ঢাকায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অগ্রপথিক মীর্জা আবদুল কাদের
সম্প্রতি ঢাকার মাল্টিপ্লেক্স বিপ্লবে যুক্ত হওয়া লায়ন সিনেমাসের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। প্রেক্ষাগৃহটির সূচনা হয়েছিল মীর্জা আবদুল কাদের সরদারের হাত ধরে। যাকে ঢাকায় নাট্যচর্চা ও সিনেমা প্রদর্শনে অগ্রপথিক হিসেবে মূল্যায়ন করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঐতিহ্যবাহী লায়ন সিনেমা হলের এ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঢাকার মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, সমাজসেবক, একজন শিল্প-সংস্কৃতিবান্ধব ব্যক্তিত্ব। তিনিই উপমহাদেশের প্রথম বাঙ্গালী মুসলমান, যিনি চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবসায় অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে গেছেন। সর্বোপরি এ অঙ্গনে তার পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম।
মীর্জা আবদুল কাদের সরদার ১৮৭৯ সালের ১ নভেম্বর পুরান ঢাকার লালবাগ থানার ছোট কাটারায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালের ২৭ আগস্ট তিনি মারা যান।
তার বাবা মীর্জা হায়াৎ নবাববাড়িতে প্রদর্শিত নাটকসমূহে অভিনয় করতেন। মেধাবী, বুদ্ধিমান, সমাজসেবক ও প্রভাবশালী মীর্জা আবদুল কাদের মাত্র ২৫ বছর বয়সেই, ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার সলিমুল্যাহর কাছ থেকে ‘সরদার’ হিসেবে উপাধি পান। ১৯০৫ সালে তিনি ছিলেন পুরো ঢাকার, সব মহল্লার সেরা সরদার।
আবদুল কাদের ঢাকার ইসলামপুরের ‘ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটার’ ক্রয় করে ‘লায়ন থিয়েটার’ নাম দিয়ে নাটক মঞ্চায়ন শুরু করেন প্রথমে। পরে চলচ্চিত্রের প্রসার ঘটলে লায়ন থিয়েটারে চলচ্চিত্র দেখাতে শুরু করেন। আর এভাবেই নাট্যমঞ্চ থেকে ‘লায়ন সিনেমা’ হল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৭ সালে।
১৯৩১ সালে ‘লায়ন সিনেমা’ হলে স্থাপন করা হয় সবাকচিত্রের যন্ত্রপাতি। তিরিশের দশকে ‘লায়ন সিনেমা’ হলে যেসব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে সেগুলো হলো- বোম্বাই কি বিল্লি, আলী বাবা আওর চল্লিশ চোর, কিং সলোমন’স মাইনস, স্যামসন এ্যান্ড ডেলিলা, জুলিয়াস সিজার, লা পারওয়া, প্রাণ প্রিয়সী, প্রভৃতি।
পরবর্তীতে এই লায়ন সিনেমাহলে প্রদর্শিত হয়েছে হাজারো চলচ্চিত্র।
মীর্জা আবদুল কাদের সরদার একজন চলচ্চিত্র পরিবেশকও ছিলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘টাইগার্স ফিল্মস’।
মীর্জা আবদুল কাদের সরদার তৎকালীন সময়ে এদেশের নেপথ্য রাজনীতিতে রেখেছেন অনন্য অবদান। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও। জানা যায় তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট সব রাজনৈতিক নেতাদের মিলনকেন্দ্র ছিল মীর্জা আবদুল কাদের সরদারের বাসভবন ।
তাদের পুরো পরিবারই ছিল পুরান ঢাকার শিল্প, সাহিত্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঘরানার। আমাদের দেশের চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতিতে, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের রয়েছে অসামান্য অবদান।
আবদুল কাদেরের একমাত্র সন্তান মীর্জা আবদুল খালেক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক হিসেবে সুপরিচিত। তাার ভাই মীর্জা ফকির মোহাম্মদ, নাট্যচর্চা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সাথে জড়িত ছিলেন। মীর্জা আবদুল কাদের সরদারের চার ভাতিজা- নাজির আহমেদ (পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা’র, (পরবর্তীতে বিএফডিসি) প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ছিলেন), আবু নাসের আহমেদ (ছিলেন পূর্ব বাংলা চলচ্চিত্র সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা), হামিদুর রহমান (চিত্রশিল্পী, যিনি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন), সাঈদ আহমদ (বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও লেখক)।
লেখা ও তথ্য: আজাদ আবুল কাশেম