জিতের নতুন ছবিও দেখছে না দর্শক
যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত জিতের কিছু শাকিব খানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করলেও এবার বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়ল কলকাতা থেকে আমদানি করা এ নায়কের আনকোরা ছবি।
অনেক দিন ধরে সিনেমা হল মালিকদের দাবি ভারতের সঙ্গে একইদিনে সে দেশের সিনেমা মুক্তির। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিলেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কিন্তু এবার জিতের ‘বাজি’ মাত্র এক সপ্তাহ পর মুক্তি পেয়েও ততটা ভালো করতে পারেনি। ছবিটি এমন সময়ে মুক্তি পেল যখন বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ।
এ বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের খবরের শিরোনাম- দেশীয় পুরনো ছবির ‘অর্ধেক সেলও নেই’ জিতের নতুন ছবির।
সেখানে বলা হয়, দীর্ঘদিন পর আমদানির (সাফটা চুক্তি) মাধ্যমে শুক্রবার কলকাতার নায়ক জিতের একেবারে নতুন ছবি ‘বাজি’ বাংলাদেশে মুক্তি পেলেও ‘গ্রহণ করেনি’ দর্শক। দেশের একাধিক সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘বাজি’ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ব্যবসাও আশানুরূপ হয়নি। এর চেয়ে দেশের শীর্ষ চিত্রতারকা শাকিব খানের পুরনো ছবির দর্শক ও সেল দুটোই বেশী হয়। এমনটাই দাবী করলেন রাজধানী ও এর আশপাশের একাধিক হল কর্তৃপক্ষের।
জয়দেবপুরের বর্ষা সিনেমা হলের সার্বিক দায়িত্বে থাকা আবদুর রহমান বলেন, শুক্রবার তিন শো থেকে ২৭ হাজার টাকা সেল হয়েছে ‘বাজি’র। শনিবার হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। শাকিব খানের পুরাতন সিনেমা চালালে প্রথমদিন তিন শো থেকে কমপক্ষে ৩৫-৪০ হাজার টাকা সেল হয়!
তিনি বলেন, নতুন ছবি না থাকায় ‘বাজি’র আগে ২ সপ্তাহ শাকিবের পুরাতন ছবি ‘ডেয়ারিং লাভার’ ও ‘ভালোবেসে মরতে পারি’ চলেছিল। ১০ বছর আগের ২ ছবি চালিয়েও ‘বাজি’র চেয়ে ভালো ব্যবসা করে। আর শাকিবের নতুন ছবি এলে তো কথাই নেই! ‘বীর’ থেকে প্রথম সপ্তাহে ২ লাখ টাকার ব্যবসা করে। লকডাউনের মধ্যে সর্বশেষ ‘নবাব এলএল.বি’ লক্ষাধিক টাকার ব্যবসা করে।
তবে অন্যান্য সিনেমা হলের তুলনায় বর্ষায় ‘বাজি’র সেল ‘মোটামুটি ভালো’ উল্লেখ করে আবদুর রহমান, এখানে ‘বাজি’ চলছে শেয়ারিংয়ে। খরচ বাদে যা সেল হবে আমদানিকারক ও হল কর্তৃপক্ষ ফিফটি ফিফটি শেয়ার পাবেন। সেই হিসেব করলে মোটামুটি ভালোই। তবে আমরা আশা করেছিলাম নতুন সিনেমা হিসেবে আরও ভালো সেল হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না।
রাজধানীর মধুমিতায় ‘বাজি’র ব্যবসা খারাপ। পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা হলে জিতের কাটতি থাকলেও বাংলাদেশের হলে তেমনটি নেই। শনিবার সন্ধ্যার শো দেখে ইমরান হোসেন নামে এক দর্শক জানান, সন্ধ্যার শোতে পুরো হলে মাত্র ২৫ পারসেন্ট দর্শক ছিল!
রাজধানীর ‘শ্যামলী’ সিনেমা হলের ম্যানেজার আহসানউল্লাহ বলেন, জিতের এই সিনেমার দর্শক একেবারে নেই বলা যায়। ৮/১০ জন দর্শক নিয়ে শো চালাতে হচ্ছে। একেবারেই লস প্রজেক্ট। ২দিনে (শুক্র-শনিবার) শ’খানেক টিকেট বিক্রি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল, স্টাফদের খরচ পর্যন্ত উঠছে না। এখন দেশের বড় বাজেটের সিনেমাগুলো একে একে মুক্তি দেয়া দরকার।
বগুড়ার সর্বাধুনিক মধুবন সিনেপ্লেক্স চালু হয়েছে ‘বাজি’র মাধ্যমে। এর পরিচালক ইউনুস রুবেল মনে করেন, নতুন থিয়েটার হিসেবে মোটামুটি ব্যবসা হচ্ছে ‘বাজি’র। তবে শুক্রবারের তুলনায় শনিবার দর্শক কম ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্মীয় অস্থিরতায় দ্বিতীয় দিনে সেল কমে যায়। রবিবার এভারেজ দর্শক ছিল।
তিনি আরও বলেন, দেশের নতুন বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা দরকার। এই মুহূর্তে শাকিব খানের নতুন সিনেমা খুব মিস করছি। এছাড়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার নতুন সিনেমার প্রয়োজন ছিল। সবমিলিয়ে দেশের নতুন নতুন বাণিজ্যিক সিনেমাগুলোর মুক্তি দেয়া প্রয়োজন। মধুবন সিনেপ্লেক্স নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের অনেক বেশী আগ্রহ। নতুন সিনেমা পেলে তারা আবার হলে আসতো।
‘বাজি’ এদেশে আমদানী করে ৪৩ সিনেমা হলে মুক্তি দিয়েছে তিতাস কথাচিত্র। অংশুমান প্রত্যুষ পরিচালিত এ ছবিটি জিতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জিৎ ফিল্মওয়ার্কস এর। ছবিটি জুনিয়র এনটিআর-রাকুল প্রীতের তেলেগু ব্লকবাস্টার ‘নান্নাকু প্রেমাথো’র রিমেক।
‘বাজি’ ছবিতে জিতের নায়িকা মিমি চক্রবর্তী। এই সিনেমার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমঙ্গে দেয়া হয়েছে ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ কয়েক বছরের পুরোনো ছবি ‘রাত্রির যাত্রী’।