ট্রেনিংয়ের নামে এফডিসি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ!
ট্রেনিংয়ের নামে বিদেশ ভ্রমণে মত্ত এফডিসির সর্বোচ্চ প্রশাসক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। সম্প্রতি এমন অভিযোগ এনেছে যুগান্তর।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য আমেরিকা, জার্মান ও জাপানে লোকবল পাঠানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে রেড ক্যামেরা (RED) অপারেশন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণ। কিন্তু ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট দক্ষ লোক না পাঠিয়ে খোদ এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষই ট্রেনিং নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এই ট্রেনিংয়ের জন্য আমেরিকায় ৫ জন লোক ১০ দিন অবস্থান করবেন। যার জন্য খরচ হবে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার (১১ লাখ টাকারও বেশি)। ক্যামেরা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ট্রেনিংয়ের নামে আমেরিকা ভ্রমণে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক এফডিসি থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মামুন-অর-রশীদ (সহকারী প্রকল্প পরিচালক), মো. মনিরুজ্জামান (সহকারী প্রকৌশলী)। মূল নামের পাশাপাশি বিকল্প নামের তালিকায় রয়েছেন তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মো. শামীম (সম্পাদনা প্রধান), আলমগীর হোসেন (স্টোর কিপার)। এছাড়াও তাদের সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আরও একজন সংযুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
উল্লিখিত নামের কেউ ক্যামেরাবিষয়ক কোনো কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একই প্রকল্পের আওতায় ক্যামেরা লেন্স অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণের জন্য একটি টিমকে জার্মান পাঠানো হবে। সেখানে তারা সাতদিন অবস্থান করবেন। যার জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার মার্কিন ডলার (১৭ লাখ টাকারও বেশি)। দুইভাবে বিভক্ত এই ট্রেনিংয়ের প্রথম লটের জন্য মূল নাম প্রস্তাব করা হয়েছে লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ (প্রকল্প পরিচালক), খান মো. মশিউল আলম (সিনিয়র ক্যামিস্ট, ল্যাব শাখা) ও মো. আইয়ুব আলী (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী)। বিকল্প নামে আছেন লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ (প্রকল্প পরিচালক), খান মো. মশিউল আলম (সিনিয়র কেমিস্ট, ল্যাব শাখা) ও হারুন-অর-রশীদ (স্টোর কিপার)।
একই ট্রেনিংয়ের দ্বিতীয় লটও হবে জার্মানে। তিনজনের একটি দল সেখানে সাতদিন অবস্থান করবে। যার জন্য ব্যয় হবে ২২ হাজার মার্কিন ডলার। এর জন্য মূল নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মামুন-অর-রশীদ (সহকারী প্রকল্প পরিচালক) ও আকলিমা আক্তার (সহকারী প্রকৌশলী)। বিকল্প নামে আছেন তপন কুমার ঘোষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মামুন-অর-রশীদ (সহকারী প্রকল্প পরিচালক) ও মো. শামীম (সম্পাদনা প্রধান)।
এখানেও ক্যামেরাসংশ্লিষ্ট কারো নামই লেন্স অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ট্রেনিংয়ে নেই।
এছাড়াও সেন্ট্রাল স্টোরেজ রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য ট্রেনিংয়ে লন্ডন যাওয়ার জন্য আগে থেকেই অনুমোদিত ছিলেন মো. আজম (পরিচালক, কারিগরি ও প্রকৌশল) ও নুরেন নবী (শব্দ গ্রহণ প্রকৌশলী)। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাদের বাদ দিয়ে নতুনভাবে লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ (প্রকল্প পরিচালক) ও মো. আলাউদ্দীন (প্রিন্টার, ল্যাব শাখা) নাম প্রস্তাব করেন। এখানেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ লোকদের উন্নত প্রশিক্ষণ না দিয়ে বিদেশ ভ্রমণের জন্য নাম পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষণীয়।
এ মুহূর্তে এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিংয়ের জন্য জাপানে অবস্থান করছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শরাফ উদ্দীন ও এফডিসির সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। তাদের ট্রেনিংয়ের বিষয় হচ্ছে ক্যামেরা জুম লেন্স অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ। গত ২৮ আগস্ট এ তিনজন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জাপান গিয়েছেন। ওখানে তারা সাতদিন অবস্থান করবেন। এই ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যয় হচ্ছে ২০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ১৬ লাখ টাকা)।
প্রশ্ন হলো, এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ যে তিনজন কর্মকর্তা এ মুহূর্তে ক্যামেরা জুম লেন্সের ওপর জাপানে প্রশিক্ষণ নিতে অবস্থান করছেন তাদের এই ট্রেনিং একটি আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন কাজে লাগবে?