ডিস্টোপিয়ান ‘পেয়ারার সুবাস’
নুরুল আলম আতিকের কাজের ধরনের মধ্যে নিজস্বতা নাটক, টেলিফিল্ম থেকেই ছিল। যে সময় তিনি বিকল পাখির গান, চতুর্থ মাত্রা, দে দৌড়, সাইকেলের ডানা, পলায়নপর্ব, সিনড্রেলার মতো কাজগুলো করেছিলেন তখন থেকেই তাঁর কাজ সমসাময়িক নির্মাতাদের থেকে আলাদা হয়ে ওঠেন। সেই আলাদা হয়ে ওঠাই একজন নুরুল আলম আতিকের নিজস্বতা।
চলচ্চিত্র তিনি কয়েকটি করেছেন এবং সেখানেও নিরীক্ষাপ্রবণ নির্মাতা হয়ে উঠেছেন। ডুবসাঁতার, লাল মোরগের ঝুঁটির পাশাপাশি ‘পেয়ারার সুবাস’ ছবিতেও সুনির্দিষ্ট নিরীক্ষাপ্রবণতা তাঁর চলচ্চিত্রে বিদ্যমান।
‘পেয়ারার সুবাস’-এর ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ারে বিদেশি সাংবাদিক নুরুল আলম আতিককে প্রশ্ন করেছিলেন ‘ডিস্টোপিয়ান রিয়েলিটি’ খুঁজে পেয়েছেন ছবিটিতে। আতিক তখন চমকে উঠেছেন যে তিনি কীভাবে সেটি আন্দাজ করতে পেরেছেন ছবির বক্তব্যে।
যে জীবন আমরা কল্পিত বলে ভাবি সেটি যখন রাষ্ট্রচেতনার মধ্য দিয়ে দেখানো হয় যাকে স্বর্গরাজ্য মনে হয় সেই সেটাই ‘ইউটোপিয়া’ এবং এর বিপরীতে যখন রাষ্ট্রচিন্তায় নারকীয় বিষয়ের উৎপাত ঘটে তখন সেটি ডিস্টোপিয়ায় পরিণত হয়। ‘পেয়ারার সুবাস’-এ এই ডিস্টোপিয়া দেখানো হয়েছে যেখানে অস্তিত্বের গল্পে যে জীবন মধুর হবার কথা তা নারকীয় যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। নুরুল আলম আতিক তাঁর নিরীক্ষায় শতভাগ সফল হয়েছেন।
তারিক আনাম খান ও জয়া আহসানের জীবনে যে নতুন সময়টি শুরু হয়েছিল তার সাথে তাঁর মেয়ে সুষমা আলমের মনস্তাত্ত্বিক যে দ্বন্দ্ব সেটিই এ ছবির গল্প এবং সেখানে আহমেদ রুবেলের উপস্থিতি দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির চূড়ান্ত রূপের উপস্থাপন ছিল। অত্যন্ত সরল গল্প কিন্তু ভাবনার জগতে বাস্তবসম্মত ও জটিল।
বিরতির আগ পর্যন্ত তারিক আনাম ও জয়া আহসানের অভিনয়ের রাজত্ব আর বিরতির পরে আহমেদ রুবেলের গুরুত্ব ছবিটিকে বৈচিত্র্য দিয়েছে।
আতিকের অন্যান্য ছবির মতো এ ছবিতেও ক্যামেরার বিভিন্ন কাজ বক্তব্য দিতে চায়। কিছু শটে চোখ আটকে যায় যার প্রতীকী তাৎপর্য ছিল। ‘raw acting’ বলতে যা বোঝায় সেটিই ছিল প্রধান কোনোকিছু আরোপিত না তাই ছবিটি সুনির্মিত হয়েছে। বিজিএম অসাধারণ।
অভিনেতা আহমেদ রুবেলের আকস্মিক প্রয়াণ ছবির মুক্তির আগে মর্মান্তিক পরিস্থিতির তৈরি করেছে। তাঁর অভিনয়শক্তি এ ছবিতেও পূর্বের মতো অসাধারণ এবং সেটি আফসোসও তৈরি করায় কারণ তাঁকে আমরা আর কোনো কাজে পাবো না। ছবিটি তাঁকেই উৎসর্গ করা হয়েছে।
রেটিং – ৮/১০