তানজিন তিশাকে সাংবাদিকদের বেঁধে দেয়া ‘২৪ ঘণ্টা’ শেষ হলো
তানজিন তিশা ‘গর্ভপাতের’ জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এক সাংবাদিককে ‘উড়িয়ে দেয়া’র হুমকি দেন। পরবর্তীতে আরো কিছু ঘটনার কারণে ‘ক্ষমা চাওয়া’র জন্য টিভি পর্দার জনপ্রিয় নায়িকাকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন বিনোদন সাংবাদিকদের একটি পক্ষ। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে আলটিমেটামের সময়।
সম্প্রতি ‘আত্মহত্যা চেষ্টা’ সংক্রান্ত ঘটনার জন্য পরপর খবরের শিরোনাম হন তিশা। তার সূত্র ধরেই নাকি সাংবাদিকের ওই মেসেজ। এরপর ফেসবুকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একাধিক বার্তা দেন। ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েও মুছে পেলেন।
১৬ নভেম্বর রাতে অসুস্থ হয়ে মধ্যরাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। তখন খবর বের হয়, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনি। যদিও এক দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। পরে ফেসবুক পোস্ট ও লাইভে এসে জানান, তিনি ফুড পয়জনিংয়ের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তানজিন তিশা সর্বশেষ ২০ নভেম্বর ডিবি অফিসে গিয়ে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তোলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তামিমের বিরুদ্ধে। এর আগে তিশা সাংবাদিকদের ‘উড়িয়ে’ দেওয়ার হুমকি দেন, আবার সোশ্যাল হ্যান্ডেলে এর জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেন। যদিও সেই ক্ষমা চাওয়ার পোস্ট পরে মুছেও ফেলেন তিনি।
এদিন গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিককের প্রশ্ন করার ধরন ও অডিও রেকর্ড ফাঁসের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন।
ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিশা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। এ জন্য ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমার মনে হয়, ডিবি অফিস একটা আস্থার জায়গা। আমরা শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিসহ সব প্ল্যাটফর্মের যারা বিপদে পড়ি, বিশেষ করে যারা সাইবার বুলিং বা হ্যারাসমেন্টের শিকার হই, তারা এখানে আসে, হারুন স্যারের হেল্প নেয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি যদি স্ট্যাটাস দিয়ে কোনো বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, তাহলেও আমাকে বুলিং করা হচ্ছে। এ জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে, হারুন স্যারের কাছে এলে, স্পেশালি ডিবি অফিসে এলে আমি তাদের সহযোগিতা পাব। তাদের সহযোগিতায় আপনাদের বিষয়টি কিছুটা স্পষ্ট করতে পারব।’
সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে তখন তিশা বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট একজন সাংবাদিককে এ কথা বলেছি, সবাইকে নয়। সেদিন মানসিক ও শারীরিকভাবে আমি সুস্থ ছিলাম না। ফলে কারও ফোন রিসিভ করতে পারিনি। কিন্তু তামিম নামের একজন সাংবাদিকের মেসেজ পেয়ে তাকে ফোন ব্যাক করি। মেসেজটা এমন ছিল যে একজন নারী হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক সেনসেটিভ। আমার মনে হয়েছে, কোনো নারীকেই সে এই প্রশ্নটা করতে পারে না, যেটা সে আমাকে করেছে। সেই টেক্সট আমি সবার সামনে প্রকাশ করতে পারব না। যদি কেউ দেখতে চান, আমি পারসোনালি দেখাব। এরপর আমি হাইপার হয়ে যাই। তখন তাকে বলি, এমন সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে যদি লেখেন, তাহলে আমি মামলা করব, উড়িয়ে দেব। এরপর সে অডিও রেকর্ডটি ফাঁস করে দেয়। সেখানে কিন্তু একবারও সে বলেনি আমাকে কী প্রশ্ন করা হয়েছে। সেই বিষয়ে অভিযোগ জানাতেই এখানে আসা।’
তিশা তার বক্তব্যে ‘সেনসেটিভ’ বিষয়টি উল্লেখ না করলেও সাংবাদিকদের বরাতে জানা যায়, মেসেজে প্রশ্ন তোলা হয়- “আপনি তো কারো ফোন ধরছেন না, অনেকে বলছে আপনি নাকি হাসপাতালে অ্যাবরসন করিয়েছেন, এই বিষয়টি কতটুকু সত্য?”
এদিকে ক্ষমা চেয়ে লেখা পোস্টটি ডিলিট করা প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার পর দেখলাম, সেটা নিয়েও অনেক বুলিং হচ্ছিল। আমার মনে হয়েছে, এই একটা স্ট্যাটাস পর্যাপ্ত নয়। এ কারণেই ডিলিট করা।’
তিশার যেসব কথা বলেছেন, তা অপেশাদার আচরণ বলে মনে করেছেন সাংবাদিকেরা। এমন আচরণের প্রতিবাদে বিনোদন সাংবাদিকেরা গতকাল ২১ নভেম্বর বেলা আড়াইটায় ঢাকার কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও রেডিওতে কর্মরত বিনোদন বিভাগের সংবাদকর্মীরা এতে অংশ নেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তানভীর তারেক বলেন, তানজিন তিশার এমন অপেশাদার আচরণ মোটেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি যা করেছেন, তার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে, অনুতপ্ত হতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, একজন সাংবাদিক কোনো তথ্য পেলে সেটি যাচাই-বাছাই করবেন এবং সেই তথ্যের সত্যতা জানতে চাইবেন সংশ্লিষ্ট শিল্পী-কুশলীদের কাছ থেকে। এটাই সাংবাদিকতার প্রথম সূত্র। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম তামিমও একই কাজ করেছেন। তিনি একটি তথ্য পেয়ে সেটি এসএমএস পাঠিয়ে তিশার কাছে জানতে চেয়েছেন। এরপর তিশা ফোন করে তামিমসহ সাংবাদিকদের একচেটিয়া হুমকি-ধমকি দিলেন। উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এমনকি পরে উল্টো তিশা ডিবি অফিসে গিয়ে তামিমের নামে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘তানজিন তিশা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা না চাইলে আমরা তার সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকব। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
অবশ্য আলটিমেটাম দিয়েই থামেননি সাংবাদিকরা। তিশার ব্যক্তিগত জীবন ও অতীতের নানা প্রসঙ্গ টেনে সংবাদপ্রকাশ তারা অব্যাহত রেখেছেন।
সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা শেষ হলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তানজিন তিশা। তবে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর অনলাইন সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ।
সংগঠনের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিমের বরাত দিয়ে বলা হয়, তিশা ইস্যুটি এখন দেশের টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। বিনোদন সাংবাদিকদের মতো আমরাও চাই বিষয়টি সমাধান হোক। দিনশেষে সাংবাদিক এবং শিল্পীরা একই পরিবার। আজ (বুধবার) রাতেই সবাই বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।