Select Page

সাবা
জীবন মানেই শ্বাস নেওয়া নয়

<div class="post-subheading">সাবা</div>জীবন মানেই শ্বাস নেওয়া নয়

জার্মান ফিলোসফার ফ্রেডরিক নিৎসে বলেছেন– যার বেঁচে থাকার কারণ আছে, সে প্রায় যেকোনো কষ্ট সহ্য করতে পারে।

সাবা’ দেখার পর আমার এই ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি হলো। ‘সাবা’ মূলত আমাদের বেঁচে থাকাটাকেই সেলিব্রেট করে। কীভাবে? জানতে হলে দেখতে হবে মাকসুদ হোসেন পরিচালিত এবং মেহজাবীন চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচী ও মোস্তফা মনোয়ার অভিনীত সিনেমাটি।

‘সাবা’র গল্প সরল, অথচ স্পর্শকাতর। ছোটবেলা থেকে প্যারালাইজড মাকে নিয়ে এক তরুণীর জীবনসংগ্রামই এর মূল উপজীব্য। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই সাবা মায়ের দেখাশোনা করে আসছে। সাবার কাছে মা-ই তার বেঁচে থাকার একমাত্র উপলক্ষ। আবার মায়ের কাছে মেয়েই তার শান্তি, তার আশ্রয়। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি চান, সাবা যেনো ভালো থাকে। এই মা-মেয়ের সম্পর্কেই ধরা দেয় জীবনের খুঁটিনাটি সুখ–দুঃখ। ছোট ছোট ইচ্ছেপূরণ, পারিবারিক চাপে লড়াই, বিশ্বাসভঙ্গের তিক্ততা—সব মিলিয়েই সাবার সংগ্রাম। দিনশেষে সে হাঁপিয়ে ওঠে বটে, কিন্তু মায়ের জন্য তার চেষ্টার কমতি থাকে না। কারণ তার কাছে এই সংগ্রামই বেঁচে থাকার উদযাপন। আর হয়তো সেই উপলক্ষই একসময় তাদের মুক্তি এনে দেয়। স্টিভ জবস যেমন বলেছিলেন—“তোমার সময় সীমিত, তাই অন্যের জীবন বাঁচাতে তা নষ্ট করো না।” সাবার যাত্রাও যেনো সেই সত্যের প্রতিফলন। তাই হয়তো লাল সোয়েটার কোনো একসময় সবুজ রঙ ধারণ করে।

সিনেমায় ‘সাবা’ চরিত্রে মেহজাবীন চৌধুরী ছিলেন দুর্দান্ত। সাধারণত এ ধরনের চরিত্রে লিড অভিনেত্রীরা একরকম বিষণ্ণ আবহে আটকে যান। কিন্তু মেহজাবীন তার এক্সপ্রেশনে রেখেছেন সূক্ষ্ম ব্যালেন্স, যা তাকে আলাদা করেছে। রোকেয়া প্রাচী অসুস্থ মায়ের চরিত্রে অসাধারণ ছিলেন। আর মোস্তফা মনোয়ারও ‘অংকুর’ চরিত্রে শক্তপোক্ত অভিনয় উপহার দিয়েছেন।

টেকনিক্যালি ‘সাবা’ ভীষণ সমৃদ্ধ। বরকত হোসেন পলাশের সিনেমাটোগ্রাফি ব্যস্ত নগরজীবনকে দারুণভাবে ক্যাপচার করেছে। কালার গ্রেডিং চোখের আরাম দিয়েছে, আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দৃশ্যের আবেগকে আরও গভীর করেছে।

সব মিলিয়ে, মাকসুদ হোসেন পরিচালিত ‘সাবা’ একাধারে জীবনের গল্প, আবার বেঁচে থাকার কারণ খোঁজার যাত্রা। আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বেঁচে থাকা মানেই শুধু দম নেওয়া নয়, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে অর্থ, সম্পর্ক আর উদযাপন। That’s it!


Leave a reply