‘চালবাজ’ নিয়ে যত কাণ্ড : বিশেষ দিনে আমদানি বা যৌথ নয়!
এবারের কলকাতা থেকে আমদানি করা ছবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার। বুধবার বিকেলে এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলেনে নতুন আন্দোলনের আভাস পাওয়া যায়। এর মাঝেই যুক্ত হয়ে গেল শাকিব খানের ভারতীয় সিনেমা ‘চালবাজ’।
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক অভিনেতা ফারুক বলেন, ‘এখন থেকে ঈদ, পূজা, পয়লা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবসসহ বছরের বিশেষ দিনগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা বা যৌথ প্রযোজনার কোনো ছবি প্রেক্ষাগৃহে চলতে দেওয়া হবে না। যদি দেশীয় কোনো ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত না থাকে, তবেই প্রেক্ষাগৃহ বাঁচাতে যৌথ প্রযোজনার বা আমদানি করা ছবি চলতে পারে।’
এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে কঠোর আন্দোলন ও কর্মসূচির ডাক দেবে চলচ্চিত্র পরিবার।
চলচ্চিত্র পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রিভিউ কমিটিকে চাপ দিয়ে বাংলাদেশের শাকিব খান ও ভারতের শুভশ্রী অভিনীত চালবাজ ছবিটির প্রিভিউ করানো হয়, যাতে ছবিটি সামনে পয়লা বৈশাখের মধ্যে আমদানি করা যায় এবং এ উপলক্ষে মুক্তি দেওয়া যায়।
অথচ ওই সময়ে স্থানীয় প্রযোজনার একাধিক বিগ বাজেটের সিনমা মুক্তি পাবে।
৬ এপ্রিল বা ১৩ এপ্রিলের মধ্যেই চালবাজ আমদানি করে মুক্তি দিতে চায় আমদানিকারক।
এদিকে আমদারিকারকরা এনেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার অভিযোগ।
‘চালবাজ’ রপ্তানির বিপরীতে আমদানির জন্য চলচ্চিত্র প্রযোজক কামাল কিবরিয়া লিপু তার এন ইউ আহমেদ ট্রেডার্সের মাধ্যমে আবেদন করেন এবং ছবিটি আমদানির জন্য ইতিমধ্যে ‘নিজের অজান্তে’ শিরোনামে একটি ঢাকার ছবি কলকাতায় রপ্তানি করেন।
চালবাজ আমদানির জন্য গত ৮ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। ওই দিন কলকাতা থেকে ছবির প্রযোজক অশোক ধানুকা ঢাকায় এসে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে মন্ত্রী চালবাজ এ দেশে প্রদর্শনের জন্য অশোক ধানুকাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সেই হিসেবে ৬ এপ্রিল ছবিটি মুক্তি দিতে প্রাথমিক প্রস্তুতি নেন আমদানিকারক। কিন্তু মন্ত্রীর উদ্যোগ সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘ সময় পার করে ২১ মার্চ অতিরিক্ত তথ্য সচিব ছবির আমদানি-রপ্তানি কমিটির সদস্যদের বৈঠকে ডাকে। ওই দিন বেলা ১১টায় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সচিব আসেন বেলা আড়াইটায়। তিনি এসে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই তাড়াহুড়া করে বৈঠক শেষ করেন বলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা অভিযোগ করেন। ফলে ৬ এপ্রিল ছবিটির মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় প্রদর্শক সমিতি নির্বাহী কমিটির বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় কর্মকর্তারা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ছবিটি দ্রুত আমদানির অনুরোধ জানাবেন। ওই দিন রাতে তারা ওই ছবির নায়ক শাকিব খানের সঙ্গেও জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকেও সাফটা চুক্তির অধীনে রপ্তানির বিপরীতে আমদানির ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৭ মার্চ প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ, প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ, উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন প্রমুখ তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে মন্ত্রী দৃঢ়প্রত্যয়ে ঘোষণা করেন কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের ছবি আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা সহ্য করা হবে না।
তিনি চালবাজ ছবিটি দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টকে নির্দেশ দেন। বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে। দুই বাংলায় ছবি আমদানি-রপ্তানিতে বাধা থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। বৈঠকে মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের শিল্পী শাকিব খান আর জয়া আহসান কলকাতার ছবিতে অভিনয় করে দেশের জন্য প্রশংসা ও পুরস্কার কুড়াচ্ছেন। এটি আমাদের দেশের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। তাই এক্ষেত্রে উৎসাহ আর সহযোগিতা থাকা উচিত। ওই দিন বিকালেই আমদানি-রপ্তানিকারকদের নিয়ে সচিব জরুরি বৈঠক করে ছবিটি আমদানির জন্য পদক্ষেপের কথা জানালেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকারককে এপ্রিল মাসে ছবিটি মুক্তি না দিতে বলা হয়।
সূত্র : প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন