Select Page

চলচ্চিত্র তাদের কাছে খুব অল্প সময়ে টাকা গুছিয়ে নেওয়ার মাধ্যম

চলচ্চিত্র তাদের কাছে খুব অল্প সময়ে টাকা গুছিয়ে নেওয়ার মাধ্যম

image_48156মনতাজুর রহমান আকবর বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান নির্মাতা। এক দশকের অধিক সময় ধরে তিনি চলচ্চিত্র নির্মান করছেন। যাদের ছবিতে কলকুশলীরা মুখ্য নয়, পরিচালকের নির্মাণই সর্ব প্রথম বিবেচ্য থাকে, সেই হাতে গোনা ক’জন তারকা পরিচালকের একজন তিনি।  কাজ করেছেন ছোট পর্দায়ও। বর্তমান ব্যস্ততা বড়া পর্দা ঘিরে। সম্প্রতি তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকে। তার কথপোকথনের রেশ ধরে জানা যায় বাংলা চলচ্চিত্রের  হাল হকিকত। সাক্ষাৎকারটির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিএমডিবি-র পাঠকদের জন্য হুবহু  তুলে দেয়া হল-

 

এখনকার ব্যস্ততা কী নিয়ে ?

এই তো কেবল শেষ করলাম ‘তোমাকে ভালোবেসে দিওয়ানা’ নামের ছবিটি। একেবারে নতুন তিনজনকে নিয়ে কাজটি করেছি। স্বাধীন, পুষ্পি ও কথা। রেড ক্যামেরায় শুটিং করেছি। দর্শকেরা উপভোগ করবে।

এই যে ক্যামেরা প্রযুক্তির কথা বললেন বা ছবির পোস্টারে এখন ‘ডিজিটাল’ তকমা বা পোস্টারে পরিচালকের নামের চেয়ে বড় করে লেখা থাকছে অমুক ক্যামেরায় ধারণকৃত। এই প্রচার প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য কী থাকে? এই ক্যাম্পেইনে কী হলে দর্শক বেশি যায়? আর ডিজিটাল ছবি হলে বাকিগুলো কি অ্যানালগ ছবি…?

দেখুন আগে তো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দর্শকেরা অতটা আগ্রহী ছিল না। এখন কিন্তু হচ্ছে। এখন অ্যানিমেটড ফিল্মও শুরু হয়েছে এদেশে। আর ডিজিটাল শব্দের যথেচ্ছাচার হচ্ছে বলে আমি মনে করি। কারণ এখন এই যুগে সব ছবি ডিজিটাল। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক কিছুদিন আগেও যত্রতত্র ফোর হান্ড্রেড (যেগুলো বিয়ে বাড়ির ভিডিও ধারণে ব্যবহার করা হয়) তা দিয়ে চলচ্চিত্রের নির্মাণের দুঃসাহস নিয়েছিল কেউ কেউ। এখন এফডিসি কর্তৃপক্ষ থেকেই নির্দিষ্ট রেজুলেশনের বাইরে কোনো ছবি অনুমোদন পাবে না এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়নের খবর শোনা যায় প্রায়ই। এটিকে শিল্প ঘোষণাও হয়েছে দীর্ঘদিন। এই ঘোষণায় একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকার হিসেবে কতটা লাভবান হয়েছেন?

এতে আমাদের কোনো লাভ নেই। লাভ হলমালিকের কিংবা যাদের নিজস্ব স্টুডিও আছে তাদের। কারণ আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক এই পরিচয় বা এই গ্যারান্টিতে তো আমাকে কোনো ব্যাংক টাকা দেবে না। আর যাদের দেবে তারা শিল্প ঘোষণার আগেও লোন পেতেন। এখন হয়তো তাদের লোন পাবার আরও একটা খাত বেড়ে গেল। আসলে প্রয়োজন একটা সুপরিকল্পিত ফান্ড, বাজেট, যা দিয়ে একজন গুণী নির্মাতা স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ পাবে।

চলচ্চিত্রের এই উন্নয়নে সিনিয়র আর্টিস্টদের আপনারা কতটা কাছে পান ?

একদমই না। বরং পরোক্ষভাবে আমি বলব এই অবক্ষয় বা চলচ্চিত্রের কোনো ক্রান্তিকালে তারা কখনও এগিয়ে আসেনি। এ ছাড়া হল মালিকদেরও একই চরিত্র। বছরের পর বছর ধরে সিনেমা শিল্পে তারা ব্যবসা করেছে। কিন্তু নিজের হলের কোনো উন্নয়ন করেনি। কারণ সেই চাপ বা নীতিমালা তো নেই। তাই, নিজের হলে উপার্জিত টাকা দিয়ে তা অন্য ব্যবসায় লগ্নি করেছে। সিনেমা ব্যবসা রুগ্ন থেকে রুগ্নতর হয়েছে। আর সেই মালিক একপর্যায়ে নিজের লাভের উদরপূর্তি করতে সিনেমাহল ভেঙে মার্কেট গড়ে নিয়েছে।

তবে কি এইসব হতাশা থেকেই কখনও পূর্ণিমা কখনও মৌসুমীর মতো গুণী অভিনেত্রীরা সিনেমা ছেড়ে দেবার ঘোষণা দেন?

