
টিভিতে ‘তিন গোয়েন্দা দেখে জমে বরফ’ হয়ে গিয়েছিলেন রকিব হাসান
বছর দশেকর আগের কথা। তখন মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচার শুরু হয়েছিল রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা’ অনুসরণের সিরিজ। যা সদ্য প্রয়াত লেখকেরই একদমই পছন্দ হয়নি। পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার তিন গোয়েন্দার নাটক দেখে আমি পাথর না, জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলাম।‘

২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রচার শুরু হয় তিন গোয়েন্দা। এর কাহিনি বিন্যাস ও নাট্যরূপ দেন মাজহারুল হক পিন্টু। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেন আবুল হোসেন খোকন। সেখানে কিশোর পাশার চরিত্রে অভিনয় করেন কাব্য, রবিন মিলফোর্ড চরিত্রে বাঁধন এবং মুসা আমান চরিত্রে অয়ন। কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন লোকেশনে চিত্রায়িত ধারাবাহিকটি সপ্তাহে দুদিন প্রচার হতো। কিন্তু শুরু থেকেই দর্শক প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক। এমন তিন গোয়েন্দার সৃষ্টা রকিব হাসানও এটি পছন্দ করেনি।
পরে কিশোর আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তিন গোয়েন্দার নাটক বানাতে দিতে আমি মোটেও আগ্রহী ছিলাম না, এখনো আগ্রহী না। আমি জানতাম, তাতে কিশোর-মুসা-রবিনের আসল চেহারাগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে না। যারা তিন গোয়েন্দার ভক্ত, তাদের ভালো লাগবে না। কিন্তু পরিচালক খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন যে ‘আমি এমন একটা জিনিস বানাব রকিব ভাই, আপনার ভীষণ পছন্দ হবে।’ আমি বলেছি, ‘আমার যদি চল্লিশ ভাগও পছন্দ হয়, তাহলে আমি আপনাকে থ্যাংকস জানাব।‘”
রকিব হাসান এরপর বলেন, “টিভিতে তিনটা পর্ব দেখার পরে তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এটা কী হলো?’ তিনি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘এটা তো অত্যন্ত জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রশংসা জানিয়ে অনেক চিঠি আসে।’ অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। আমার তিন গোয়েন্দার নাটক দেখে আমি পাথর না, জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপরে আমি আর যোগাযোগ করিনি তার সঙ্গে। কোনো পর্বও দেখিনি।”
গত ১৫ অক্টোবর কিডনির ডায়ালাইসিস চলাকালীন সময়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান রকিব হাসান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর ১০ মাস।
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকেই স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকেই বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।
সেবা প্রকাশনী থেকেই তার লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্লাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশী সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকদের প্রিয় লেখক।