চিত্রনাট্য আরেকটু গোছানো হলে পূর্ণতা পেতো
বছর কয়েক আগে অপরাজনীতির প্রভাবে আগুন সন্ত্রাস এই দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল,সে নিয়েই গল্প ‘দহন’র। ছোট ছোট গল্প একসূত্রে গাঁথা হয়েছে চিত্রনাট্যে।
গল্পের প্রয়োজনে অনেক চরিত্র এলেও মূলত ছবিটা নায়ক কেন্দ্রিক,বখাটে তুলাই এই ছবির মূল প্রাণ। এখন পর্যন্ত এই চরিত্রটি আমার দেখা এই বছরের সেরা পুরুষ চরিত্র, বখাটে তুলার কর্মকাণ্ড, প্রেম থেকে আগুন সন্ত্রাস,অতঃপর নিজেকে সমর্পণ। সব টা মিলেই চরিত্রটা বেশ শক্ত, এই চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই বেশ দক্ষ অভিনেতার প্রয়োজন, আর এই চরিত্রে সিয়াম নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন,তবে আরো ভালো হতে পারতো। ভাগ্য যদি সহায় থাকে বছরের জাতীয় পুরস্কারসহ সব পুরস্কার তিনি একাই নিয়ে নিতে পারেন। সিয়ামকে সাধুবাদ নিজেকে এভাবে পর্দায় আনার জন্য।
তুলাকে সঙ্গ দিতে এসেছে আরো নানা চরিত্র, তার মধ্যে প্রেমিকা আশা। এই চরিত্রে পূজা চেরী যথাযথ, তবে চরিত্রটা মেধানুযায়ী বিকশিত হয়নি।
এই সিনেমায় প্রচুর পার্শ্ব বা স্বল্প চরিত্র রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন মনিরা মিঠু, এককথায় অনবদ্য, বিশেষভাবে থাকবেন শিল্পী সরকার অপু। ফজলুর রহমান বাবু নিজেকে বিভিন্নভাবে ভাঙছেন এটা অত্যন্ত ভালো দিক, তবে চরিত্রটির গভীরতা আরো ভেবেছিলাম।
মহরতের পর থেকে যেই চরিত্রটি নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে, সেই চরিত্রটিই ছবিটিতে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেশ কয়েকজন সুপ্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী এই চরিত্রটি ছেড়ে দিয়েছিলেন, অবশেষে মম এই চরিত্রটি করেছেন, কিন্তু নজর কাড়তে পারেনি। অন্যান্য চরিত্রে জামিল সুদীপ, রাশেদ অপু, রাজ রিপাসহ অন্যান্যরা যথাযথ, তবে শিমুল খান ব্যর্থ হয়েছেন। অতিথি চরিত্রে তারিক আনাম খান সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি, যেটা পেরেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ।
ছবিতে গান রয়েছে মোট ৫টি, এর মধ্যে ধর্মীয় গানটি আর আনুশেহর কন্ঠে ‘খাঁচার ভিতর’ গানটি দারুণ, ‘সকাল হাসে’ গানটাও ভালো। ‘হাজির বিরিয়ানি’র কথা পরিবর্তন এনেছেন, একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে ‘প্রেমের বাক্স’ গানটি, তবে মুগ্ধতা এসেছে শেষে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতাটি। আবহ সংগীত বেশ জমানো, ভালো কাজ।
চিত্রগ্রাহক দারুণ কাজ করেছেন। বাস পোড়ানোর দৃশ্যটা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে, রায়হান রাফি বাণিজ্যিক নির্মাতা হিসেবে ভালোই, তবে গোল বাঁধিয়েছেন চিত্রনাট্যে, আরেকটু গোছানো ও বাস্তবসম্মত হলে ছবিটা পূর্ণতা পেতো। এর বাইরে রাফি সাহেব আরেকটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন, ছবিটাকে তিনি প্রোপাগান্ডা হতে দেননি।
ছবিটির গল্পের মূল ভাবনায় আব্দুল আজিজ সাহেবের নাম দেখলাম ,সঙ্গে দেলোয়ার হোসেন দিল আছেন সংলাপে। ছবিটির কাহিনী গড়ে উঠেছে ২০১৩-১৪ র প্রেক্ষাপটে,কিন্তু ‘নবাব’ সিনেমা উঠে এসেছে সিনেমায়, যা দৃষ্টিকটু।
চট্টগ্রামের আলমাসে দর্শক সংখ্যা আশাব্যঞ্জক, শুনেছি সারা দেশেই বেশ ভালোভাবে চলেছে। ছবিটি হিট হলে সিয়াম- পূজা জুটিটি দাঁড়িয়ে যাবে, ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুফল বয়ে আনবে। ছবিটির জন্য শুভকামনা রইলো।