Select Page

বাণিজ্যিক বাংলা ছবির অন্যতম কাণ্ডারি এহতেশাম

বাণিজ্যিক বাংলা ছবির অন্যতম কাণ্ডারি এহতেশাম

এহতেশামের কত পরিচয়! একাধারে বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা— সর্বোপরি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম দিকপাল। যার হাত ধরে এসেছে অসংখ্য নতুন মুখ। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।

শাবানা ও এহতেশাম

পুরো নাম আবু নূর এহতেশামুর রহমান, জন্ম ১৯২৭ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকার বংশাল রোডে। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুল ও আরমানিটোলা স্কুলে। পড়াশোনা শেষে প্রথম কর্মজীবনে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দেন। তবে পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে জড়িয়ে পড়েন এবং এখানেই  জীবনের শেষ অবধি পর্যন্ত নিজেকে জড়িত রাখেন।

এহতেশাম ১৯৫০ সালে প্রথমে প্রদর্শক হিসেবে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন লালমনিরহাটে একটি হল লিজ নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু করেন। এরপর নাটোর ও সান্তাহারে দুটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৫৭ সালে গঠন করেন প্রযোজনা সংস্থা লিও ফিল্মস। পরবর্তীতে নাম লেখান পরিচালনায়।

তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘এদেশ তোমার আমার’ (২৫/১২/১৯৫৯)। এরপর রাজধানীর বুকে, সাগর (উর্দু), চকোরী (উর্দু), চকোরী (বাংলা ডাবিং), চাঁদ আউর চাঁদনী (উর্দু), পীচ ঢালা পথ, চান্দা, দূরদেশ থেকে নব্বই দশকেও চাঁদনীর মতো একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন।

শুধু সফল সব চলচ্চিত্রই নয়— অনেক দর্শকপ্রিয় তারকাদের আবিস্কারকও তিনি, যাদের মধ্যে নায়ক আনিস (খান আতাউর রহমান, এদেশ তোমার আমার), রহমান (রাজধানীর বুকে), আজিম (এদেশ তোমার আমার), নাদিম (চকোরী), নাঈম (চাঁদনী), নায়িকা শবনম (এদেশ তোমার আমার), শাবানা (নতুন সুর), শাবনাজ (চাঁদনী), শাবনূর (চাঁদনী রাতে) অন্যতম।

দিলীপ কুমারের সঙ্গে এহতেশাম

এ ছাড়া আশীষ কুমার লোহ, গোলাম মুস্তাফা, শওকত আকবরদের মতো অভিনেতারাও  এসেছেন এহতেশামের হাত ধরে। বিখ্যাত সুরকার রবীন ঘোষ, করিম শাহাবুদ্দিনকে তিনিই প্রথম সুযোগ দিয়েছেন। ‘রাজধানী বুকে’ ছবিতে রবীন ঘোষের পাশাপাশি দেশের প্রথম মহিলা সংগীত পরিচালক হিসেবে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমানকেও তুলে ধরেছিলেন তিনি। রবিন ঘোষ ও ফেরদৌসী রহমানের যৌথভাবে করা সেই ছবির বিখ্যাত গান ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে’ সময়কাল পেরিয়ে চিরদিনের সম্পদ হয়ে আছে। তা ছাড়া গানটি দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রথম হিট গান হিসেবেও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। গানটির গীতিকার কে জি মোস্তফারও আবিষ্কারক ছিলেন এহতেশাম সাহেব।

মোট কথা সবকিছু মিলিয়ে সিনেমার যে কমার্শিয়াল ভিত তা তিনিই তৈরি করে গেছেন, যার ফলস্বরূপ চলচ্চিত্রের সবাই তাকে শ্রদ্ধাভরে ‘ক্যাপ্টেন’ উপাধি দিয়েছিলেন। সেই হিসেবে আজও তার নামের আগে ‘ক্যাপ্টেন এহতেশাম’ বলা হয়।

নাঈম ও পরিচালক আজিজুর রহমানের সঙ্গে এহতেশাম

ব্যক্তি জীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের সফল পিতা ছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মুস্তাফিজ তার ছোট ভাই, চিত্রপরিচালক মুশতাক তার ছেলে, চিত্রপরিচালক ইশতিয়াক তার ভাতিজা, ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান তার মামাতো ভাই, পরিচালক ই আর খান তার ছোট মামা ও স্থির চিত্রগ্রাহক আখুনজাদা ফয়জুর রহমান বড় মামা৷ একমাত্র মেয়ে ফারজানাকে বিয়ে দেন পাকিস্তানের সুপারস্টার নাদিম বেগের সঙ্গে।

এহতেশাম কাজের প্রতি নিষ্ঠা, মেধা-মনন দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে করেছেন সমৃদ্ধ। বাংলা চলচ্চিত্রকে বাণিজ্যিক ও শিল্পতে করেছেন সমাদৃত। আমাদের চলচ্চিত্র যত দিন থাকবে তত দিন কান্ডারি এহতেশামের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।


মন্তব্য করুন