জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৮৪-১৯৮৬)
১৯৮৪ : এই বছর সেরা চলচ্চিত্র, পরিচালক-সহ সর্বমোট ১৯টি শাখায় পুরস্কার প্রদান করা হয় :
১. সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র- আগামী
২. সেরা চলচ্চিত্র- ভাত দে
৩. সেরা পরিচালক- আমজাদ হোসেন (ভাত দে)
৪. সেরা চিত্রনাট্যকার- আমজাদ হোসেন (ভাত দে)
৫. সেরা সংলাপ রচয়িতা- আমজাদ হোসেন (ভাত দে)
৬. সেরা সংগীত পরিচালক- খন্দকার নুরুল আলম (চন্দ্রনাথ)
৭. সেরা অভিনেতা- রাজ্জাক (চন্দ্রনাথ)
৮. সেরা অভিনেত্রী- শাবানা (ভাত দে)
৯. সেরা সহ অভিনেতা- সিরাজুল ইসলাম (চন্দ্রনাথ)
১০. সেরা সহ অভিনেত্রী- আনোয়ারা (সখিনার যুদ্ধ)
১১. সেরা শিশু শিল্পী- আঁখি আলমগীর(ভাত দে)
১২. সেরা গীতিকার- মো. রফিকুজ্জামান (চন্দ্রনাথ)
১৩. সেরা গায়ক- সুবীর নন্দী (মহানায়ক)
১৪. সেরা গায়িকা- সাবিনা ইয়াসমিন (চন্দ্রনাথ)
১৫. সেরা চিত্রগ্রাহক (সাদাকালো)- মাহফুজুর রহমান খান (অভিযান)
১৬. সেরা চিত্রগ্রাহক(রঙ্গিন)- বেবী ইসলাম (নয়নের আলো)
১৭. সেরা সম্পাদক- মুজিবুর রহমান দুলু (ভাত দে)
১৮. সেরা শিল্প নির্দেশক- অঞ্জন ভৌমিক (ভাত দে)
১৯. সেরা শব্দগ্রাহক- এম এ বাসেত (ভাত দে)
আমজাদ হোসেনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ভাত দে’ সর্বোচ্চ ৯টি শাখায় পুরস্কার লাভ করে। বিউটি কুইন খ্যাত নায়িকা শাবানা পরপর চারবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়ে রেকর্ড করেন, বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে শুধুমাত্র তিনিই এই রেকর্ড অর্জন করেছেন। সেরা অভিনেতা বিভাগে জাফর ইকবাল ‘নয়নের আলো’র জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হলেও চুড়ান্তভাবে মনোনীত হন রাজ্জাক। ‘নয়নের আলো’ সিনেমার জন্য সংগীত বিভাগে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, এন্ড্রু কিশোরও প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছিলেন। নায়ক আলমগীর তনয়া আঁখি আলমগীর শিশু শিল্পী হিসেবে পুরস্কৃত হন। চিত্রগ্রাহক হিসেবে সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহফুজুর রহমান খান এই বছর প্রথম জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮৫ : এই বছর ১৩টি শাখায় পুরস্কার প্রদান করা হয়। জুরি বোর্ডের রায়ে কোনো চলচ্চিত্রকে যোগ্য মনে না করায় সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
১. সেরা পরিচালক- শেখ নিয়ামত আলী (দহন)
২. সেরা কাহিনীকার- শেখ নিয়ামত আলী (দহন)
৩. সেরা চিত্রনাট্যকার- ঈসমাইল মোহাম্মদ (মা ও ছেলে)
৪. সেরা সংগীত পরিচালক- আলম খান (তিন কন্যা)
৫. সেরা অভিনেতা- আলমগীর (মা ও ছেলে)
৬. সেরা অভিনেত্রী- ববিতা (রামের সুমতি)
৭. সেরা সহ অভিনেতা- আবুল খায়ের (দহন)
৮. সেরা সহ অভিনেত্রী- রেহানা জলি (মা ও ছেলে)
৯. সেরা শিশু শিল্পী- জয় (রামের সুমতি)
১০. সেরা গীতিকার- আলাউদ্দিন আলী (প্রেমিক)
১১. সেরা গায়িকা- সাবিনা ইয়াসমিন (প্রেমিক)
১২. সেরা চিত্রগ্রাহক- বেবী ইসলাম (প্রেমিক)
