Select Page

ইনক্রিডেবল আশফাক নিপুণ! আউটস্ট্যান্ডিং মোশাররফ করিম!

ইনক্রিডেবল আশফাক নিপুণ! আউটস্ট্যান্ডিং মোশাররফ করিম!

ইনক্রিডেবল আশফাক নিপুণ! আউটস্ট্যান্ডিং মোশাররফ করিম! রিমার্কেবল জাকিয়া বারী মম! ইম্প্রেসিভ খায়রুল বাসার। এক্সিলেন্ট মোস্তাফিজুর নূর ইমরান! অ্যান্ড ওয়ান্ডারফুল শ্যামল মাওলা! কোনো একটা কাজ দেখার পর যদি এতগুলো মানুষ নিয়ে এতসব বিশেষণ মাথায় আসে, নিঃসন্দেহেই সেটা হৃদয়স্পর্শী! মহানগর দেখার পর জোরালোভাবেই বলতে পারি, ছুটির দিনের চার-পাঁচটা ঘণ্টা বিফলে যায়নি। বরং ভালো কাজ দেখতে পারার যে মুগ্ধতা, তা এখনো আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

মোশাররফ করিম ও খায়রুল বাসার

ছুটির দিনটা তো আমার নানা জমানো কাজ করতে করতেই কেটে যায়। আজকেও সে রকমই হয়তো হতো। ঘরের জিনিসপত্র অগোছালো। শুক্রবারে গুছাবো বলে সারা সপ্তাহ এভাবেই সব ফেলে রেখেছি। এক সপ্তাহর ময়লা কাপড় সব জমিয়ে রেখেছি। পাণ্ডুলিপি গোছানোর কাজ বাকি। আরো বেশ কিছু কাজ শুক্রবারের জন্য অধীর অপেক্ষায় বসে ছিল সেই কবে থেকে। অথচ দুপুরের পর পর সব ফেলে টেলে মনে হলো, ‘মহানগর’ দেখতে হবে। দেখার ইচ্ছেটা রিলিজের পর থেকেই হচ্ছিল। সময়-সুযোগ কিছুতেই ব্যাটে-বলে মিলছিল না। এর উপর আমি আবার টেকনোমূর্খ! কীভাবে ওটিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হয়, এর সঠিক দিকনির্দেশনাও জানা নাই। এক নেটফ্লিক্স দেখতে পারি, তাও পিতার কল্যাণে! সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত মহানগর জয় হলো! দেখার উপায় বাতলে দিলো বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কয়েক ঘণ্টা যেন স্ক্রিনের সামনে থেকে উঠতে না হয়, এরজন্য সমস্ত আয়োজন নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে পড়লাম মহানগর পাড়ি দিতে।

জাকিয়া বারী মম

গত লকডাউনের সময় থেকে মূলত ওয়েব সিরিজ দেখার একটা রোগ আমার হয়েছিল। রোগ বললাম এ কারণেই, ওয়েব সিরিজ দেখা এক প্রকার আসক্তি। একবার কোনো সিরিজে মন আর মাথা সেট হয়ে গেলে, পুরো এপিসোড না দেখে উঠা বেশ মুশকিল হয়ে যায়। এই যে স্ক্রিনের সামনে মানুষকে ধরে রাখার ক্ষমতাটা, এটা সব ওয়েব সিরিজের থাকে না। যেটার থাকে, খুব ভয়ংকরভাবে থাকে। কিছু কিছু ওয়েব সিরিজ দেখার পর আমার বারবার মনে হয়েছে, “প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে/মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ…।” কিন্তু প্রতিটা শুরুরই তো একটা শেষ থাকে, ফলে সিরিজ বা এপিসোডও এক সময় শেষ হয়ে যায়। এদের মধ্যে যেসব মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন রাখতে পারে, সেসব নিয়ে কেন যেন মনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাজ করে। মনে হয় এসব নির্মাতাদের আরো আরো কাজ দেখি। সাব-কনসাশলিই হয়তো এরপর থেকে আমি তাদের অন্যান্য কাজ খুঁজতে থাকি বিভিন্ন মাধ্যমে।

দেশের বাইরের এমন কিছু নির্মাতাদের কাজ তো আমি নিয়মিত খুঁজে বেড়াই। দেশের ওয়েব সিরিজ খুব একটা দেখার সুযোগ হয়নি। তবুও ওয়াহিদ তারেকের ‘বুমেরাং’, শিহাব শাহীনের ‘১৪ আগস্ট’, তানিম নূরের ‘একাত্তর’সহ আরো কয়েকটা ওয়েব সিরিজ দেখার সুযোগ হয়েছিল। এগুলো যেমন দেখেছি, সেসব নিয়ে অল্প কিছু কথা লিখেছিও। এরই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই কি আশফাক নিপুণের ‘মহানগর’ নিয়ে লিখতে বসেছি? না বোধহয়! মুগ্ধতা ছাড়া কিছু নিয়ে লেখা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ফলে অনেক অনুরোধ আমি অনেক সময় রাখতে পারি না যদি সেসব কাজ আমাকে মুগ্ধ করতে না পারে। মহানগর নিঃসন্দেহে আমাকে মুগ্ধ করেছে!

