জেনেশুনে কেন এমন সিনেমা তৈরি হয়?
একের পর এক সিনেমা বানাচ্ছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন তিনি। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসাহাসি হয়, দর্শকও মেলে না। তারপর এমন সিনেমা তৈরি হচ্ছে। তার সাম্প্রতিক সিনেমা ‘ঘর ভাঙ্গা সংসার’ নিয়ে এই প্রশ্ন উঠেছে। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে মনে হয়, দর্শক এখন এমন সিনেমা চায় না জেনেও বন্ধ নেই সাবেকী গল্প ও নির্মাণের এ সিনেমা।
প্রকৌশলী সুলতান। স্ত্রী, এক সন্তান নিয়ে মফস্সল শহরে চাকরি করে। সৎভাবে জীবন যাপন করে। অসাধু ঠিকাদারদের চাহিদা পূরণ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে একসময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে আসে। যোগ দেয় একটি আবাসন প্রকল্পে। তার সততার জন্য আবাসন প্রকল্পের মালিক জুলির ভালো লাগে সুলতানকে। তাকে বিয়ে করতে চায়। জুলি তার চাচাকে বিষয়টা জানায়। কিন্তু সুলতান রাজি নয়। একদিন সুলতানের স্ত্রী আঁচল ছিনতাইকারীর ছুরিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসার জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা লাগবে। চাচা সুলতানকে শর্ত দেয়, জুলিকে বিয়ে করলে তার স্ত্রীর সব খরচ বহন করা হবে। স্ত্রীকে বাঁচাতে সুলতান রাজি হয়। বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। এমন সময় মিশা সওদাগর এসে সুলতানের এমন কিছু তথ্য জুলির কাছে প্রকাশ করে, বিয়ে আটকে যায়। নতুনভাবে গল্পের মোড় নেয়। ‘ঘর ভাঙ্গা সংসার’ ছবির সেই বাকি অংশ দেখার জন্য দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতে হবে।
দেশের প্রায় ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে পারিবারিক গল্পের ছবি। গতানুগতিক গল্পের সূত্রেই সিনেমাটি তৈরি হয়েছে। ছবিটির বাজেট প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
বেশ কয়েক বছর ধরে সিনেমার গল্প বলার ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। আধুনিক কারিগরি, নির্মাণশৈলীর পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছেন দর্শকের রুচিরও। বর্তমান বাংলা সিনেমা একটা প্রতিযোগিতা তৈরির চেষ্টা করছে।
সেই ক্ষেত্রে কম বাজেটের এ ধরনের গতানুগতিক গল্পের সিনেমা এ সময়ে এসে প্রেক্ষাগৃহে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে কি না, এ ব্যাপারে মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ‘এটি ঠিক, দিন দিন ছবির গল্পে, নির্মাণে পরিবর্তন আসছে। এই ছবি প্রায় দুই বছর আগের। তবে বাজেট যা–ই হোক, কনটেন্ট ভালো আছে। ছবিতে গল্পের নাটকীয়তা আছে, টান টান ব্যাপার আছে। ছবির গানগুলোও ভালো। ছবির একটি গান প্রকাশিত হয়েছে। দুই দিনে কয়েক লাখ ভিউ হয়ে গেছে। দর্শকের রুচির পরিবর্তন হলেও এ ধরনের পারিবারিক গল্পের ছবি এখনো পরিবার নিয়ে অনেক দর্শকই দেখতে চায়। ছবিটি নিয়ে আশা একেবারই ছেড়ে দিচ্ছি না।’
এ ছবিতে ‘সুলতান’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডিপজল। অনেক দিন ধরেই এ ধরনের গল্পে, এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন ডিপজল। তিনি বলেন, ‘একসময় আমি ভিলেন করতাম। “কাজের মানুষ” ছবি দিয়ে আমি ইতিবাচক চরিত্রে কাজ শুরু করি। পারিবারিক গল্পের অসংখ্য ছবি করেছি আমি। এ ধরনের আমার অনেক ছবিই সুপারহিট হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই ছবিও ভালো যাবে।’
ছবিতে জুলি চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা শিরিন শিলা। তিনিও স্বীকার করলেন, এটি বাংলা সিনেমার একটু পেছনের সময়কার সামাজিক গল্পের ছবি।
বলেন, ‘সিনেপ্লেক্স বা সব শ্রেণির দর্শকের জন্য নয় এই ছবি। এ ধরনের গল্পের ছবি দেখতে দর্শক একসময় প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করত। এখনো যে সেই দর্শক একেবারেই ফুরিয়ে গেছে, ব্যাপারটি তা নয়। এ ধরনের ছবিতে ডিপজল ভাইয়ের একটা বিরাট দর্শক-ভক্ত আছে। বিশেষ করে নিম্ন, মধ্যবিত্ত দর্শকের কাছে বেশি পছন্দ হবে ছবিটি।’
ছটকু আহমেদের চিত্রনাট্যে ‘ঘর ভাঙ্গা সংসার’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, আঁচল, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু (বড়দা মিঠু), শাহেন শাহ, মধু প্রমুখ। ছবিটি প্রযোজনা করেছে অনুপম ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল।