Select Page

তুফান— সুপারকিলিং মিশন

তুফান— সুপারকিলিং মিশন

একটি গল্প দিয়ে শুরু করি, চায়ের দোকান। ‘ক’ নামে এক লোক বসে আছে। পাশে আরও কয়েকজন। একজন সবার সাথে কৌতুক করছে ও হাসাহাসি করছে। ‘ক’ নামের লোকটি তার প্রতি বিরক্ত। লোকটাকে সে হাসি থামাতে বলে। কিন্তু লোকটা থামে না। তখন ‘ক’ নামে লোকটি পিস্তল বের করে লোকটার মাথায় গুলি করে দেয়। স্পটডেড। তো এইরকম একটা জগতের চিন্তা করেন, যেখানে একটি লোক পিস্তল বা বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাউকে ভালো না লাগলে তাকেই গুলি করে মেরে ফেলছে। তাহলে কেমন লাগবে?

তুফান’-এর মূল চরিত্রটা আসলে এমনই। যদিও তার ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই করুণ। সেই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই আজকের তুফানে পদার্পণ।

এইরকম একটি চরিত্র গতবছর আমরা দেখেছি ‘অ্যানিমেল’ সিনেমায়। কোনো রকম আইন–কানুনের তোয়াক্কা না করেই রনবীর কাপুরকে দেখা গেছে একের পর এক খুন করে যাচ্ছে। আইনও যেন তাকে দেখে ভীত। তুফানেও আমরা প্রায় একই রকম নৃশংসতা দেখলাম। যদিও দুই সিনেমায় গল্প আলাদা। কিছু কিছু সিনে মিল থাকা সত্ত্বেও তুফান অ্যানিমেলের চেয়ে আলাদা। তবে তুফানের মূল আইডিয়া পরিচালক রায়হান রাফি কী শাহরুখ খানের ‘ডন’ থেকে নিয়েছেন?

শিরোনামে কেন ‘সুপারকিলিং মিশন’ বললাম? কারণ ছোট থেকেই তুফান কিলিংয়ের সাথে জড়িত। একের পর এক খুন করেছে সে। এক সময় খুন করাটা যেন তার নেশা হয়ে যায়। যদিও গল্পের প্রয়োজনেই খুনগুলো করতে হয়েছে। আর ফিকশনে তো কতকিছুই হয়। আমরা শুধু উপভোগ করি।

অ্যানিমেল যে পথ দেখিয়েছে, তুফান সেই পথেই হেঁটেছে। সাধারণ দর্শক কিন্তু হলভেঙে উদ্যাপন করেছে। শাকিব খানের প্রতিটি দৃশ্যেই শিস ও করতালি পড়েছে। একেকটা মানুষ খুন হয়েছে, আর হল করতালিতে ভরে গেছে। যেন মানুষ মারাতেই আনন্দ। তাহলে কি দর্শকদের অবদমিত পশু সত্ত্বা জেগে ওঠেছিল, মানুষ মরার দৃশ্যগুলো দেখে!

পাঠক বা দর্শক যখন একটি ফিকশন পড়ে/দেখে তখন নিজেকে প্রধান চরিত্রের সাথে মিলিয়ে নেয়। অনেক সময় মানসিকভাবে সেই ওই চরিত্রও হয়ে ওঠে। তুফানের ক্ষেত্রে নিশ্চয় ব্যতিক্রম হবে না। এই তুফান কি সিনেমাতেই থেমে থাকবে!

বাস্তবেও অনেক তুফানের কথা আমরা শুনেছি। যেমন—এরশাদ শিকদার। যদিও তুফানের সঙ্গে তার গল্পের কোনো যোগসাজেস নেই। কিন্তু শিকদারও তো এমনই নির্মম ছিল।

অনেক কথা বললাম, চরিত্রগুলো নিয়ে একটা বলা যাক—শাকিব খান। তিনি দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। লোকে যতই তাঁকে বস্তি বস্তি করুক না কেন, তার মতো অভিনয় বাংলাদেশের আর কোনো মেইনস্ট্রিম নায়ক বর্তমানে নেই। চঞ্চল চৌধুরী’র কথা আর কত বলব। তিনি সব সময় নিজেকেই ছাড়িয়ে যান বারবার। তাঁর উচ্চতা অনেক উপরে। সিনেমায় তাঁকে যতক্ষণ দেখেছি, অবাক হয়েছি এই লোক কি মানুষ নাকি এলিয়েন। সব চরিত্রের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে যায়। একেকটা গুলি ছুড়ছিলেন আর হাসছিলেন। মানুষগুলো মরে যাচ্ছে, তার কোনো ভ্রুক্ষেপই যেন নেই। আরেক তুফান যেন এই চঞ্চল চৌধুরী। বাকি সবাই যার যার জায়গায় ভালো করেছে।

মেকিং নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। দারুণ মেকিং। এক শটের সিনটাও দারুণ ছিল।

তবে কিছু কিছু জায়গা তো থাকেই যা আসলে পরিচালকের চোখে হয়তো ধরা পড়ে না। সেগুলো সমালোচকরাই ধরিয়ে দেন। যেমন— ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। অ্যাকশন দৃশ্যে দর্শন অ্যাকশনের শব্দই বেশি শুনতে চায়। কিন্তু মিউজিকই যদি বেশি শোনা যায়, তাহলে কিছুটা বিরক্ত তো আসেই। আর প্রথম৩০–৪০ মিনিট স্লো ছিল, যদিও সেজন্য বাকিটা দেখতে কেউ কার্পণ্য করেনি।

রায়হান রাফী ব্রো, ফাটিয়ে দিয়েছেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মন্তব্য করুন