Select Page

‘তাণ্ডব’ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ায় বাদ পড়লেন নিদ্রা নেহা?

‘তাণ্ডব’ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ায় বাদ পড়লেন নিদ্রা নেহা?

কয়েকদিন আগে ‘শাকিব খানের সঙ্গে একই ফ্রেমে কাজ করছি, এটা অনেক বড় ব্যাপার’ শিরোনাম সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয় প্রথম আলোয়। সেখানে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমায় অভিনয়ের কথা নিশ্চিত করেন ছোটপর্দা ও বিজ্ঞাপনের পরিচিত মুখ নিদ্রা নেহা। কিন্তু সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশের কয়েকদিনের মাথায় অভিনয় ছাড়াই ঘোষণা দেন তিনি। সেখানে নাম উল্লেখ না করে ‘অনৈতিকভাবে’ তাকে সিনেমা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ তোলেন। সেই ক্ষোভেই অভিনয় ছাড়ার এ ঘোষণা।

‘তাণ্ডব’ প্রযোজনা করছে এফভিএফ-আলফা আই এবং প্রথম আলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান চরকি। ৩ এপ্রিলের ওই সাক্ষাৎকারে নিদ্রা নেহা ‘তাণ্ডব’-এ যুক্ততা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুটিং শুরুর একেবারে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত হয়েছি। এই সিনেমা দিয়ে আমার দুটো স্বপ্ন একসঙ্গে পূরণ হয়েছে। শাকিব খানের সঙ্গে কাজের স্বপ্ন ছিল, তার মতো বড় মাপের তারকার সঙ্গে একই ফ্রেমে কাজ করছি; আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এ ছাড়া আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল অ্যাকশনধর্মী চরিত্রে অভিনয় করা, আগে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এটা নিয়ে কথা বলেছি। ‘তাণ্ডব’ দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।’

শুটিং কেমন চলছে? উত্তরে বলেন, ‌‘কয়েকদিন মাত্র শুটিং হয়েছে। এই প্রথম এত বড় আয়োজনের সিনেমায় কাজ করছি; খুবই টেনশনে ছিলাম। এখনো টেনশনে আছি, সব সময় মনে হয়, ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে পারব তো! এ ছাড়া আমার চরিত্রটি যেহেতু পুরোপুরি অ্যাকশনধর্মী অনেক প্রস্তুতিরও ব্যাপার আছে। এখন এসব নিয়েই কাজ করছি।’

এর এক সপ্তাহ পর (১০ এপ্রিল) সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নিদ্রা নেহা নিজের কথা জানান। যদিও অভিনয় ছেড়ে দেয়ার সেই খবর প্রকাশ করেনি প্রথম আলো।

ফেসবুকে নেহা লেখেন, ‘আমি সব সময় শিল্প, সংস্কৃতি, অভিনয়—এসবের সঙ্গেই জড়িত থাকতে চেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমার অভিনয়ের প্রতি যে ভালোবাসা ছিল তা প্রতিনিয়ত অন্যায় আর অবমূল্যায়নের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি আর এই নোংরা পরিবেশের অংশ হতে চাই না।’

পরিশ্রম করলেও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন না জানিয়ে নেহা লেখেন, ‘গত ৫ বছর ধরে নিজেকে একজন ভালো অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে পরিশ্রম করেছি। কিন্তু যেসব অন্যায় আমার সঙ্গে হয়েছে, তার কারণে এখন কোনো কাজেই নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারছি না। এই মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমার আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেধা আর পরিশ্রমের সঠিক মূল্য দেওয়া হয় না। যারা পেশাদার, যোগ্য, নিষ্ঠাবান এবং কাজের প্রতি আন্তরিক, তাদের ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। শুধু তাদের জনপ্রিয়তা বা ফলোয়ার কম বলে, বা তারা কোনো সিন্ডিকেটের অংশ নয় বলে। কখনো তারা নতুন বলে, কখনো প্রযোজকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকার কারণে, তারা চাপা পড়ে যায়। আমি সবসময় মন থেকে কাজ করতে চেয়েছি, সততা আর ভালোবাসা দিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু এসব জিনিস এখানে খুব একটা মূল্য পায় না।’

