চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট বিল পাস, টিভি অভিনেতারাও পাবে সুবিধা
জাতীয় সংসদে পাস হলো চলচ্চিত্রশিল্পীদের জন্য ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট বিল-২০২১’। দুস্থ, অসহায় ও অসুস্থ চলচ্চিত্রশিল্পী, কলাকুশলীদের কল্যাণে কাজ করবে এই ট্রাস্ট। এ বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করেছে নিউজ বাংলা।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিলটি উপস্থাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এরপর এই বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। কয়েকজন আনেন কয়েকটি দফার সংশোধনী। এর মধ্যে কিছু সংশোধনী গ্রহণ এবং কিছু বর্জন করা হয়।
এরপর বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপিত হয়। তখন কণ্ঠ ভোটে সর্বসম্মতভাবে পাস হয় বিলটি।
এই বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা স্মরণ করেন চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়কে। এখন ভালো চলচ্চিত্র তৈরি না হওয়া, সিনেমা হল না থাকা, দেশে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন নিয়েও কথা বলেন তারা। আলোচনা হয়, এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর তাৎপর্যপূর্ণ কোনো চলচ্চিত্র তৈরি না হওয়া নিয়েও।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানান, এ বছরই মুক্তি পাবে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী নিয়ে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পীদের কল্যাণে ট্রাস্ট গঠনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট বিল-২০২১’ বিল সংসদে তোলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
পরে বিলটি পরীক্ষা করে ৪৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। বোর্ড হবে ১৩ সদস্যের। ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরকার নিয়োগ করবে।
ট্রাস্টে তহবিল আসবে সরকারি অনুদান, দেশি-বিদেশি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের অনুদান, লভ্যাংশ, ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের আয় থেকে। কোনো চলচ্চিত্রশিল্পী মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরাও যাতে সহায়তা পান, বিলে সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষে শনিবার দুপুরে সংসদ চত্বরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পীদের বহুদিনের দাবি ছিল, তাদের কল্যাণের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা। সেই ট্রাস্ট গঠন করার লক্ষ্যেই আজকে চলচ্চিত্র কল্যাণ ট্রাস্ট আইন সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং সেটি পাস হয়েছে।’
বিলটি আনার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পীদের কল্যাণসাধন, পেশাগত কাজ করতে অক্ষম, অসমর্থ ও অসচ্ছল, অসুস্থ শিল্পীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং মৃত্যু হলে তাদের পরিবারকে প্রয়োজনে দাফন-কাফন বা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দিতে এবং তাদের কল্যাণের জন্য একটি স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন।’
টিভি অভিনয় অঙ্গনের কথা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘টেলিভিশনে যারা অভিনয় করে, তাদের পক্ষ থেকেও দাবি জানানো হয়েছিল, যেন তাদেরও এই আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই দাবি তারা তথ্য মন্ত্রণালয়ে দেবার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বরাবরও দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে তারাও যেন এই ট্রাস্টের সুবিধা পায় সেটিও এই আইনে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। টেলিফিল্মকেও সিনেমার সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, টেলিভিশন নাট্যনির্দেশকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দীন লাভলু, সাধারণ সম্পাদক এসএমকিউ সাগর, অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম এ আইন পাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।