Select Page

ঢাকায় মুক্তির আগে খুলনায় ‘দেলুপি’, কেন?

ঢাকায় মুক্তির আগে খুলনায় ‘দেলুপি’, কেন?

খুলনার লিবার্টি সিনেপ্লেক্সে গতকাল মুক্তি পেয়েছে মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দেলুপি’। আগামী সপ্তাহে মুক্তি পাবে দেশজুড়ে। সাধারণত রাজধানী দিয়েই সিনেমার প্রদর্শনীর শুরু হয়। এখানে কেন উল্টো যাত্রা? সেই উত্তরও দিলেন নির্মাতা।

২০২৪ সালের আগস্টে ভদ্রা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। তখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে এগিয়ে আসেন এলাকার মানুষ। খবরটি দেখে দেলুটিতে ছুটে যান তাওকীর, সঙ্গে আরো পাঁচজন।

খুলনা শহর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার পথ, ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। দেলুটির কালীনগর কলেজে আশ্রয় নেন তারা; ইচ্ছা, দেলুটির ওপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ। কিন্তু তা পরবর্তী গড়ায় ফিকশনে।

তাওকীর জানান, দেলুটি থেকে সিনেমার নাম রাখা হয়েছে দেলুপি। সিনেমার গল্প, বেশির ভাগ চরিত্রই ইউনিয়নের মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছে।

সারা দেশে মুক্তির আগে সিনেমাটি দেলুটির মানুষকে দেখাতে চেয়েছেন তাওকীর। সেন্সর শেষ করে দেলুটিতে ফেরেন তাওকীর। গত বুধবার দেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হয়েছে সিনেমার প্রিমিয়ার শো। ‘দেলুপি’র শিল্পী ও ১৩ গ্রামের দর্শক সিনেমাটি দেখেছেন। এরপর সারাদেশে প্রদর্শনের প্রথম যাত্রাবিন্দু স্থির হয় খালিশপুরের লিবার্টি হল।

তাওকীর আগেই বলেছিলেন, ‘আমরা চেয়েছি, যে অঞ্চলের সিনেমা, সেইখানের মানুষ আগে দেখুক। আর খুলনায় শুধু সিনেমা হলেই নয়, আমরা দর্শকের সুবিধার্থে বেশ কিছু ইউনিয়ন ও গ্রামে সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করব।’

প্রিমিয়ারের দর্শক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘দর্শক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসে ছিল। দর্শক হাসছে, কাঁদছে আবার নিজেকে লুকাচ্ছেও। দর্শকদের এই সাড়া আমাকে সাহস দিয়েছে। সিনেমাটি যে কেউ হজম করতে পারবে।’

প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সবাই সিনেমাটিকে নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে দেখেছেন।

দেুলটির দর্শকরা দেখছেন ‘দেলুপি’

দেলুটি গ্রামের বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকার নামেই সিনেমা—এটা ভাবতেই গর্ব লাগে। গল্পটা এত বাস্তব, যেন আমাদের জীবনেরই কথা বলা হয়েছে।’

স্থানীয় ৫ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বদিয়ার রহমান বলেন, ‘ভাঙন ছিল আমাদের জীবনের অংশ। সেই কষ্টই এ সিনেমায় উঠে এসেছে। “দেলুপি” শুধু আমাদের গল্প নয়, অন্য উপকূলের অনেক মানুষের গল্পও বটে। আশা করি এই সিনেমা আমাদের দুর্দশার কথা আরও দূরে পৌঁছে দেবে।’

‘দেলুপি’ নির্মাণ প্রসঙ্গে তাওকীর বললেন, ‘তখনো আমাদের মাথায় সিনেমার গল্পটা ছিল না। ধীরে ধীরে দেলুটির মানুষের সঙ্গে মিশতে থাকি, সেখানে থাকা শুরু করি। খুব কাছ থেকে সেখানকার মানুষের জীবন দেখতে শুরু করি। এরই মধ্যে সিনেমার গল্প লিখতে শুরু করি। একই সঙ্গে সিনেমার চরিত্র ও লোকেশনও লক (চূড়ান্ত) করতে থাকি।’

সিনেমাটিতে দেলুটির মানুষই অভিনয় করেছেন। তাদের কীভাবে রাজি করালেন? তাওকীর বললেন, ‘সিনেমাতে আসলে তারাও চরিত্র হয়ে যেতে পারে, গল্প হয়ে যেতে পারে, এটা তো আসলে তাদের ধারণার বাইরে ছিল। তাদের সঙ্গে দিনের পর দিন কাটিয়েছি, ধীরে ধীরে বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি করেছি।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষভাগে দেলুটিতে শুটিং শুরু করেন, অক্টোবরের শেষভাগে শেষ। পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ করেছেন ঢাকায়।

সিনেমায় ভালোবাসা আছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, যাত্রাশিল্পীদের সংগ্রাম আছে; সেই সঙ্গে সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতাও আছে। তাওকীর বলছেন, ‘পুরো দুনিয়ায় রাজনৈতিক সিনেমা হয়। এমনকি আমাদের এফডিসিও কিন্তু নানান ধরনের রাজনৈতিক সিনেমা বানিয়েছে। সেটার সংখ্যা পুরো পৃথিবীর চেয়ে কম হলেও সেটার কিন্তু নজির আছে।’ তাঁর ভাষ্য, ‘সিনেমা সোসাইটিকে রিফ্লেক্ট (প্রতিফলন) করে। সেখানে প্রেম–ভালোবাসা যেমন থাকবে, তেমনি রাজনৈতিক অংশও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় সিনেমায় আসাটা খুব জরুরি।’

দর্শক সিনেমাটি কেন দেখবেন? জানতে চাইলে তাওকীর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা যেসব অস্থিরতার মধ্যে আছি আর যেসব কোয়েশ্চেন ফেস (প্রশ্ন মোকাবিলা) করছি, যেটার পুরোনো কনসিকোয়েন্সেস (পরিণতি) আছে এবং বর্তমান কনসিকোয়েন্সেস (পরিণতি) আছে, এই দুইটা জিনিসই ছবিটার মধ্যে খুব ভালোমতো আছে।’

সিনেমাটি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন নির্মাতা। এতে যেমন বর্তমানকে আনা হয়েছে, তেমনি অতীতকেও ধরা হয়েছে। সিনেমার গল্প নিয়ে তাওকীর বলেন, ‘এটা আমাদের সবার ইউনিটির (ঐক্য) গল্প, যেখানে সবাই মিলে ইউনিটিটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং ফাইনালি সমস্যাগুলো আমাদের সলভ করতে হবে।’

সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে দেলুটি ইউনিয়নের চিরঞ্জিৎ বিশ্বাস, অদিতি রায়, রুদ্র রায়, জাকির হোসেনসহ অনেকে অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ফুটপ্রিন্ট ফিল্ম প্রোডাকশন।

‘দেলুপি’ প্রযোজনা করেছে ফুটপ্রিন্ট ফিল্ম প্রোডাকশন। সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটল তরুণ পরিচালক তাওকীর ইসলামের। তাঁর কাজে সব সময় থাকে আঞ্চলিতার ছোঁয়া। এর আগে তিনি ২০২২ সালে রাজশাহীকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করেছিলেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য শাটিকাপ, যা সমালোচক ও দর্শক উভয়ের প্রশংসা পায়। ২০২৪ সালে তাঁর নির্মিত ‘সিনপাট’ও আলোচনায় আসে। প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদন অনুসারে


Leave a reply