দেখুন সত্যি কথা বললে বলতে হয়, এদেরও একই অবস্থা। চলচ্চিত্রে কাজ করে পূর্ণিমার আজ ৫ তলা বাড়ি, মৌসুমীর ৬ তলা, শাবনূরের ঢাকায়, অস্ট্রেলিয়ায় সম্পত্তি হয়েছে। ওদের যা নেবার তো নেয়া হয়ে গেছে। তাদের আজ জীবন পরিপূর্ণ। এখন তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ঘোষণা দেন। আজ মনে হলো ছেড়ে দেবার ঘোষণা দিচ্ছি, তো কাল আবার খবরের শিরোনাম হবার জন্য ফিরে আসার ঘোষণা দেবে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। বাইরের দেশে তো বংশ পরম্পরায় এই ইন্ডাস্ট্রির সাথে থাকার চেষ্টা করে সকলে। চলচ্চিত্র তাদের কাছে খুব অল্প সময়ে টাকা গুছিয়ে নেবার মাধ্যম।

ভারতীয় চলচ্চিত্র এদেশে আসার প্রসঙ্গ এখন পুরোনো। পরিচালক সমিতিও প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু এখন বেশ ক’জন অভিনেতা-অভিনেত্রী টালিগঞ্জে বা অন্য কোনো দেশে ছুটছেন নিজেদের ক্যারিয়ার উন্নয়নের স্বার্থেই। এক্ষেত্রে কি কোনো নীতিমালা বা অনুমতির প্রয়োজন পড়ে?

না এখনও এদেশে তা শুরু হয়নি। কিন্তু আপনি চাইলেই একজন কলকাতার অভিনেত্রীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এখন এদেশে আনতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে সেখানকার একটা সম্মিলিত সংগঠন ‘ইমপা’র অনুমতি লাগবে। আমাদের এখানে সেই নিয়ম নেই। তবে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এবার চলচ্চিত্রের ধারা নিয়ে একটু শুনতে চাইব। সম্প্রতি চ্যানেলগুলো একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এসেছে। এই প্রচলনও দীর্ঘদিনের। এতে সিনেমা শিল্পের কতটা উন্নতি হয়েছে?

দেখুন এক অর্থে তো উন্নতি হয়ই। কিন্তু এক কোটির চলচ্চিত্র যখন ৩০ লাখের প্যাকেজে নেমে আসে তখন ছবির যা বারোটা বাজার বেজেই যায়। যেমন সম্প্রতি দেখলাম চ্যানেল আই বুটিক শিল্প নামে ৬টা ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এখন একটা ছোট বাজেটে হয়তো কিছু টিভি নাটক নির্মাতারা ছবি বানানোর উত্সব শুরু করবে। কিন্তু এগুলো তো সিনেমা হলে গেলেই এর অবস্থা বোঝা হয়ে যায়। তো এই উন্নতি দিয়ে কার কী হবে বলুন। এর আগেও চ্যানেল আই অনেকগুলো এই প্যাকেজ বাজেটের ছবি করেছে। অগণিত ছবি নির্মাণ করেছেন আমার অনেক প্রিয় নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। কিন্তু সেই ছবিগুলোর একটিও কি চাষী ভাই তার আগের ছবিগুলোর মান উত্তীর্ণ করতে পেরেছে। প্রশ্নটা সেখানেই।

এদিকে আপনি নিজে চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে টিভি নাটক নির্মাণ করেছেন। এর কী ব্যখ্যা দেবেন?

কোনো ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার মানুষ আমি নই। আমার সরল স্বীকারোক্তি, আমি বেকারত্ব ঘোচাতে এই কাজগুলো করতে হয়েছে। চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিকালে তো আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমি তো কালকের নায়িকার মতো বলতে পারি না যে আমি ফিল্ম ছেড়ে এখন কাপড়ের দোকান দেবো! যেহেতু এটাও ক্যামেরার কাজ, তাই বেকারত্ব থেকে বাঁচতেই বাধ্য হয়ে করেছি। কিন্তু কিছু নাটক বানাতে এসেও অভিজ্ঞতা আরও খারাপ হয়েছে। এখানেও চলচ্চিত্রের চেয়ে বেশি অবক্ষয় চলছে। প্রযোজক আর অভিনেত্রী বা কর্পোরেট একসুতোয় বেঁধে পরিচালকদের ধমকাচ্ছে। প্রোডাকশনের বারোটা বাজছে। পরিচালকের সঠিক মূল্যায়ন না হলে ভালো কাজ কখনোই সম্ভব না।

সামনের দিনগুলোয় চলচ্চিত্রের ভবিষ্যত কী বলে মনে করেন?

ভালো। আমি অনেক আশার আলো দেখছি। ছবি নির্মাণ, ছবিতে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে এখন অনেকে। এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। সময় লাগবে। নিকট ভবিষ্যতে হয়তো খুব ভালো কিছু ঘটনা ঘটবে। আমাদের এখন কয়েক জোড়া জুটি দরকার। যাদের নামে বুকিং এজেন্টরা ছবি নিতে সাহস পাবে। হয়ে যাবে। বেশি দিন লাগবে না। এর ভেতর অনেক নিম্নমানের ছবি হবে। তার ভেতর থেকেই দুয়েকটি বেরিয়ে আসবে।

সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক


Leave a reply