‘চিত্রা মহল’ ভেঙে হবে মাল্টিপ্লেক্স ও সাধারণ হল
রাজধানীর হলটি গুলিস্তান থেকে নর্থসাউথ রোড ধরে সদরঘাট যেতে ইংলিশ রোডের মুখেই অবস্থিত ‘চিত্রা মহল’। ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটি ভেঙ্গে এ জায়গায় মার্কেট করার চিন্তাভাবনা করছে মালিকপক্ষ। তবে একটি মাল্টিপ্লেক্স ও একটি সাধারণ সিনেমা হল। খবর সারাবাংলা।
ঢাকা শহরের প্রথম ১০টি সিনেমা হলের একটি ‘চিত্রা মহল’। শুরুতে নাম ছিল ‘নাগর মহল’। তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ী নাগর পোদ্দার চালু করেছিলেন এই হল। স্বাধীনতার পর এটি শক্র সম্পত্তি হিসেবে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এরপর প্রখ্যাত নির্মাতা কাজী জহির এটি কিনে নেন। স্ত্রী অভিনেত্রী চিত্রা সিনহার নামে হলের নতুন নাম রাখেন ‘চিত্রা মহল’, ১৯৮৩ সালে। স্বাধীনতার আগে হলটি হিন্দি ও উর্দু ছবি চলতো।
নতুন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ‘চিত্রা মহল’-এর মহাব্যবস্থাপক ইকবাল ইউসুফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত আমরা হলটি এক প্রকার ভুর্তকি দিয়ে চালাচ্ছি। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে আমরা এটি বন্ধ করছি না। আমাদের পরিবার আজ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে সিনেমার ব্যবসা দিয়ে। তাই অন্য কিছু করার সুযোগ থাকলেও আমরা তা করছি না। কিন্তু এখন যেহেতু যুগ পাল্টেছে তাই এখানে আমরা একটি মার্কেট করবো। তবে সে মার্কেটে আধুনিক সিনেপ্লেক্স থাকবে। একই সঙ্গে একটি সাধারণ মানের সিনেমা হলও থাকবে।’
আধুনিক সিনেমা হলের পাশাপাশি কেন সাধারণ মানের হল রাখতে চাইছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের হলের এ পর্যন্ত সকল দর্শকদের প্রতি জানালেন কৃতজ্ঞতা। ‘আমাদের হলের লোকেশন তাতে এখানকার অধিকাংশ দর্শকই হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির। সদরঘাটের কুলি থেকে শুরু করে এ এলাকায় থাকা বিভিন্ন পাইকারি দোকান-মার্কেটের কর্মচারি, রিক্সাওলারা আমাদের মূল দর্শক। তাদের টাকায় আমরা দিনের পর দিন ব্যবসা করেছি। নতুন সিনেপ্লেক্সে তারা লুঙ্গি পরে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। এছাড়া পুরান ঢাকার অনেক স্থায়ী বাসিন্দারাও লুঙ্গি পরতে ভালোবাসেন। সব মিলিয়ে সাধারণ একটা হল রাখবো আমরা। আর পাশাপাশি আধুনিক হল তো থাকবেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ তহবিল ঘোষণা দিয়েছেন। সে তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ঋণের জন্য আবেদন করেছেন ৫৩ জন। যার পরিমাণ ৩৮০ কোটি টাকা। কিন্তু সে ঋণের জন্য আবেদন করেনি ‘চিত্রা মহল’।
আবেদন না করার কারণ হিসেবে ইকবাল ইউসুফ বলেন, ‘টাকার অভাবে আমরা সিনেমা হলে সিকিউরটি গার্ড রাখতে পারছি না। হল যতটুকু খোলা রাখতে পারছি ততটুকুতে যা আয় হয় তা দিয়ে কর্মচারীদের কোন রকমে বেতন দিই। কিন্তু ঋণ নিলে তো আমাদের মাথায় সুদের টাকার একটা বোঝা চলে আসবে। তাই আমরা চেয়েছিলাম প্রণোদনা, মানে অনুদানের মত। প্রয়োজনে সরকার তা ফেরত নিত।কিন্তু তা হত বিনা সুদে।’
আর্থিক সংস্থান হয়ে গেলে এ বছরই সিনেমা হল ভেঙ্গে মার্কেটের কাজ শুরু করে দিবেন বলেও জানালেন ইকবাল ইউসুফ।