তাড়াহুড়ো করে ভুলভাল ছবি নয়
বছর দুয়েক ধরে শোনা যাচ্ছে কামার আহমাদ সাইমনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শঙ্খধ্বনি’র নাম। এবার জানা গেল নামটি বদলে গেছে। নতুন নাম ‘শিকলবাহা’, ইংরেজি নাম ‘সাইলেন্স অব দ্য সিসেল’ থেকে বদলে ‘আয়রন স্ট্রিম’ হচ্ছে।
সিনেমাটির শুটিং ফ্লোরে যেতে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে সাইমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৫ সালে এক বন্ধুর ফোন থেকে শুরু হয়েছিল গল্পটা, সেই থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছি ছবিটা মাথায় নিয়ে। ২০১১ সালে প্রথম স্ক্রিপ্ট ড্রাফট করি। তা ছাড়া শিকলবাহা ছবিটা চার দেশের কলাকুশলীর যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হবে। বাংলাদেশ ছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স ও ভারত থেকে আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সিনেমা-প্রফেশনাল কাজ করবেন। যেমন কিরোস্তামির বেশির ভাগ ছবির প্রযোজক-পরিবেশক যে এমকেটু, তার সাবেক একুইজিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন ডিরেক্টর আমার একজন অনেক পুরোনো শুভাকাঙ্ক্ষী। মাটির ময়নায় তিনিই ছিলেন এমকেটু থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত, যদিও তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় তারেক মাসুদের চলে যাওয়ার অনেক পরে। তিনি কাজ করছেন আমার ফরাসি সহযোগী হিসেবে। এসব গোছাতে একটু সময় তো লাগেই। তাড়াহুড়ো করে ভুলভাল ছবি বানানোর চেয়ে আমি একটু সময় নিয়েই বানাতে চাই।’
বিশ্বব্যাপী তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের (২০১৬) মর্যাদাপূর্ণ অনুদান পুরস্কার ‘ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফান্ড’ জিতেছিল কামারের ‘শিকলবাহা’র চিত্রনাট্য। জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানের জন্যও এ বছর এই চিত্রনাট্য নির্বাচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এই চিত্রনাট্যের জন্যই কান চলচ্চিত্র উৎসবের (২০১৪) লালগালিচায় উদীয়মান নির্মাতাদের আসর ‘লা ফ্যাব্রিক সিনেমা দু মুন্দে’ আমন্ত্রিত ১০ জন তরুণের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইমন।
ছবির নাম বদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আসলে অনেক দিন থেকেই নামটা নিয়ে ভাবছিলাম। কানে শঙ্খ চেপে ধরলে সাগরের যে গর্জন শোনা যায়, সেই রকম এক বন্ধুর দীর্ঘশ্বাস থেকে গল্পটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে লিখতে গল্পটা কেমন যেন নিজের হয়ে উঠল, সেই থেকেই একটা দ্বিধা ছিল মনে। শুরু করতে গিয়ে লক্ষ করলাম, চারপাশে সিনেমায় ‘শঙ্খ’ নামের ছড়াছড়ি— শঙ্খধ্বনি, শঙ্খচিল, শঙ্খনাদ! তাই কাজ শুরুর প্রথমেই নামটা বদলে নিলাম।”
‘শিকলবাহা’ নামটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘জ্য পল সার্ত্রের উপন্যাস আয়রন ইন দ্য সোল-এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন সরদার ফজলুল করিম শিকল অন্তরে। ‘শিকলবাহা’ নামের একটা নদীর খোঁজে অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া দুই বন্ধুর অনিশ্চিত যাত্রাই আমার ছবি। লিখতে গিয়ে টের পেলাম, আমাদের সবার মনের গহিনে বহমান যে নদী, তার ভেতরেও একটা শিকল পরে আছে, সাের্ত্র–এর সেই শিকল! নিজে ছাড়া আর কেউ যার শব্দ শুনতে পায় না। তাই নাম বদলে দিলাম শিকলবাহা।’
প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘শুনতে কি পাও’ দিয়ে আলোচনায় আসা সাইমন আরো জানান, ২০১৭ সালের প্রথমদিকে ‘শিকলবাহা’র চিত্রায়ন শুরু হবে।
প্রথম আলো অবলম্বনে।