চলচ্চিত্রের শর্মিলী আহমেদ
চলে গেলেন সুঅভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ… কয়েকটা দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক।
১.
সালমান শাহ ঘর ছেড়েছে শাবনূরকে ভালোবেসে। মা শর্মিলী আহমেদ ছেলের জন্য কেঁদে বুক ভাসায় বাবা খলিলের মন গলে না। শর্মিলী আহমেদ একদিন ছেলেকে দেখতে যায়। গিয়ে দেখে সালমান রান্নার জন্য পেঁয়াজ কাটছে আর চোখ মুছছে। জানালা দিয়ে ছেলের এ কষ্ট দেখে মা কাঁদছে। সালমান বুঝতে পারে কেউ একজন এসেছে। সালমান দরজায় তার মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। শর্মিলী আহমেদের অভিনয় ছিল অনবদ্য। ছবির নাম ‘তোমাকে চাই’।
২.
আজিম ঘুম থেকে এখনো ওঠেনি। শর্মিলী গ্রামোফোনে গান বাজাচ্ছে-‘তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো আমার অজান্তে/আমার গানেরও প্রান্তে তুমি দাঁড়িয়ে আছো গো।’ আয়নায় সাজগোজ করছে শর্মিলী। অসাধারণ দেখাচ্ছে তাঁকে। ছবির নাম ‘আবির্ভাব’।
৩.
মা হবার বাসনা শর্মিলীর মনে। একটা পুতুলকে সাজিয়ে গুঁজিয়ে গান গাইছে-‘সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই/জানি না তো কেমন করে কী দিয়ে সাজাই।’ গানের সাথে তার সৌন্দর্য ও অভিনয় নজরকাড়া। বাড়ির কাজের লোকেরাও শর্মিলীর এ আনন্দে আনন্দিত। ছবির নাম ‘আবির্ভাব’।
৪.
রিয়াজকে কুড়িয়ে পেয়ে মানুষ করেছেন শর্মিলী আহমেদ। একসময় রিয়াজ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় কিন্তু মমতাময়ী মা শর্মিলীর কাছে বিদায় কি নিতে পারবে সে? তাই রাতে চিঠি লিখে সে চলে যায়। রিয়াজের কথাটা-‘মা, তোমার কাছ থেকে বিদায় চেয়ে নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই তাই রাতের অন্ধকারেই না বলে চলে গেলাম।’ মায়ের চোখ তখন অশ্রুসিক্ত। এখানে শর্মিলী আহমেদের অভিনয় অসাধারণ। ছবির নাম ‘মিলন হবে কত দিনে’।
এভাবেই চলচ্চিত্রে একজন শর্মিলী আহমেদ নায়িকা থেকে মমতাময়ী মা পর্যন্ত অভিনয় করে গেছেন এবং হয়েছেন অসাধারণ একজন অভিনেত্রী।
তাঁর জন্ম ৮ মে ১৯৪৭, ভারতের মুর্শিদাবাদে। বিটিভিতে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল নাটক দিয়ে। সম্ভবত ‘দম্পতি’ নামে ড্রামা সিরিয়াল ছিল সেটি। এরপর চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন।
উল্লেখযোগ্য ছবি : আবির্ভাব, মালঞ্চ, আগুন, আশার আলো, আরাধনা, রূপালি সৈকতে, আলিঙ্গন, হাঙর নদী গ্রেনেড, এখনো অনেক রাত, স্ত্রীর পাওনা, হুঁশিয়ার, প্রেমিক, বেনাম বাদশা, তোমাকে চাই, প্রেমযুদ্ধ, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, বেঈমানী, মাটির ফুল, মিলন হবে কত দিনে, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, আকাশছোঁয়া ভালোবাসা, কাজের মেয়ে, চাচ্চু, আকাশ কত দূরে, মেহেরজান।
প্রথমদিকের কথা বললে ‘আবির্ভাব’ তাঁর সেরা ছবি। অভিনেতা আজিমের সাথে তার রসায়ন ছিল দারুণ। ছবিতে তাঁদের সবগুলো গান জনপ্রিয়। ‘ভাবী যেন লাজুকলতা ছলাকলা কিছুই জানে না/সে যে মনের কথা মনেই রাখে মুখে আনে না’ এ গানটিতে বাঙালি বধূর চিরন্তন লাজুক প্রতিমূর্তিতে শর্মিলী আহমেদ উপস্থিত। সেই সত্তরের দশকেই তিনি নায়করাজ রাজ্জাকের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন ‘আগুন’ ছবিতে। এ ছবির পোস্টারটি আলোচিত ছিল এবং পোস্টারে রাজ্জাক তার মায়ের লাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ দৃশ্যটি পোস্টারের মূল আকর্ষণ ছিল। মায়ের চরিত্রে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন এর মধ্যে কিছুটা নেগেটিভ বা রাগী ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবিতে। এ ছবিতে নায়িকা লিমার মায়ের চরিত্রে তিনি ছিলেন। মেয়ের ভালোবাসার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান তিনি। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে সুচরিতার মায়ের চরিত্রে ছিলেন।
একজন সুঅভিনেত্রী হিসেবে শর্মিলী আহমেদ থেকে যাবেন আমাদের চলচ্চিত্রে। তাঁর কাজই তাঁকে স্মরণে রাখবে।