মোস্তাফিজুর নূর ইমরান

মহানগরের গল্প বা প্লট খুব ইউনিক কিছু না। আমাদের আশেপাশের ঘটনাই। অর্থ-বিত্ত আর ক্ষমতার যে অপব্যবহার আমরা সমাজের উচ্চবিত্তদের করতে দেখি, এটাও সে গল্পই। ফলে গল্পের দিক থেকে এটা এমন কোনো আলাদা গল্প নয়, যার সঙ্গে আমরা পরিচিত না। তাহলে চার-পাঁচ ঘণ্টা আশফাক নিপুণ কীভাবে আমাকে স্ক্রিনে আটকে রাখতে পারলেন? এখানেই পরিচালকের মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন নিপুণ! একটা অতি পরিচিত গল্পকে দর্শকের সামনে ক্যামেরার রিলে বন্দি করে ছুঁড়ে দিয়েছেন হাজারো প্রশ্ন! একটা গল্প বলার বা দেখানোর ভঙ্গির কারণে যে কতটা মাধুর্যপূর্ণ হতে পারে, সেটাই তিনি প্রমাণ করেছেন ‘মহানগর’ দিয়ে। মাত্র একটা রাতের গল্প! তাও ঘণ্টা সাত বা আটেকের অথবা এর কিছু কম-বেশি সময়ের। কিন্তু এই গল্প দেখানোর ফাঁদে যে তিনি কত সুন্দরভাবে দর্শকের চোখ স্ক্রিনের ভেতর আটকে রাখতে পেরেছেন, এটাই তার সবচেয়ে বড় সার্থকতা!

ওসি হারুন উর রশীদ অর্থাৎ মোশাররফ করিমের অভিনয় অনবদ্য! শ্যামল মাওলাকে এর আগে ‘বুমেরাং’-এ দেখার সুযোগ হয়েছে। তখন থেকেই তিনি নজর কেড়েছিলেন। মহানগরের আফনান চৌধুরীর চরিত্রে তার প্রতিটা মুভমেন্ট ছিল প্রশংসনীয়! স্ট্রং পুলিশ অফিসারের চরিত্রে জাকিয়া বারী মম দুর্দান্ত! আবির হাসানের চরিত্রে খায়রুল বাসার সুন্দর। সরল এবং সাবলীল৷ ছোট্ট এক চরিত্রে নাসির উদ্দিন খান বেশ কমেডি রিলিফের কাজ করেছেন। তবে সাব ইন্সপেক্টর মলয় কুমারের চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ছিলেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসাধারণ! তানিম নূরের একাত্তরেও তিনি তার অভিনয় দ্বারা আকর্ষিত করেছিলেন। মহানগরেও তাই।

শামল মাওলা

একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র এবং এর দূর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন! একটা ঘুণেভরা সমাজ এবং একপেষী টাকার পাহাড় বানানো বিত্তশালীদের অপরাধ আর অপকর্মের বলি হওয়া অসহায় মানুষদের মধ্যে ঘটে যাওয়া যে চিত্রগুলোকে চমৎকার সিনেমেটোগ্রাফি, অসাধারণ গল্প বলার ভঙ্গী, দুর্দান্ত অভিনয়ের ভেতর দিয়ে দেখিয়েছেন আশফাক নিপুণ, তা যেকোনো সচেতন দর্শকের জন্যই বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠবার কথা। ৮ পর্বের এই ওয়েব সিরিজ তাই তৃষা বাড়িয়েছে দ্বিতীয় সিজন দেখার। শেষতক বোধহয় মহানগরের পরিচালক ‘টু বি কন্টিনিউড’ লিখে তেমনটাই ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন।

আট পর্বের এই সিরিজটির শেষ পর্যন্ত না দেখতে পারলে ফিনিশিং বুঝতে পারা কিছুটা মুশকিলই হওয়ার কথা। প্রথম কয়েকটা পর্ব দেখার পর যদি আপনি নিজের মনমতো কিছু একটা প্রেডিক্ট করে সময়ের অভাবে দেখা বন্ধ করে দেন, গ্যারান্টি দিয়ে বললাম, আপনি মিস করবেন! আপনার সকল প্রেডিকশন শেষ পর্বে এসে পরিচালক ধুলোর মতো উড়িয়ে দেবে এক নিমিষেই। আপনাকে করে তুলবে আরো বেশি তৃষ্ণার্ত!

নাসির উদ্দিন

যেকোনো সৃষ্টি তখনই আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করবে, যখন তা হৃদয়ে ধারণ করে সৃষ্ট অথবা নির্মিত হবে। আশফাক নিপুণকে আমি রাজনৈতিকভাবে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে জানি। সেই ছায়া তার কাজের মধ্যেও দেখতে পেলাম। মানুষ হিসেবে আপনি যখন মানবিক, সংবেদনশীল এবং সচেতন হবেন, এর প্রতিফলন আপনার কাজেও দেখা যাবে স্পষ্টভাবেই। নিপুণের সৃষ্ট চরিত্রের সংলাপ থেকেই বলি- “জীবনে দুইটা জিনিসই সত্য! এক, কর্ম। দুই, কর্মফল। বাকিটা মিলাইয়া নিও…”।

অভিনন্দন আশফাক নিপুণ। আপনার আরো কাজ দেখার অপেক্ষায় রইলাম। মহানগরের দ্বিতীয় সিজনের জন্য শুভ কামনা।


মন্তব্য করুন