Select Page

দর্শকের শিস-হাততালিতে প্রমাণ হয়েছে ‘পয়সা উসুল’

দর্শকের শিস-হাততালিতে প্রমাণ হয়েছে ‘পয়সা উসুল’

অফিসের ফুল টিম নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম সনির স্টার সিনেপ্লেক্সে। শুক্রবার সন্ধ্যার শো। ‘সুড়ঙ্গ’। হাউজফুল। অনেককে ব্ল্যাকে টিকিট কাটার কথাও শুনেছি, তবে নিজে চোখে দেখিনি। আমরা দুইদিন আগেই অনলাইনে টিকিট কেটেছিলাম। কাউন্টারে যে লম্বা ভিড় দেখলাম, শুনলাম সেটা রবিবারের।

সিনেমা শুরু হওয়ার প্রথম কিছুটা সময় বোর হয়েছি। সুন্দরী নারীকে দেখে ভালো লাগলো, প্রেম শুরু হওয়ার আগেই বিনা কোনো বাধায় বিয়েও হয়ে গেল মানে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’! তারপর তো স্বামী বিদেশ!

দ্য বিটার ট্রুথ ইজ, এই দুনিয়ায় সবাই বেটার অপশন খোঁজে! কেউ টাকার দিক দিয়ে, কেউ রূপের দিক দিয়ে, কেউ স্ট্যাটাসের দিক দিয়ে, কেউ পাওয়ারের দিক দিয়ে। যে বেটার, দুনিয়ার বান্দারা ওইদিকেই ছুটবে। এইখানে ভালোবাসা-বাসি একদিন একটা মিথ হয়ে উঠবে, আর যারা ভালোবাসবে, তারা কেবল মাসুদের মতো বলবে, ‘আমি তো তোরে শুধু ভালোবাসছিলাম। এত ভালোবাসছি যে নিজেরেই ভুইলা গেছি’। মাসুদের ময়নারা ভালোবাসবে টাকা… আরো কত কী! ভালোবাসাকে ভালোবাসার সামর্থ্য থাকে কয়জনের!

তবে এটাও একটা শেখার বিষয়, কাউকে উজাড় করে সব দিয়ে দিতে হয় না। নিজের চেয়ে বেশিও ভালোবাসতে হয় না। নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসা বোকামি! এখন যারা ভালোবাসে, তারা সবাই এমন বোকা কি না, সেটা অন্য আলাপ!

গুড টু সি ইউ অন বিগ স্ক্রিন আফরান নিশো, ইউ আর সুপার্ব। আমি বহু আগেই বলেছিলাম, আফরান নিশো কেন সিনেমায় আসে না! এখন নিয়মিত আসবেন বলে আশা করি।

রায়হান রাফীর মেকিং নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না, যেহেতু তার আগের কোনো সিনেমা সম্ভবত আমি দেখেনি, ওটিটির কাজ বোধহয় দেখেছি আর পরাণের কাহিনী শুনেছি।

তবে সামহাউ কি ভদ্রলোকের কোনো কারণে নারীদের সম্পর্কে তিক্ততা আছে? সেটা থাকতেই পারে এবং কেউ সেটা ক্যাশ করে সাহিত্য, গল্প-সিনেমা যা কিছু মন চায় করতেই পারে। সেসব যদি ভালো হয়, তবে তা নিয়ে কেউ এতটা মাথা ঘামায় না। যেমন তার ময়না চরিত্র নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না। সমাজে এমন অহরহ চরিত্র আমাদের আশপাশেই ঘুরছে।

আমার সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়। প্রতিটা সিকোয়েন্সই প্রেডিক্টেবল। আগে থেকে প্রেডিক্ট করে ফেলা জিনিসে আমি মজা পাই না।

তমা মির্জার কিছু কাজ দেখেছি। উনার কাজ বেটার হচ্ছে। ময়না চরিত্রে তার অভিনয় ভালো ছিল। ন্যাচারালও। কিন্তু যার কথা না বললেই না! দ্য গ্রেট জহির! স্বামী বিদেশ থাকলে যেসব দেবররা ভাবীকে একটু বেশিই খাতির-যত্ন করেন! মোস্তাফা মনোয়ার আমি আপনার সব সময়ই ফ্যান! ‘না চাইলেও পাও দুইটা তোমার দিকেই হাঁটে, না বাইলেও নাও ছুইটা ভিড়ে তোমার ঘাটে। সব হইলো উল্টাপাল্টা, আটকা মোরে তোরা, দিল আমার লাগামছাড়া পাগলা ঘোড়া’ লাইনগুলো শুনছিলাম আর হাসছিলাম! আপনার অভিনয় নিয়ে নতুন কিছু বলার আছে কি? আপনি আপনার সব চরিত্রেই অনবদ্য। এখানেও ব্যতিক্রম নন! তবে আপনার প্রতি দর্শক খুব চ্যাতা!

আপনাকে যখন মারছিল, দর্শকের শিস্ আর হাত তালিতে প্রমাণ হয়েছে, এই সিনেমা দেখে তাদের পয়সা উসুল। এটা যেকোনো সিনেমার জন্য বিরাট এক প্রাপ্তি। চরিত্রের জন্য তো বটেই! হলে বসা প্রতিটা পুরুষকেই মনে হলো একেকটা মাসুদ হয়ে উঠলো। অথচ সুযোগ পেলে কি তারা জহির হয়েও উঠে না?

সবশেষে বলতে হয়, মিউজিকের কথা! আরাফাত মহসিন নিধি, ফাটাফাটি! মন খারাপ নিয়ে সিনেমা হলে ঢুকেছিলাম, মনটা বেশ কয়েকবারই নেচে উঠলো!
সিনেমা শেষ হওয়ার পর নিচে নামতে নামতে আমার নিজের লেখা একটা কবিতার শেষের কয়েক লাইন মনে পড়লো- ভালোবেসে ক্ষতি হয় তবু, যে বেশি বাসে, সে-ই ভাসে অভিশাপে! বাকি পৃথিবী ঠোঁট কামড়ায়, হাসে!’

অভিনন্দন, টিম সুড়ঙ্গ!


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মন্তব্য করুন