ঢাকার প্রথম সিলভার জুবিলি হিট ছবির পরিচালক মুস্তাফিজ
ছয় দশকের বেশি সময় ঢাকাই চলচ্চিত্রের বয়স। বেশ লড়াই করে উপমহাদেশীয় অন্যান্য ছবির সঙ্গে স্থানীয়দের জায়গা করে নিতে হয়েছে। শুরুর দিকের অন্যতম বাণিজ্যসফল পরিচালক মুস্তাফিজ।
তিনি একাধারে পরিচালক, প্রযোজক, কাহিনী ও চিত্রনাট্যকার। এ দেশের ইতিহাসে প্রথম সিলভার জুবিলি হিট উপহার দেন তিনি। অর্থাৎ, টানা ২৫ সপ্তাহ বা প্রায় ছয় মাস প্রেক্ষাগৃহে চলেছে সেই ছবি। তাও বেশ সাফল্যের সঙ্গে। যে ছবির মধ্যে ঢাকা পায় রহমান–শবনমের মতো অবিস্মরণীয় এক জুটি।
মুস্তাফিজ নির্মিত বেশির ভাগ ছবিই ব্যবসাসফল। একসময় তার নাম শুনেই দর্শকেরা ছবি দেখার জন্য সিনেমা হলে ভিড় জমাতেন।
পুরো নাম মুস্তাফিজুর রহমান, ১৯২৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকার বংশালে জন্ম। বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ ছিলেন ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক এবং মা মোছাম্মত কানিজ ফাতেমা গৃহিণী। তার বড় ভাই প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম। মামা ই আর খানও ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক, খ্যাতিমান চলচ্চিত্রগ্রাহক প্রয়াত মাহফুজুর রহমান খান তার মামাতো ভাই। তার ছেলে ইশতিয়াকও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।
বড় ভাই এহতেশামের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলচ্চিত্র ব্যবসায় আগমন ঘটে মুস্তাফিজের।
শুরুতেএহতেশাম পরিচালিত ‘এদেশ তোমার আমার’ ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এ ছবিতে ভিলেন চরিত্রে ছিলেন রহমান, আর শবনম ছিলেন নাচের দৃশ্যের অভিনেত্রী।
মুস্তাফিজ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’ মুক্তিপায় ১৯৬১ সালে। এটিই ঢালিউডের প্রথম সিলভার জুবিলি হিট চলচ্চিত্র। এ ছবির ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা, রূপের যাদু এনেছি’ গানটি এখনো জনপ্রিয়।
বাংলার পাশাপাশি উর্দুতে ছবি নির্মাণ করে তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে পরিচিতি পান মুস্তাফিজ। এখনো পাকিস্তানের অনেক দর্শক তাকে স্মরণ করেন। মুস্তাফিজ পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্র— তালাশ, প্যায়সে, মালা, ডাক বাবু, ছোটে সাহাব, কুলি, আনাড়ি, পায়েল, বাবলু, মুন্না অউর বিজলী, একই অঙ্গে এতো রূপ, আলোছায়া, মায়ার বাঁধন, ছোট সাহেব, নূপুর, বিজলী ও সোনিয়া।
মুস্তাফিজ প্রযোজনাও করেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো রূপ কুমারী, পীচ ঢালা পথ ও বিজলী।
এই খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা ১৯৯২ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য ও ছবি ঋণ: আজাদ আবুল কাশেম