Select Page

‘তাকদীর’কে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা ‘কারাগার’

‘তাকদীর’কে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা ‘কারাগার’

‘প্রিজন ব্রেক’ বলেন আর হাল আমলের ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস (সিজন টু)’ – সকল প্রিজন ড্রামাতে বিভিন্ন ক্লাসের মানুষ আর ‘ল’এর মিক্সারে একটা রানিং প্লট থাকবেই। গল্প যেন সেখানে গতিময় থাকে তাই গল্পের সেকেন্ড লেয়ারে থাকে থ্রিল অথবা মিস্ট্রি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভায়োলেন্সও একটা জোরদার টুল হিসাবে নির্মাতারা ব্যবহার করেন।

সৈয়দ আহমেদ শাওকী এর কোন পথেই পুরোপুরি না হেঁটে একটা মিস্ট্রি ড্রামায় ক্যারেক্টারগুলোর ক্রাইসিসকে আলাদা মাত্রা দিয়ে গল্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বলাই যায়, ‘তাকদীর’কে ভুলিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল চিত্রনাট্য বিভাগে! আমার মনে হয়, সিরিজ ডিজাইনটা এমনভাবে করা, অনেকবছর পরেও দুই পার্ট একসাথে করে দেখলে দারুণ লাগবে। নেয়ামত উল্লাহ মাসুমসহ লেখায় যারাই কন্ট্রিবিউট করেছে সবাই বিশেষ ধন্যবাদ পাবে।

একটা ফিকশনাল কারাগার (যদিও শুট হয়েছে ঢাকার আগের কেন্দ্রীয় কারাগারে), যাতে কয়েদী সংখ্যা এক রাতে গণনা করে একজন বেশি পাওয়া যায়। এমনিতেই জেলার মোস্তাক সাহেব জেলে এক নারী ঢোকার স্ক্যান্ডালে উপরের চাপে আছেন, তার মধ্যে যুক্ত হয় ১৪৫ নাম্বার সেলের বোবা এক মিস্ট্রিম্যান। সে কে, কোথা থেকে এলো, তার আগমন ও উপস্থিতি জানতে মোস্তাক সাহায্য নেয় ডিবিতে থাকা বন্ধু আশফাকের। আবার আশফাক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহারে মিস্ট্রিম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে যুক্ত করে মাহাকে। এই জেলের ভেতর ও বাইরের চরিত্রগুলোকে কিভাবে মিস্ট্রিম্যান প্রভাবিত করছে সেটাই সিরিজের প্রথম পার্টের গল্প।

পজিটিভ দিক – খুব সম্ভব এই প্রথম চঞ্চল চৌধুরী তেমন একটা শব্দ উচ্চারণ না করেও পুরো শো’তে অভিনয়ের প্রদর্শনী দেখালেন ও মাতিয়ে রাখলেন পুরোটা সময়। এক কথায় ‘হ্যাটস অফ’ এমন একটা চরিত্রে ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য। ইন্তেখাব দিনার আর মো. ফারুক সোহানের বোঝাপড়া, ডায়লগ থ্রো এন্ড রিসিভ, ব্যক্তিগত জটিলতা পাশ কাটিয়ে পেশাগত এটায়ার  ও বন্ধুত্ব দারুণভাবে তুলে ধরেছেন। যার যার জায়গায় কিছু দৃশ্যে দুজন ফাটিয়ে দিয়েছেন। ভাল করেছেন ফারিণও, তবে চাওয়াটা আরো বেশি ছিল। আফজাল হোসেন অল্প স্ক্রিনপ্রেজেন্স পেলেও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সেরা অভিনয় করেছেন। এ কে আজাদ সেতুর ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চরিত্রটা খুব ভাল লেগেছে।

এছাড়া অনেক সাপোর্টিং ও অতিথি শিল্পীও ভাল করেছেন। সিরিজের অভিনয় সবচেয়ে শক্তিশালী পার্ট। এরপর অবশ্যই গল্পের ভিন্নতা, গভীরতা। ভাল লেগেছে বরকত হোসাইন পলাশের ক্যামেরা, অনীমের এডিট, আলোর ব্যবহার ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।

নেগেটিভ দিক– শুধু পার্ট ওয়ান ধরলেও পর্বগুলো যেভাবে শেষ হচ্ছিল, রহস্যমানবীর মত কিছু চরিত্র রেখে যাওয়া হচ্ছিল বা চঞ্চলের চরিত্রের একটা ধাপ দেখার যে আকাঙ্খা সেটা মনমত হয়নি। ফারিণের’ মাহা চরিত্রটি প্লেসমেন্ট অনুসারে ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। কয়েকটি পর্বে গল্পের ধারা থেকেও নজর চলে গেছে চরিত্রের ব্রিফ করতে। মাহা ও মিস্ট্রিম্যানের জ্ঞানভিত্তিক আলোচনার অনেকটাই ইলজিক্যাল ও মেনে নেয়া কষ্টসাধ্য।

পার্ট টু না দেখে এখনই অনেক কিছু জাস্টিফাই করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সিরিজটা বেশ ভাল জায়গায় আছে।

রেটিং – ৮/১০


About The Author

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

Leave a reply