৌসুমী যখন রুবেলকে ভালোবেসে ফেলে রুবেলকে বলে-‘তুই শালা আমাকে তাবিজ করেছিস, নইলে তোকে আমি ভুলতে পারছি না কেন?’ রোমান্টিক কমেডি তুলে ধরতে এরকম ব্যতিক্রমী ডায়লগও ব্যবহার করা হয়েছে।

rakkhosh-humayun-faridi-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%b8-%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a7%9f%e0%a7%82%e0%a6%a8-%e0%a6%ab%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%80সিনেমাটির ফিনিশিং সবচেয়ে বড় শক্তি। রাক্ষস হুমায়ুন ফরীদি সুবর্ণাকে ধরে আনে তারই গ্রামে।সেখানে ফতোয়াবাজ সেই কাঠমোল্লাসহ গ্রামবাসীও আসে। সুবর্ণাকে সেখানেও অপমান করে ফরীদি। সুবর্ণা সবাইকে ব্যঙ্গ করে অসাধারণ সব ডায়লগে। গ্রামবাসী, কাঠমোল্লাদের ‘অথর্ব, ভেড়া, হিজড়া’ বলে সুবর্ণা। তারপর শাড়ি খুলে ছুঁড়ে ফেললে রুবেল আসে।রুবেলকে যখন ফরীদির বাহিনী মারতে থাকে ঐ কাঠমোল্লা, গ্রামবাসীরা জেগে ওঠে।সবাই মিলে ফরীদিকে মেরে ফেলে।পুলিশ এসে ফরীদিকে ধরতে চাইলে গ্রামবাসীরা বলে তারা ফরীদিকে দেখেনি। কাঠমোল্লারা ক্ষমা চায় সুবর্ণার কাছে।সুবর্ণা অনুরোধ করে তাদের কাছে এবং বলে-‘আপনারা ধর্মকে ভুলভাবে ব্যবহার করবেন না।এতে অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়। যাকে ভালোবাসা যায় তার উপরই রাগ করা যায়। আল্লাহর কাছে যেমন জবাব চেয়েছি তেমনি আল্লাহই অামার সাথে ছিলেন বলেই আমি এতদূর এসেছি। ‘এই দারুণ কৌশলটা দেন শহীদুল ইসলাম খোকন। তার পরিচালনা এখানেই অসাধারণ।তিনি পারেন কীভাবে কোথায় কতটুকু দেখালে দর্শক নেবে।আধুনিক সেন্স রেখে কাজ করতেন।

সিনেমায় হুমায়ুন ফরীদিসুবর্ণা অসাধারণ ছিলেন অভিনয়ে। আলমগীর অনবদ্য। মৌসুমীর গ্ল্যামার ও অভিনয় তার সময়কে জয় করার জন্য পারফেক্ট। রুবেল চমৎকার। গোলাম মোস্তফার ক্যারেক্টার সিলেক্টিভ ছিল।সিনেমায় দুটি অসাধারণ কালজয়ী গান আছে।দুটোই বাংলাদেশ বেতারে খুব বাজাত।আলমগীর-সুবর্ণা জুটির ‘শোনো শোনো ও প্রিয় প্রিয় গো’ আর মৌসুমীর স্টেজ পারফরম্যান্সে ‘এখনো সে যে এলো না’ এ গান দুটি।চিঠি লিখতাম শোনার জন্য।মজার ব্যাপার ‘এখনো সে যে এলো না’ গানে পরিচালককে গ্যালারিতে দেখা যায়।মৌসুমীর স্টেজ পারফরম্যান্সে তার মুখ হা হয়ে যায়।

রাক্ষস‘ সিনেমাটি বাণিজ্যিক হয়েও সামাজিক সচেতনতার সিনেমা।আজকের অফট্র্যাক সিনেমায় যে সামাজিক সচেতনতা দেখানোর চেষ্টা থাকে সেখানে বাণিজ্যিক সিনেমায় নব্বই দশকেই সে ধরনের কাজ হয়েছে।আর শহীদুল ইসলাম খোকন সেই আধুনিক পরিচালক যিনি দেখাতে পেরেছেন ‘রাক্ষস’ কারা, কোথায় তারা থাকে আর তাদের জন্য আমরা কি করতে পারি।

সম্পূর্ণ ছবিটি ইউটিউবে দেখতে পারেন


মন্তব্য করুন