
টাকার জন্য বানালেন ‘বরবাদ’, মনে রাখার মতো নয়
[ডিসক্লেইমার: ১৮+, হালকা স্পয়লার]
ঈদের সবচেয়ে বিগ বাজেট ও প্রযোজকের মতে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘বরবাদ’। ঈদের প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো, কিন্তু ‘বরবাদ’ নিয়ে ক্রেজ কমেনি স্টার সিনেপ্লেক্সে। নতুন নির্মাতা হিসেবে মেহেদী হাসান হৃদয়ের কাছে খুব আশা নিয়ে হলে যাইনি। বড় গ্র্যাঞ্জার ও লার্জ অ্যারেঞ্জমেন্ট টিজার ও গান দেখে আগ্রহও তুঙ্গে ছিলো। তবে দেখার পর বলতে কষ্টই হয়— হৃদয় শুধু টাকা তোলার জন্যই সিনেমা বানালেন, মনে রাখার জন্য না।
‘প্রিয়তমা’র বাজেট এর চেয়েও কম ছিল, কিন্তু ইতিহাস করেছে গল্পের জন্য। ‘তুফান’ গল্প আহামরি না হলেও শাকিব একাই তুলে দিয়েছেন। এবারও তাই করলেন। কিন্তু ‘দরদ’ পর্যন্ত শাকিবের যে ক্যারেক্টার বদলের গ্রাফ, নিজেকে ভাঙ্গার সুযোগ সেটা আবার নষ্ট করলেন।

বড় বাজেট, নতুন আগ্রহী প্রযোজক পেয়ে হয়তো টাকা তুলে দিয়ে খুশি করবেন কিন্তু ‘তাণ্ডব’ বা অন্য যে কেউ কম বাজেটে এর চেয়ে একটু ভাল গল্প দিলেই ‘বরবাদ’কে ভুলে যেতে বাধ্য।
এই গল্প না হয়েছে ‘এনিম্যাল’, না হয়েছে সেটাকে বাদ দিয়ে কিছু। একটু ‘এনিম্যাল’ নিয়ে পুরনো দিনের রিভেঞ্জ ড্রামার টুকরো একসঙ্গে করে কিছু একটা বানানো হলো। আরিয়ান মির্জা পাওয়ারফুল বাবা আদিব মির্জার একমাত্র ছেলে। সে ঢাকায় থেকে যা খুশি করে। যা খুশি ঢাকার অনেক ধনীর ছেলেই করে কিন্তু তারাও আরিয়ানকে দেখলে হাসবে। রেইপ, কোকেন আর ভায়োলেন্স এই তিন ছাড়া শাকিবকে আর কিছু দেয়া গেলো না। নেই তার কোন শৈশব, নেই বাবা মায়ের সাথে একটা ভাল দৃশ্য বা বখে যাবার কারণ, নেই শহরে কোন আইনশৃংখলা। যেভাবে পুরো সিনেমায় পুলিশকে দেখানো হলো, গালিগালাজ করা হলো— পুলিশের কেউ বউ নিয়ে সিনেমা দেখতে গেলে লজ্জায় পড়বে।
এই আরিয়ান হাজারো অপরাধ করলেও বাবা কিছু বলে না। একদিন হঠাৎ করে নীতু নামের একটি প্রেমে পড়ে যায়। বড় কোন ধাক্কা না, নীতু আলাদা কিচ্ছু না করে জাস্ট একটা চ্যারিটির জন্য ডোনেশন চাইতে যায়। তাতেই আরিয়ান তার জন্য পাগল। এরপর আরিয়ান আর নীতুর প্রেম পূর্ণতা পেলো কী না, তাই বাকি গল্প।
আমি নিশ্চিত, এই গল্প অন্য কোনো নায়ক অল্প বাজেটে দেখালে হাজারটা গালি খেতো। শাকিবের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ফ্যান, উইক পয়েন্টও তারাই। পাশের দেশের কোন স্টারের থেকে শাকিবের স্টারডম কম না। তবু শাকিবকে বিজয় থালাপাতি, সুরিয়া কিংবা আল্লু অর্জুনের মতো এক্সপেরিমেন্ট করতে পারছে না কেউ, সবাই তাকে মহেশ বাবু কিংবা রবি তেজাই বানিয়ে রাখছে, ফ্যানরাও তাতেই লাফাচ্ছে।
ভায়োলেন্স নিয়ে আমার আপত্তি নেই; কিন্তু বেশি দেখাতে গিয়ে ভায়োলেন্স হয়েছিলো হাসির খোরাক। কোপ কিংবা গুলি যেভাবেই হোক, রক্ত পড়ছে যা-তা ভাবে। কিছু সিনে কী হবে, ডায়লগে কী বলবে সব দর্শক আগেই বলে দিচ্ছিলো। ইধিকা পল যেন অনন্ত জলিলের সেই ছলনাময়ী বর্ষা হয়েই

রইলেন। যীশুর জন্য আফসোস, সুযোগ থাকলেও তিন-চারদিনের শিডিউলে ক্যারিয়ারে যোগ করার মতো রোল করতে পারলেন না। আসলেন, ভায়োলেন্স করলেন, বিয়ে করতে গিয়ে মার খেলেন। আরেকজন তো ‘মুইত্তা দিছে’ বাদে কোন ডায়লগই পেলেন না বলার মতো। অনেক ঝানু অভিনেতার সমাবেশ, কারো ভালো বিল্ডআপ নাই, ডেপথ নাই। মিশা আর ইধিকা পলকেই কিছুটা এগিয়ে রাখা যায়। শাকিবের বিন্দুমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিল না অভিনয়ে। এসব ১০-১৫ বছর আগের ক্রেজি শাকিব থেকে খুব আলাদা কিছু না। শুধু স্টাইল আর অ্যারেঞ্জমেন্ট বেড়েছে এই তো।
মরুভূমির মাঝে ‘জালিমা’ টাইপের গানটা অতিরিক্ত, বাকিগুলো চলে। অ্যাকশনের সাথে গান ‘এনিম্যালের’ মতো এখানেও বোরিং কাটাইছে, কত আর ভায়োলেন্স দেখা যায় অর্থহীন! ইন্ডিয়ান সেট ডিজাইন, প্রডাকশন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু রিহ্যাবে গিয়েও কারো চেহারা ছবির কোন চেঞ্জ নাই, এমনটা আগে দেখিনি। যীশুর সাথে শাকিবের দ্বন্দ্বটা না জমার আফসোস থেকেই গেলো। বিজিএম অ্যাভারেজ তবে হলে ভাল্লাগছে।
আরেকটা কথা, এই সিনেমা মোটেই ফ্যামিলি নিয়ে দেখার মত না। নারীকে একপেশেভাবে ছোট করা, প্রচুর কোকেনের টান, রেইপ কিংবা ভায়োলেন্স বাদেও মিউট করে দেয়া মাত্রাতিরিক্ত গালিগালাজ আছে। বাচ্চাদের না দেখাই ভালো। আর ম্যাচুরড দর্শককে আমরা বেটার কিছু দেখাতে না পারলে তারা বিনোদন খুঁজবে কোথায়!
রেটিং: ৬.৫/১০