এদিকে কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে লেখা হয়, পরপর দুটি বড় ছবি হাতছাড়া হয়েছে নেহার। নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘জানুয়ারির ঘটনা। আমি মুম্বাইতে ছিলাম, বাবার চিকিৎসার জন্য। আগে ছোট পর্দায় অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, এখন সিনেমা করছেন, এই ঈদেও তাঁর ছবি আছে। তাঁর সঙ্গে একটা ছবি হওয়ার কথা। পরিচালকও আমাকে চাইছেন। সব কিছু চূড়ান্তই ছিল। দুই মাস ধরে প্রস্তুতিও নিলাম। হঠাৎ শুটিংয়ের আগে নিউজ, ওই ছবিতে নায়িকা অমুক! তখন মুম্বাই থেকে নির্মাতাকে ফোন করি। রেসপন্স পাইনি। পরে দেশে এসে পরিচালকের সহকারীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। দুই দিন সময় চাইল, বিষয়টা সমাধানের। এরপর ক্যানসেল করে দিল। ১০ দিন পর আবার কল করা হলো। আবার শিডিউল চাইলেন। পরিচালক নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন চরিত্রটির জন্য আমাকে নিতে। কিন্তু প্রযোজকের অনিচ্ছায় আমাকে নেওয়া হয়নি। কারণ কী? আমি জানি না। এই যে বারবার শিডিউল নষ্ট করা হয়, এতে আমাদের কত ক্ষতি হয়! আমাদের তো ঘর-সংসারও দেখতে হয়। টুকটাক বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক করতে হয়। ছবির শিডিউলের জন্য সেগুলো ছেড়ে দিতে হয়। এই অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ তো তাঁরা দেয় না।’

সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে (ধারণা করা হচ্ছে এটি ‘তাণ্ডব’) তরুণ অভিনেত্রী বলেন, ‘তারা আমাকে ডেকেছিল, কথা হলো, অডিশন দিলাম, তাদের পছন্দ হলো। আমার শিডিউল নিয়ে একটু জটিলতা ছিল, তবু ম্যানেজ করে নিলাম। বাবার চিকিৎসার জন্য ২৫ মার্চ দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। টিকিট পর্যন্ত ক্যানসেল করলাম। এরপর শুটিং করলাম এক দিন। সাধারণত শুটিংয়ের আগে শিল্পীদের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়, বিভিন্ন নির্দেশনা-শর্ত দেওয়া হয়। সেগুলো মেনে চলতে হয়। এ রকম কিছুই হলো না। কারণ ঈদের আগে তাড়াহুড়ার মধ্যে ওই এক দিনের শুটিং হয়েছিল। আমিও আর ব্যাপারটা নিয়ে কথা বাড়াইনি। এর মধ্যে এক রিপোর্টার আমাকে কল করেন, নতুন কাজের খবরাখবর জানতে চান। আমি ওই ছবির কথা বলি। যেহেতু আমাকে টিম থেকে বারণ করা হয়নি, তাই আমি নরমালি বিষয়টি জানিয়েছি। নিউজ হওয়ার পর আমার সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি! এটার অধিকার তো নেই তাদের। আমি একজন শিল্পী। আমার জায়গায় কোনো বড় তারকা থাকলে তারা এমনটা করতেন না। অনেক বোঝানোর পরেও তারা বোঝেনি। এটা নিয়ে নাকি তাদের অনেক সমস্যা হয়ে গেছে। ১১ এপ্রিল থেকে আমার দ্বিতীয় লটের শুটিং হওয়ার কথা। দুই দিন আগে ফোন করে বলা হলো, আমার চরিত্রটা তারা রাখছে না।’

নেহার অভিযোগের সঙ্গে রাফীর ‘তাণ্ডব’ ছবির প্রসঙ্গে মিলে যায়। যদিও অভিনেত্রী কোনো ছবির নামই উল্লেখ করতে চাননি। আক্ষেপ প্রকাশ করে নেহা বলেন, ‘বারবার এভাবে একজন শিল্পীর মন ভাঙতে পারে না তারা। এখন বিভিন্ন জায়গায় কথা হচ্ছে, অভিনয় যদি ভালো না হয়, অডিশনে না টিকলে বাদ তো দেবেই। কিন্তু আমি তো অডিশনে পাস করে শুটিংও করলাম। আমি কেন, যে শিল্পী একদম আজই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে, তাঁর সঙ্গেও তো এটা করা উচিত নয়।’

এসব ঘটনায় হতাশ হয়ে অভিনয় ছাড়ার কথাও ভাবছেন নেহা। তবে আপাতত হাতের কাজগুলো সম্পন্ন করতে চান। তার কারণে যেন কারো ক্ষতি না হয়, সেদিকটা নিশ্চিত করতে চান। তবে নতুন করে কোনো কাজে যুক্ত হবেন কি না, সেটা এখনো ভাবেননি।


Leave a reply