১৩. সেরা সম্পাদক- মুজিবুর রহমান দুলু (তিনকন্যা)
শেখ নিয়ামত আলীর ‘দহন’, কামাল আহমেদের ‘মা ও ছেলে’ ও জাফর ইকবাল প্রযোজিত ‘প্রেমিক’ এই তিনটি সিনেমাই ৩টি করে পুরস্কার লাভ করে। সেরা অভিনেতা বিভাগে সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়ক আলমগীর এই বছর প্রথম জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা সেরা অভিনেত্রী বিভাগে শেষবারের মত পুরষ্কার অর্জন করেন। শিবলী সাদিকের ‘তিনকন্যা’ সিনেমার জন্য সেরা গায়ক হিসেবে শানু ভট্টাচার্য ওরফে কুমার শানুর নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে উনি ভারতীয় নাগরিক জানার পর পুরস্কার বাতিল করা হয়। রাজ্জাক পরিচালিত ‘সৎ ভাই’ সিনেমার জন্য সেরা সহ অভিনেত্রী বিভাগে প্রবীন অভিনেত্রী মিনু রহমান পুরস্কার পাচ্ছেন এমন নিশ্চিত হওয়ার পরেও, পরবর্তীতে চুড়ান্তভাবে রেহানা জলির নাম আসে। তবে প্রশংসিত চলচ্চিত্র ‘দহন’ অপেক্ষাকৃত কম শাখায় পুরস্কৃত হওয়ায় জুরি বোর্ড সমালোচিত হয়।
১৯৮৬ : এই বছর ১৭টি শাখায় পুরস্কার প্রদান করা হয়।
১. সেরা চলচ্চিত্র- শুভদা
২. সেরা পরিচালক- চাষী নজরুল ইসলাম (শুভদা)
৩. সেরা চিত্রনাট্যকার- আলমগীর কবির (পরিণীতা)
৪. সেরা সংলাপ রচয়িতা- চাষী নজরুল ইসলাম (শুভদা)
৫. সেরা সংগীত পরিচালক- খন্দকার নুরুল আলম (শুভদা)
৬ .সেরা অভিনেতা (যৌথভাবে)- গোলাম মুস্তফা (শুভদা) ও ইলিয়াস কাঞ্চন (পরিণীতা)
৭. সেরা অভিনেত্রী (যৌথভাবে)- আনোয়ারা (শুভদা) ও অঞ্জনা (পরিণীতা)
৮. সেরা সহ অভিনেতা- আশীষ কুমার লৌহ (পরিণীতা)
৯. সেরা সহ অভিনেত্রী- জিনাত (শুভদা)
১০. সেরা শিশু শিল্পী- স্বপ্না (মায়ের দাবী)
১১. সেরা গীতিকার- মো. রফিকুজ্জামান (শুভদা)
১২. সেরা গায়ক- সুবীর নন্দী (শুভদা)
১৩. সেরা গায়িকা- নীলুফার ইয়াসমিন (শুভদা)
১৪. সেরা চিত্রগ্রাহক- সাধন রায় (শুভদা)
১৫. সেরা সম্পাদক- আমিনুল ইসলাম মিন্টু (আঘাত)
১৬. সেরা শিল্প নির্দেশক- আব্দুস সবুর (শুভদা)
১৭. সেরা শব্দগ্রাহক- এম এ বাসেত (শুভদা)
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলামের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শুভদা’ সর্বোচ্চ ১৩টি শাখায় পুরস্কার লাভ করলে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই রেকর্ড বলবৎ থাকে। প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেই জাতীয় পুরস্কার পান নব্বই দশকের আলোচিত নায়িকা জিনাত, যদিও এটিই তার শেষ জাতীয় পুরস্কার। সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী বিভাগে সেই সময়ের ডাকসাইটে নায়ক-নায়িকাদের হারিয়ে পুরস্কৃত হন প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী গোলাম মুস্তফা ও আনোয়ারা। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, নৃত্যশিল্পী নায়িকা অঞ্জনা, সংগীত শিল্পী নীলুফার ইয়াসমিন এই বছর প্রথম জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। অঞ্জনা ও নীলুফার ইয়াসমিনের এটিই ছিল শেষ জাতীয় পুরস্কার।